আমার সাংবাদিকতায় আসা

।। সাইফুল ইসলাম সুমন ।।
ক্লাস সেভেনে পড়ি। তখন থেকে পত্রিকা পড়তাম। বিকেলে যখন আমার বন্ধুরা খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকত তখন আমি বসে বসে পত্রিকা পড়তাম। কেন পড়তাম তা জানিনা, তবে পত্রিকা পড়তে ভাল লাগতো। আমাদের মাদ্রাসায় প্রতিদিন একটি করে পত্রিকা রাখতো। মাদ্রাসা ছুটি হলে অফিস থেকে হুজুরের কাছ থেকে পত্রিকা এনে মসজিদের সামনে পুকুর পাড়ে ঘাটলায় বসে বসে পত্রিকা পড়তাম। খেলাধুলা বাদ দিয়ে পত্রিকা পড়তাম বলে বন্ধুরা আমার প্রতি বিরক্ত হতো। আমাদের বাড়ি থেকে কচুয়া বাজার ৬/৭ কিলোমিটার দূরে। আমি যখনই কচুয়া যেতাম তখনই কোন না কোন পত্রিকা কিনে নিয়ে নিতাম। এলাকার কেউ কচুয়া গেলে আমি ৫ টাকা দিয়ে দিতাম যেন আমার জন্য একটি পত্রিকা নিয়ে আসে।
আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন এফএম রেডিও শুনতাম। বিশেষ রাত সাড়ে ১০ টায় বিবিসি বাংলার খবর মিস করতাম না। রেডিও টুডে ও এবিসি রেডিও’র নিউজগুলো শুনতাম নিয়মিত। তখন আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার পর নিয়মিত টিভিতে সকাল ৮টার খবর দেখতাম। পত্রিকায় কিভাবে খবর লিখে, আর টিভিতে কিভাবে খবর পড়ে তা মনযোগ দিয়ে দেখতাম।
ক্লাস নাইনে যখন পড়ি তখন এলাকার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটের দুরাবস্থা নিয়ে নিজের খাতায় লিখতাম। যখন যে সমস্যা সামনে পড়ত সেটা নিয়েই খাতায় লিখতাম। আর হাঁটতে বসতে টিভিতে শুনা খবরগুলো নিজে নিজে বলতাম। অনেকে আমার এসব দেখে হাসাহাসি করত।
যখন একাদশ শ্রেণীতে পড়ি তখন অ্যাড. এমরান হোসাইন ভাই আমাকে একটি ফেসবুক আইডি খুলে দেন। একটা কথা বলে রাখি যে, একাদশ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আমার সব বন্ধু মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো, একমাত্র আমি ব্যতীত। একদিন বাবাকে বললাম- মোবাইল ফোন কিনে দিতে। বাবা বলল, তোর মোবাইল ফোনের কাজ কি? মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর, কাজে আসবে। পরে অবশ্য আমি টাকা জোগাড় করে অ্যাড. এমরান ভাইয়ের মাধ্যমে একটি এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন নিই। সেই মোবাইল ফোনে ফেসবুক আইডি খুলেছি। আর আমার ফেসবুক আইডিতে আমি আমাদের এলাকার সমস্যাগুলো উপস্থাপন করতাম। করলে কি হবে, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি কেউ কোন ব্যবস্থা নিত না। আর আমার আইডিতে বিভিন্ন সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়াদি উপস্থাপন করলে ব্যবস্থা নিতেই হবে এটা কোন কথা নয়। তবুও আমি আমার লিখা চালিয়ে গেলাম।
আমার ফেসবুকের বিভিন্ন লেখা চোখে পড়েছে চাঁদপুরের এক সিনিয়র সাংবাদিকের। আমাকে কল দিয়ে বললেন- তুমি আমার মেইলে নিউজ পাঠাও। আমি বললাম- আমি তো নিয়মানুযায়ী নিউজ লিখতে জানিনা। তখন তিনি আমাকে বললেন, তুমি নিউজ পাঠাও, আমি তোমাকে হেল্প করব। আমার নিউজের প্রতি আগ্রহ দেখে তিনি আমাকে চাঁদপুরে একটি কর্মশালায় পাঠান। কিভাবে নিউজ লিখতে হয় তা হাতে কলমে শিখালেন। কাজ শুরু করলাম দৈনিক চাঁদপুর দিগন্তে। এরপর পরিচয় হয় কচুয়া প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জিসান আহমেদ নান্নু ভাইয়ের সাথে। তিনি আমাকে শিখালেন কিভাবে নিউজ সংগ্রহ করতে হয়। নিজের বাইকে করে কচুয়ার অলিগলি সব ঘুরালেন। পরিচয় করিয়ে দেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে। লিখার দিক থেকে দাপ্তরিক ভাষা আর নিউজের ভাষার মধ্যে কিছু ব্যবধান রয়েছে। সেগুলো তিনি হাতে কলমে শিখিয়েছেন।
প্রায় ৫ বছরের মত জিসান ভাইয়ের সাথে থেকে কচুয়ায় কাজ করেছি। যতটুকু পেরেছি মানুষের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। যে কাজ করলে একজন মানুষ বিপদে পড়বে, হয়রানির শিকার হবে সে কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছি। সাংবাদিকতায় আসার আমার একটাই উদ্দেশ্য ছিল, সেটা হল- সর্ব শ্রেণীর মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা। কারণ অন্য পেশায় থেকে খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যোগাযোগ করা বা রাখা সম্ভবপর হয় না। এরপর চলে আসি কুমিল্লায়। বন্ধু সাংবাদিক সুফিয়ান রাসেলের মাধ্যমে পরিচয় হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনের কুমিল্লা প্রতিনিধি মহিউদ্দিন মোল্লা ভাইয়ের সাথে। তিনি শিখালেন বাচন ভঙ্গি, শব্দের গঠন ও শব্দের বানান। সাথে রেখে শিখান নৈতিকতা। দেশ ও সমাজ স্বীকৃতি দেয় না এমন কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
সাংবাদিকতা আমাকে অনেক কিছু উপহার দিয়েছে, যা উপস্থাপন করার মত নয়। পরিচয় করিয়ে দিয়েছে গুণী ও মহৎ মানুষের সাথে। সাংবাদিকতার মাধ্যমে সেবা করে মানুষের মাঝে থাকতে চাই অনন্তকাল।

লেখক:অফিস রিপোর্টার, সাপ্তাহিক আমোদ।