আলস্য: নরকের রাজপথ—- ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ

১. ভূমিকা: 
মানুষের এক ধরনের মনোদৈহিক রোগ হলো আলস্য। চেতনায় সক্রিয়তার অভাবহেতু দীর্ঘসূত্রিতার পথে চলমান এক তৎপরতার নাম আলস্য। কালকে কাজটি করা শুরু করব, আগামী কাল থেকে পড়বো এ চিন্তা করে আজ না করে বা না পড়ে আগামী দিনের জন্য কোন বিশেষ আবশ্যকীয় কাজ রেখে দেওয়া। কালকে এ নির্দিষ্ট জরুরী কাজটি না করে আবার কালকে (কালকের পরের দিন) করব বলে কাজটি ফেলে রাখা। এভাবে পরে, কালকে, দেখি কি করা যায়, আসব একদিন এ জাতীয় কথা বলে জরুরী অতি প্রয়োজনীয় বিষয় বা কাজকে পাশ কেটে চলাই হলো আলস্য। পৃথিবীর আলোকিত ও সমাদৃত লোকজন নিজেদের সফলতার জন্যে, মানব সভ্যতাকে ঢেলে সাজানোর জন্যে প্রচ- রকমের পরিশ্রমী ছিলেন। মানব সভ্যতার গগণচুম্বি উৎকর্ষ ও বিজ্ঞানের ঈর্ষণীয় সাফল্যের পেছনে কিছু মানুষের তীব্র পরিশ্রমের ইতিহাস রয়েছে; যারা আলস্যকে চিনতেন না। পরিচিত ছিলনা তাদের কাছে আলস্য ও দীর্ঘসূত্রিতা। সময়ের কাজ সময়েই করতেন তারা। রাসকিনের একটা বিখ্যাত বক্তব্য হলোÑ ‘‘জীবনের প্রতিটি ক্ষণ শতকর্ম সম্ভাবনায় স্পন্দমান, এর একটি মুহুর্ত গত হয়ে গেলে সেই ক্ষণের নিরোপিত কর্ম আর কোন দিন শেষ হবে না।’’ এ জন্যই বলা হয় ‘‘সময়ের এক ফোঁড়; অসময়ের দশ ফোঁড়।” সময়ের কাজ সময়েই করতে হয়। সময় ফেরিয়ে গেলে জীবনের অনেক কিছু আছে আর কোন ভাবেই পরে করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এই জন্য আলস্যরোগীদের কে চরম মূল্য দিতে হয়। সামগ্রিক উন্নয়নে আলস্য একটি প্রতিবন্ধকতা। পরাজিত হওয়ার এ চোরাবলিতে যে পড়ছে বা পড়বে তার ধ্বংস অনিবার্য। এটি যেন নরকের একটি রাজপথ।

 

বিজ্ঞাপন

২. আলস্য ও পরিশ্রম

আমাদের কোন কিছুর অভাব নেই। আছে শুধু পরিশ্রমের অভাব। এখনো আমাদের জনপ্রিয় গান হচ্ছে  কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই। কফি হাউজের আড্ডা মানে গীবত বা অলস সময় কাটাতে পারলাম না এই জন্য দুঃখ। আসলে একটা জাতির উত্থান হয় কর্মের মাধ্য দিয়ে; পতন হয় আলস্যের মধ্য দিয়ে। সময় আর কাজের যোগফলই জীবন। আলস্য ঘুণ পোকার মতো আমাদের মহামূল্যবান সময়কে অপচয় করে এবং জীবনের সকল সম্ভাবনাকে বিনাশ করে। আলস্য আমাদের জীবনকে বঞ্চিত করে। এই আলস্য হচ্ছে শয়তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

বিজ্ঞাপন

সময়ানুবর্তী হয়ে সুনির্দিষ্ট ও কল্যাণকর ফলপ্রসূ কাজ না করার নামই আলস্য। অর্থাৎ যার যা করণীয় কাজ তা বাদ দিয়ে অনর্থক চিন্তা বা কাজে সময় ব্যয় করাই আলস্য। আলস্যের আধুনিক সংস্করণ আড্ডাকে আমরা মনে করি সৃজনশীলতা। টিভি, সিনেমা, ইন্টারনেট, চ্যাটিং, এসএমএসকে মনে করি স্মার্টনেস। আমাদের সহজাত একটি প্রবণতা হলো কাজ না করে  বক বক করা। আসলে যার কথার চেয়ে কাজ বেশি সাফল্য তার কাছেই ধরা দেয়। বাঙালিদের মতো এতো কথা পৃথিবীর কোন দেশে বলে কি না সন্দেহ। সব কিছুর জন্য অলসরা সময় পায়, শুধূ সময় পায় না প্রয়োজনীয় কাজ করার। আলস্য ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই দেয় না। আলস্য হলো নরকে যাওয়ার প্রধান রাজপথ।

আপনি ডায়েবেটিক রোগী, হাঁটতে-ব্যায়াম করতে যদি আপনি আলসেমি করেন, আপনার রক্তে সুগারের পরিমাণ দ্রুত বাড়বে। আপনি ছাত্র পড়াশোনায় আলসেমি করলে খারাপ রেজাল্ট করবেন, অফিসের কাজে আলসেমি করলে নিদেনপক্ষে প্রমোশন আটকে যাবে, চাকুরিও চলে যেতে পারে, আপনি ব্যবসায়ী আলসেমি করলে বাজারে টিকে থাকতে পারবেন না। আলকুরআনে সূরায়ে বালাদে বলা হয়েছে ‘‘আমি মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রম নির্ভর করে সৃষ্টি করেছি।’’ বাইবেলে বলা হয়েছে  ‘‘আর একটু ঘুম, আর একটু তন্দ্রা, বিছানায় আর একটু গড়াগড়ি-দারিদ্র ও অভাব দস্যুর মতো দেবে হানা তোমার অন্দরে।’’ ধম্মপদে বলা হয়েছেÑ মুর্খরা আলস্যে নিপতিত হয়। আর প্রাজ্ঞরা সচেতন প্রয়াসে সৎকর্মে সদা তৎপর থাকে।’’ বেদে বলা হয়েছেÑ অলস মস্তিষ্ক কুচিন্তার সহজ শিকার। আসলে দয়াময় আল্লাহ মানুষকে সফল হওয়ার জন্যে, বিকশিত হওয়ার জন্যে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এই বিকশিত হওয়ার পথটা কী? সূরা বালাদের বক্তব্য অনুযায়ী মানুষের ভিত্তিটাই হচ্ছে কষ্ট ও পরিশ্রম। যখনই আপনি শ্রমবিমুখ হচ্ছেন, সাফল্য তখনই বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। পৃথিবীতে যে যত বেশী পরিশ্রমী; সে ততবেশী সমাদৃত। যে যতবেশী প্রতিকূলতার দেয়াল ভেঙ্গেছে, সে ততবেশী সংগ্রামী হতে পেরেছে। পরিশ্রমী লোকজনই মানুষের আস্থা ও নির্ভরশীলতার স্থান দখল করে নেয়। আপনি যেখানে থাকুন, পরিশ্রম করুন, কাজে মনযোগী হয়ে সিরিয়াস থাকুন, নিশ্চিত আপনি অন্যের ভরসাস্থল ও আস্থাবান হয়ে যাবেন। নিজের সফলতার উচ্চতা বেড়ে যাবে। যশ-খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। সাফল্য আপনার পদচুম্বন করবে।

৩. আলস্যের কারণ: জীবন সম্পর্কে ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি

গান আছে না, ‘দুনিয়াটা মস্ত বড়; খাও দাও ফুর্তি কর।’ আমরা অনেকেই মনে করি, পৃথিবীতে মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে কত আরাম আয়েশ করা যায়। আমরা কখন আলসেমি করছি বেশিরভাগ সময়ই বুঝতে পারি, বুঝেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলস্যটা আমরা উপভোগ করি। অনেক সময় নিজেদের দুঃখী ও অবহেলিত মনে করি। দুঃখের কথা ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে ঝরছে অঝোর ধারা। অথচ উঠে কাজ করা প্রয়োজন। কিন্তু না, দুঃখের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরো তীব্রভাবে সিরিয়াস হয়ে যেখানে কাজে সক্রিয় হওয়ার দরকার ছিল, সেখানে আপনি ভাবছেন, আল্লাহ আমাকে এতো দুঃখ দিয়েছেন! এই দুঃখ করতে করতে সময় পার করে দিচ্ছেন। এটাও আলস্যের একটা রূপ। আমাদের অধিকাংশ মানুষের জীবনে কোন লক্ষ নেই, মহৎ কিছু করার কোন অনুপ্রেরণা নাই, কোন উদ্যম নাই, পরিবর্তনের কোন স্পৃহা নেই। ফলে অলসতা আমাদের নিত্য সঙ্গি। আর এই আলস্য ও দীর্ঘসূত্রিতার পরিণতি হলো অসুস্থতা, রোগ-ব্যাধি, হতাশা ও ব্যর্থতা।

বিজ্ঞাপন

আলস্যের মূল কারণ লক্ষ্যহীনতা। কাজটি কেন করতে হবে; এটা যদি পরিষ্কার না থাকে তাহলে আপনি পরিশ্রম করতে আগ্রহবোধ করবেন না। আমাদের ব্রেনকে কাজে লাগাতে হলে সামনে একটি লক্ষ দেওয়া প্রয়োজন। লক্ষ্য না থাকলে আপনার সময় আপনি অহেতুক টিভি সিরিয়াল দেখে, শুয়ে-বসে, আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দেবেন। অথবা টিকটক করে, ভিডিও কাটিং করে নিজের চ্যানেল মনিটাইজেশনের চিন্তা করে ভিউ বাড়ানোর অস্থির দৌড়ে ছুটতে থাকবেন। নিজেকে স্টার না বানিয়ে অন্যের সুরে বেসুর তাল মিলাতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলবেন। কিন্তু আপনার যদি একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে যে, আপনি এই হতে চান, এইটা অর্জন করতে চান, তাহলে দেখবেন আপনি সব সময় কাজের একটা ফিকিরে থাকবেন। আপনার যদি লক্ষ্য থাকে আপনি আপনার পছন্দের একটি বিষয়ের উপর পান্ডিত্য অর্জন করবেন, কোন বিশেষ বিষয়ে একটি গবেষনা আর্টিক্যাল লেখবেন এবং আপনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সাথে সাথেই। দেখবেন যে এই কাজটি করতে হবে এই তাড়নাই আপনাকে কোন ফাঁকে সময় বের করে দিচ্ছে। যখন আপনার এই রকম সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকবে, দেখবেন যে, আপনি কাজটি শেষ করবেন এবং আনন্দের সাথে করবেন। একে বলা যায় শ্রমানন্দে কাজ করা।

৪. আলস্যে পতন, পরিশ্রমে উত্থান
ইতিহাস বলে মুঘল সম্রাটদের বিলাসিতা, আলস্য এবং অপব্যয়ের কারণেই আমাদের দু’শ বছর ইংরেজদের গোলামী করতে হয়েছে। এতো বড় একটা সমাজের পতন ঘটলো একটা ব্যবসা কোম্পনির হাতে। কারণ তারা রাজ্য বাড়ানো বা রক্ষা করার জন্যে প্রয়োজনীয় পরিশ্রম করেন নি। অপর পক্ষে জাপানের দিকে তাকান, আজকে তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় পরাশক্তি। জাপানিরা কাজ করতে পারলেই খুশি। তাদের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করা হয়েছিল একবার, তা নিয়ে জনগন রাজপথে প্রতিবাদ করেছে। বলেছে যে, তাহলে আমরা অতিরিক্ত একদিনে কী করবো তা বলে দাও। আজকের জাপান শুধু নয়, আসলে কাজপ্রিয় প্রতিটি জাতিই যুগে যুগে পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়েছে। দার্শনিক কনফুসিয়াস সুন্দর করে বলেছেন, Success depends upon previous preparation, and without such preparation there is sure to be failure. অলস মানুষ এই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিটুকু নিতে পারে না যে কারণে তারা সফল হতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

৫. অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা
গত ২১ আগস্ট ২০১৩ দি ডেইলি স্টার এ একটি রিপোর্ট এসেছে Yaba Menace: ‘Victims of nothing to do’ Syndrome । এখানে বলা হয়েছে যে, ইয়াবা আসক্ত তারা অধিকাংশই ধনী পরিবারের ছাত্র। তারা নাকি বিনোদনের জন্য এটি গ্রহণ করে। তারা বলছে তারা সময় কাটানোর জন্যে ক্লান্তিহীন আর কোন বিনোদন খুজে পায় না। কাজ না থাকা বা কাজের পরও অলস সময় থেকে যাওয়ার ফল হচ্ছে এটা। নেশা মানুষকে আর কোন মানুষের পর্যায়ে রাখে না তা আমরা দেখেছি খুব মর্মান্তিক একটি ঘটনা থেকে যে, মাদকাসক্ত কন্যা মা-বাবাকে হত্যা করেছে। শয়তান মানুষকে সবসময় এভাবেই ধ্বংস করে। আসলে আমাদের এই নেতিবাচক বিষয়গুলোই কিন্তু আমাদের শেষ করে দেয়। এর পেছনে অলস সময় সবচেয়ে বড় কারণ। আমাদের দেশের মহিলারা বিশে^র সবচেয়ে বেশী টিভি দেখে সপ্তাহে ৪৫ ঘন্টা, গড়ে ছয় ঘন্টার বেশি। কী দেখে? বেশির ভাগই সিরিয়াল হিন্দি বা বাংলা সোপ অপেরা। এসব সিরিয়ালের বেশিরভাগ জুড়ে প্রেম, পরকীয়া, ভায়োলেন্স, কুটচাল, হিংসা এবং যতরকম নেতিবাচক আবেগ আছে তার সবকিছু আকর্ষনীয় করে উপস্থাপন। ফলাফল হলো আমাদের অসুস্থতা, সংসারে অশান্তি, সন্দেহ প্রবণতা বৃদ্ধি, হিংসাত্মক কর্মকান্ড বৃদ্ধি ও মনোবৈকল্য ইত্যাদি। আমাদের এতো অলস সময় পাশের বাড়ির, পাশের ফ্ল্যাটের মানুষের সাথে যোগাযোগেও আমরা অলস। অনেক সময় আমরা ভাবিআবার হেঁটে যেতে হবে, আবার তারা বাড়ি আসবে, তাকে আবার ভদ্রতা করে চা খাওয়াতে হবে, কী দরকার। বরং অকাজে সময়টা আমরা ব্যয় করি; টিভি দেখি। একবার এক অবসরপ্রাপ্ত মহিলা কর্মকর্তা বলেছিলেন যে. ‘‘টিভি যদি না থাকতো অবসর গ্রহণের পর আমি মারাই যেতাম।’’ বলাই বাহুল্য তিনি সেই সিরিয়ালই দেখেন। ফলাফল, তার ডায়াবেটিস, হ্খদরোগ, আইবিএস সব এক সঙ্গে। মারা যাননি বটে তবে বেঁচে মরে আছেন।

 

ছাত্র-ছাত্রীদের দেখবেন তাদের একদম সময় নেই, খুব পড়ার চাপ। স্কুল, কলেজ, কোচিং, মক টেস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তারা ফেইসবুকে সারাক্ষণ স্ট্যাটাস দিচ্ছে, তারাই সারাক্ষণ ভার্চুয়াল জগতে কানেক্টেড, বন্ধু ছাড়া তাদের লাইফ ইমপসিবল। সুতরাং সারা রাত তারা কাছেই আছে। পাশে থাকছে মুঠোফোন কোম্পানিদের আহবানে সাড়া দিয়ে। যে কারণে আজকালকার তরুণদের অপরাধ প্রবণতা অনেক বেশি অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে। নিজের ছরকায় তেল না দিয়ে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীগুলোর ফান্ডে টাকা ঢালছে নীরবে নিভৃতে।

বিজ্ঞাপন

আসলে আমরা অনেক ভাল কাজ থেকে নিজেদের দূরে রাখি সময় নেই এই অজুহাতে। আমরা কী পরিমাণ সময় এভাবে নষ্ট করি তার দিকে নজর দিলে কিন্তু আমরা অনেক কালজয়ী কাজই করে ফেলতে পারি। সময়কে আসলে ফলপ্রসূ কাজে ব্যয় করতে হয়, নয়তো তা এমনি এমনি অকাজে ব্যয় হয়ে যায়। কারণ সময় কিন্তু দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা সবার জন্যই সমান।

৬. উত্তরণের উপায়
ক. শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়ানো। কাউকে পানি ঢেলে দিতে না বলে নিজে অপরকে পানি ঢেলে খাওয়ান। লিফটের পরিবর্তে সিড়ি ব্যবহার করুন। শরীর যত কাজে অভ্যস্ত হবে তত এর ক্লান্তি কমবে। আর যত এ আরামে থাকবে তত আপনার ক্লান্তি বাড়বে। মনে রাখবেন, শরীরের নাম মহাশয়, যা সহাই তাই সয়। অপ্রয়োজনীয় ফোন বা টিভি দেখা কমাতে এ কাজ গুলো দাঁড়িয়ে করুন। পা ব্যথা হলে এমনিতেই সময়ের হিসাব পাবেন। আর দিনে বিশেষ কোন কাজ করার থাকলে ঐ সময়টাতে ফোন বা ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রাখবেন। এতে ভুলে যাবার সম্ভাবনা কমবে।

খ. সব সময় বিশ্রাম খুঁজবেন না। এক ঘেয়েমি কমাতে এক টানা কাজের ফাঁকে দু একটা ছোট খাটো কাজ করুন। একবার বিশ্রাম নিতে গেলে দেখবেন গা ছেড়ে দিবে। কিছুক্ষণ আগের সেই উদ্যমটা আর পাবেন না। তাই সবসময় কাজের মধ্যে থাকুন।

গ. কাজ ঠিকমতো হলে আরো কাজ বাড়িয়ে দেওয়া। দেখা গেলো যে, অনেক কাজ করে ফেলেছেন, আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন। তখন আসলে আরো কাজ বাড়িয়ে দিতে হবে। ব্রেক নিলেই আলস্য চলে আসে।, সাফল্যের রেখা উর্ধ্বগামী রাখতে চাইলে ক্রমাগত কাজ বাড়াতে হবে। কারণ একবার ছন্দপতন ঘটলে সেই ছন্দটা তুলতে অনেক সময় লাগে। কচ্ছপের চেয়ে খরগোশের ক্ষিপ্রতা বেশি, দেখতে সুন্দর কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজয় হয় কচ্ছপ। ধীর গতির হলেও ধারাবাহিকতার কারণে কচ্ছপ সবসময় এগিয়ে থাকে।

ঘ. অনেক সময় শরীরের ক্লান্তি ও অসুস্থতা আপনার মনের উপর ভর করতে পারে। সে জন্য প্রয়োজন নিজের শরীরের যতœ, প্রয়োজন দম ও উজ্জ্বীবনের। যা আপনাকে দেবে ঝর ঝরে অনুভূতি। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ ও নিবিষ্ট চিত্তে সম্পূর্ণ একাকীত্বে প্রভূর দরবারে নিজের কথা ও পাপ-অপরাধ বলুন। দেখবেন আপনার মস্তিষ্কে সেরোটনিনের প্রবাহ বেড়ে যাবে, মনে আসবে সুখ সুখ অনুভূতি। প্রতিনিয়ত ক্লান্তিহীন শ্রমানন্দ দেবে আপনাকে লক্ষ্য জয়ের অনুভূতি, দূর হয় যাবে যখন যা ইচ্ছা তাই করার প্রবণতা, আলস্য বিদায় নেবে জীবন থেকে।

ঙ. আসলে আমাদের মস্তিষ্কের ধরনই এমন যে, একে যত কাজ দেয়া যায় তত তা শাণিত হতে থাকে। আর কাজ না দিলেই বরং তাতে মরচে ধরে যায় এবং পুনরায় কর্মক্ষম হতে অনেক সময় লাগে। তাই যারা বুদ্ধিমান তারা কখনো ছুটি নেয়না। একটি কাজ শেষ হতে না হতেই তারা শুরু করেন আর একটি কাজের পরিকল্পনা। মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য রক্ত যখন ঘাম হয়ে ঝরে- সেই নোনা পানি থেকে অঙ্কুুরিত হয় সাফল্যের বীজ। পরিশ্রম ছাড়া আপনি আপনার সাফল্য আশা করতে পারেন না। এ জন্য প্রয়োজন লক্ষ সুনির্দিষ্টকরণ, ঠান্ডা মাথায় নিয়মিত কাজে লেগে থাকা। অলসতা পরিহার ঝেড়ে ফেলে সক্রিয়তার সাথে নিরলস ভাবে কাজ করে যাওয়া।

 

 

৬. উপসংহার
আসলে জীবন এবং সময় কিন্তু বরফ খন্ডের মতো প্রতিনিয়তই গলে যাচ্ছে। ধরে রাখা যাচ্ছে না সময়কে। হয় আপনি একে ব্যবহার করবেন, নয়তো নষ্ট হয়ে যাবে। জমা থাকবে না। তাই আপনার পরিশ্রমও করতে হবে সময় মতো, কাজ ফেলে রাখা যাবে না। আলস কে পরিহার করে পরিশ্রমী হয়েই আপনি আপনার সাফল্যের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন, স্বার্থকতা আপনার পদচুম্বন করবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে কর্মব্যস্ত থাকার শক্তি দান করুক। মানুষ হিসেবে আমাদের জীবনকে স্বার্থক ও মহিমান্বিত করুক। এ ত্রিভূবনে তিনি আমাদের প্রেরণের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমরা যেন সম্মুখপানে তীব্রভাবে ধাবিত হতে পারি।

বিজ্ঞাপন