কুমিল্লাতে শতকন্ঠে ‘বিদ্রোহী’

 

ইলিয়াস হোসাইন।।
কবি নজরুলের মূল ভাবনা,চেতনাকে বিশ্ববিস্তৃতি করার লক্ষে কুমিল্লায় শত শিল্পীর কন্ঠে কবি নজরুলের কালজয়ী রচনা ‘বিদ্রোহি’ কবিতার আবৃত্তির অডিও-ভিজুয়াল রেকর্ডিং হয়েছে। সারাদেশে এমন পরিবেশনা এটাই প্রথম। কুমিল্লার শিল্প-ঐতিহ্যময় স্থান কবি কাজী নজরুল ইন্সটিটিউটের মুক্তমঞ্চ,রানীর কুঠির ঘাট এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি কুমিল্লার মঞ্চে রেকর্ডিং’র কাজ সম্পন্ন করা হয়। এর সার্বিক নির্দেশনায় ছিলেন দেশ বরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহতাব সুমন। এতে অংশগ্রহণ করেছেন শিশু-কিশোর-বয়োজেষ্ঠ্যসহ কুমিল্লার একশত বাচিক শিল্পী!
শিশু শিল্পী অথৈ, আদি ও আরিশা বলেন, আমরা নজরুলকে এ আবৃত্তির মাঝে উপলব্ধি করতে পেরেছি। বিদ্রোহী কবিতার শিহরিত শব্দ- মূল চেতনা হৃদয়ে ধারণ করেই আমরা গড়ে উঠার প্রত্যাশা রাখছি! তাদের অভিভাবক বাচিক শিল্পী মরিয়ম হাসমি,সাহিদা পপি ও কাজী সাজেদা হক বলেন, সারাদিন কবিতার শুটিংয়ে অংশগ্রহণ করে বেশ ভালো লেগেছে। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে আমাদের সন্তানদের সাথে একসাথে বিদ্রোহী কবিতা উচ্চারণ করার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের সন্তানরা বিদ্রোহীর চেতনায় সাম্য-সত্য-সততায় গড়ে উঠবে।
শাণিত উচ্চারণ বাচিক শিল্পচর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক, বাচিক শিল্পী জিৎনাথ বলেন,বিদ্রোহী কবিতা আমাদের মনকে জাগ্রত করে,শিক্ষা দেয় অন্যায়-অবিচার,অসত্যকে কুর্নিশ না করার। বিদ্রোহী কবিতার এ বছর শতবর্ষ হয়েছে। সে উপলক্ষে আমরা নজরুল জন্মজয়ন্তীর তিন দিনের অনুষ্ঠানে শতকন্ঠে বিদ্রোহী ভিন্ন ধাঁচে পরিবেশনা করার চেষ্টা করি। আশা রাখছি আমাদের দীর্ঘ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রম সফল হবে। অডিও ভিজুয়ালাইশনের মাধ্যমে প্রজন্মের নিকট শতকন্ঠে বিদ্রোহী নতুন ধারায় উপস্থাপন হবে।
বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ও নির্দেশক কাজী মাহতাব সুমন বলেন,কুমিল্লা নজরুল জীবনীর স্মৃতিবিজড়িত এক অভুলনীয় অধ্যায়। নজরুলের শব্দ-উচ্চারণ দিয়েই আমার আবৃত্তির সূচনা হয়েছে। নজরুলকে শব্দের মাধ্যমে ধারণ করি। যখন বিদ্রোহী পড়ি তখন বিদ্রোহীর প্রতিটা শব্দে,উচ্চারণে ডুবে যাই। বিদ্রোহী কবিতার শব্দশক্তি দেহ-মন শিহরিত করে। আমি সৃষ্টি আমি পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করবার নয়। বিদ্রোহী কবিতার প্রতিটি শব্দ আত্মশক্তিকে প্রবল বিশ্বাসে জাগ্রত করে। তাই নজরুলকে আরো বিশ্ব বিস্তৃতি করতে মাননীয় জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান আমাদের পরিবেশনা শতকণ্ঠে বিদ্রোহীকে অডিও ভিজুওয়ালের মাধ্যমে নির্মাণে অনুরোধ করেছেন, আয়োজনও করেছেন। আমাদের এ নির্মাণে ৫ বছরের শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-মধ্য বয়সী পর্যায়ের সকল স্তরের শিল্পীরা অংশ গ্রহণ করেছেন। বিদ্রোহী কবিতা তো বিভিন্ন আঙ্গিনায় বিভিন্নভাবে উপস্থাপন হয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি এই বিনির্মাণের মাধ্যমে বিদ্রোহীর মূল ভাবনাকে সকল স্তরের নিকট ভিন্ন আঙ্গিকে জাগিয়ে তুলতে এবং প্রজন্মের নিকট অডিও ভিজুয়ালের মধ্য দিয়ে মূল চেতনা দৃশ্যমান করতে। এ পরিবেশনার প্রথম অংশে রয়েছে বিদ্রোহী কবিতার সাথে যায় নজরুলের এমন কিছু গান দিয়ে বিশেষ নৃত্যকলা এবং বিদ্রোহী কবিতা এবং আগমনী কবিতার শেষের ক’টি চরণ। সারাদেশে শত কন্ঠে বিদ্রোহী কবিতা নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী নির্মাণ হয়েছে বলে আমার জানা নেই,এটা কুমিল্লাতেই প্রথম। নিশ্চয়ই এটা আমাদের কুমিল্লা এবং দেশের জন্য একটি আনন্দের বিষয়।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আয়াজ মাবুদ বলেন,২০২১সালটি কুমিল্লায় আগমনে নজরুলের শতবর্ষ। নজরুল চেতনা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রোডাকশনটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য। যা নতুন প্রজন্ম থেকে সকল স্তরের মানুষের নিকট বিদ্রোহী কবিতার মূল বার্তা পৌঁছে দেবে।