পাহাড়ে রাত গভীরে ব্যতিক্রমী বাজার

 

রাত গভীরে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে ব্যতিক্রমী বাজার বসে। নাম পাহাড়তলী বাজার। মাথায়, কাঁধে,সাইকেল, রিকশা ও ভ্যান যোগে আসতে থাকেন বিক্রেতারা। রাত ৩টায় শুরু হওয়া বাজার ফজরের আজানের পরপর ভেঙ্গে যায়। বিক্রেতারা সবাই স্থানীয় কৃষক। নিজের উৎপাদিত সবজি নিয়ে আসেন। এমন তিন শতাধিক বিক্রেতা জড়ো হন পাহাড়তলী বাজারে। এখানে প্রতি রাতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার সবজি বিক্রি হয়। যা মাসে দাঁড়ায় দেড় কোটি টাকা। কুমিল্লা সদর উপজেলার লালমাই পাহাড়ের হাতিগাড়া টিলার পাশে এই বাজারের অবস্থান। ২০ বছর ধরে বসে এই গভীর রাতের বাজার। সেখানের ক্রেতার ৯০ ভাগ বিভিন্ন বাজারের সবজি ব্যবসায়ী। এখান থেকে তাজা সবজি নিয়ে সকালে বসে পড়েন বিভিন্ন বাজারে। এনিয়ে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

সংবাদে উল্লেখ করা হয়, আলো আঁধারিতে বাজার বসেছে। চলছে ক্রেতা বিক্রেতার হাঁক ডাক। ঝুড়ি ভর্তি লাউ, কুমড়া, লতি, ধুন্দল,ডাটা শাক,লাল শাক,কলার মোচা,ঝিঙ্গা,শশীন্দা,বরবটি,ঢেঁড়শ,করলা ও বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি। ক্রেতা টর্চ লাইটের আলো জ¦ালিয়ে সবজি দেখেন। আলো পড়ে সবুজ সবজি আরো বর্ণিল হয়ে উঠে। দামে মিললে ক্রেতা সেই পণ্য তুলে নেন নিজের পরিবহনে। নগদ টাকা পেয়ে খুশি হয়ে যান বিক্রেতা। লাভের আশায় পণ্য নিয়ে অন্য বাজারের উদ্দেশে ছুটতে থাকেন ক্রেতা।
বারাইপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান ও বাখরাবাদ গ্রামের অহিদ মিয়া বলেন, এই বাজারের বয়স ২০ বছরের বেশি। এখানে প্রতিদিন দুই শতাধিক কৃষক তার উৎপাদিত সবজি নিয়ে বসেন। তার জমিতে মুলা, লালশাক ও লাউ আছে। আজ তিনি লাল শাক এনেছেন। এখানে কোন খাজনা দিতে হয় না। পাশের মসজিদের জন্য কিছু দান করেন।

পাইকারি ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন, তিনি প্রবাসে ছিলেন। বছর খানেক ধরে সবজির ব্যবসা করেন। এই বাজার থেকে সবজি নিয়ে কুমিল্লা নগরীর রানীর বাজারে বিক্রি করেন। কৃষকের হাত থেকে তাজা সবজি পাওয়া যায় বলে তিনি এই বাজারে আসেন। তিনি আরো বলেন, এখানে বৃষ্টির সময় ক্রেতা বিক্রেতাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। ছাউনির ব্যবস্থা করা হলে তারা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারবেন।

বাজারের চা দোকানি রজ্জব আলী বলেন, প্রথম দিকে ভোরে বাজার বসতো। পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিজেদের সুবিধার্থে গভীর রাতে বাজার বসাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেন। বাজারে প্রতি রাতে প্রায় ৫লাখ টাকার সবজি বিক্রি হয়। এখানে উজিরপুর, ধনুয়াইশ, পাকামোড়া, লইপুরা, শরাফতী,কালির বাজার, যশপুর, ধনুয়াখলা, দীঘল গাঁও, বারাইপুর, মস্তাপুর,ধনুয়াখলা ও কমলাপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষক সবজি নিয়ে আসেন। এদিকে এখানে কুমিল্লা নগরী,লাকসাম,লালমাই,বাগমারাসহ বিভিন্ন বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আসেন।

সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষি অফিসার হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, এই বাজারের পাশের এলাকা সদর দক্ষিণ উপজেলা। এখানের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি পাহাড়তলী বাজারে নিয়ে যান। বাড়ির পাশের বাজারে সবজি বিক্রি করে তাদের সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচে। বাজারে ছাউনির ব্যবস্থা করা হলে কৃষক ও পাইকারি ক্রেতার সুবিধা হবে।

স্থানীয় কালিরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন,বাজারটি বসায় স্থানীয় কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। তারা বাড়ির পাশের বাজারে সহজে সবজি বিক্রি করতে পারছেন। তাদের জন্য ছাউনি স্থাপন করার বিষয়টি আমরা ভেবে দেখবো।

 

সংবাদের তথ্যমতে, কুমিল্লা সদর,সদর দক্ষিণ,লালমাই ও বরুড়া উপজেলার কৃষকরা এখানে সবজি বিক্রি করেন। তারা এখানে সবজি বিক্রি করে খুশি। কারণ এতে তাদের দূরের বাজারে যেতে হয় না। তাদের সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচে। এখানে ছাউনি না থাকায় বৃষ্টির সময় ক্রেতা বিক্রেতাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়া রয়েছে আলোর সংকট ও শৌচাগার সংকট। এবিষয়ে উপজেলা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।