কর্মের জন্য মহীয়সী নারীর সম্মান–সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ

কুমিল্লার সাংবাদিকতার ইতিহাসে শামসুননাহার রাব্বী একজন উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন। স্বামী ফজলে রাব্বীর হাত ধরে সাংবাদিকতায় এসে তিনি সফলতার শীর্ষে পৌঁছে যেতে পেরেছিলেন। তাঁর চলে যাওয়া মানে কুমিল্লার সাংবাদিকতার জগতে একটি উজ্জল নক্ষত্রের পতন ছাড়া কিছুই নয়। কুমিল্লা সেই উজ্জল নক্ষত্রকে হারিয়েছে। এটা গোটা কুমিল্লাবাসীর জন্যই বেদনাদায়ক।
সব সময় হাসিমুখী এ মহীয়সী নারী ছিলেন আধুনিক ও স্মার্ট। উনার কথাবার্তা চাল-চলনে নিজস্ব একটি স্বকীয়তা ছিল। একজন সাহিত্যকর্মী হিসেবেও নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছিলেন। তিনি ধামির্ক ছিলেন, ধর্মান্ধ ছিলেন না। হজ করেছিলেন, ধর্মীয় সকল রীতি পালন করতেন। তবে আধুনিক ছিলেন।

সুদীর্ঘ ৬৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। পত্রিকার সকল কাজ করেছেন নিজ হাতে। ঠিক সন্তানেরই মতন লালন করেছেন সাপ্তাহিক আমোদকে। শুধু কুমিল্লা নয় ,বাংলা ভাষার একটি প্রাচীনতম সংবাদপত্র ‘সাপ্তাহিক আমোদ’ ।

৬৭ বছর বয়সী প্রাচীন সাপ্তাহিক আমোদ এর রয়েছে অনেক অর্জন। ইউনেস্কো পুরস্কার প্রাপ্তির গৌরবের মুকুটও এই পত্রিকার। আর এর পেছনে যার অসীম অবদান রয়েছে তিনি শামসুননাহার রাব্বী । স্বামী সাপ্তাহিক আমোদ সম্পাদক ফজলে রাব্বীর হাত ধরে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। তাঁর কর্মফলের জন্য মহীয়সী নারীর সম্মান অর্জন করেছেন তিনি। কুমিল্লাকে করেছেন গৌরবময়। কুমিল্লার গণমাধ্যম জগতে জুগিয়েছেন সোনালি সোপান। এই সাপ্তাহিক আমোদ এর হাত ধরে কুমিল্লার অনেক সাংবাদিক আজ জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। স্থানীয়ভাবেতো রয়েছেনই। সাংবাদিকতার পাশাপাশি একজন সুলেখিকা ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন সকল সাংবাদিকের খালাম্মা। সাংবাদিকদেরও তিনি সেই চোখেই দেখতেন। মমতা করতেন।

১৯৯৬ সালের সালের কথা। কুমিল্লা লেখক পরিষদের সাতজন সদস্য সাতটি গল্প নিয়ে “সাতজনের গল্প” নামে একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করেছিলাম। ওই গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে খালাম্মাকে অতিথি এবং আলোচক করা হয়েছিল। আরো আলোচক ছিলেন, শান্তনু কায়সার, ড. আলী হোসেন চৌধুরী। খালাম্মা গ্রন্থটির উপর এত মনোমুগ্ধকর আলোচনা করেছিলেন যে সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলেন।

সবাই ভালো আলোচনা করেছিলেন। তবে প্রত্যেকটি লেখকের নাম ধরে, গল্পের নাম ধরে অনর্গল বলেছিলেন খালাম্মা।

বোঝা গিয়েছিলো তিনি প্রত্যেকটি পল্প মন দিয়ে পড়েছিলেন বলেই এমন আলোচনা করতে পেরেছিলেন। ভুল-ত্রুটি, অসংলগ্নতা কিছুুই বাদ যায়নি উনার চোখ থেকে। আমি ছাড়াও ওই গ্রন্থের লেখক ছিলেন- মোতাহার হোসেন মাহবুব, মামুন সিদ্দিকী, নার্গিস খান, জলিল সরকার, নূরে আফরোজ চঞ্চু ও ইকবাল হোসেন রাজু। ওই আলোচনার পর অনেকেই লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছেন। খালাম্মা বলেছিলেন, ‘লেখার জন্য লেখা-এমন লেখক হলে টিকে থাকা যাবে না। লেখাকে টিকিয়ে রাখার জন্য লিখতে হবে। বেশি লিখার প্রয়োজন নেই, ভালো লিখতে হবে। লেখাকে সংখ্যায় নয়, মানে বিচার করতে হবে। আর তা হলে টিকে থাকবে। খালাম্মার এ পরামর্শ আমি এখনো মনে রাখি, অনুসরণ করি।
কালের বিবর্তনে কখনো হারিয়ে যাবেন না এ মহীয়সী নারী। কুমিল্লার সাংবাদিকতার ইতিহাসে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন কাল কালান্তর। এই মহীয়সী নারীর মহাপ্রয়াণে কুমিল্লার গণমাধ্যম অঙ্গন আজ শোকাহত। শোক জানাবার ভাষা নেই। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।

লেখক: নিজস্ব প্রতিবেদক,দৈনিক আমাদের সময়।