অশ্রু সিক্ত চোখে খসরুকে বিদায় জানালেন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াবাসী

মতিন খসরু এমপির দাফন

অফিস রিপোর্টার।।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী কুমিল্লা -৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু’র ৩টি জানাজা কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বাদ যোহর তাঁর নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা সদরের আনন্দ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার ৩য় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান, সাধারণ সম্পাদক বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আখলাক হায়দার,ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহের, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ,অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ, মতিন খসরুর ছোট ভাই অ্যাডভোকেট আবদুল মুমিন ফেরদৌস, ছেলে আবদুল মুমিন ওয়াছিফ, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুছ ছালাম বেগসহ আরো অনেকে।


৪র্থ জানাজার নামাজ বিকাল ৪ টায় ব্রাহ্মণপাড়া ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আছর তার গ্রামের বাড়ি মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

জানাজা শেষে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। জানাযার আগে বিভিন্ন দল মতের মানুষ প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন,তিনি বিনয়ী মানুষ ছিলেন। প্রতিহিংসার রাজনীতি তিনি করতেন না। স্বজনরা তার জন্য দোয়া চাইতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এই সময় উপস্থিত মুসল্লিদের চোখ ভিজে ওঠে। করোনা ও লকডাউনের মাঝেও প্রত্যেকটি জানাযায় মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।

আবদুল মতিন খসরু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বুধবার ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
মতিন খসরুর বর্ণাঢ্য জীবন

আব্দুল মতিন খসরু ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ সালে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী মোঃ আবদুল মালেক এবং মাতা জাহানারা বেগম। তিনি চার ভাই তিন বোনের মধ্যে সকলের বড় ছিলেন। তার এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়েটি ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কর্মরত আছেন, ছেলেটি আর্কিটেট পেশায় নিয়োজিত।

আবদুল মতিন খসরু মাধবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক করেন। কুমিল্লা ল‘ কলেজ থেকে এল এল বি সম্পন্ন করেন। ১৯৭৮ সালে কুমিল্লা জজকোর্টে যোগদান করেন। ১৯৮২ সালের ১৩ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১০ সালের ২৪ আগস্ট তিনি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। পরে ১৯৯১ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মোট ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আইনমন্ত্রী থাকাকালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেন, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ খোলে। শুধু রাজনীতে নয়, আইন এবং সামাজিক অঙ্গনেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন।