কুমিল্লায় দিনে ভাংছে ১৬ সংসার

আবু সুফিয়ান রাসেল।।


#বিয়ে বেশি নাঙ্গলকোট মুরাদনগরে
#তালাক বেশি নগরীতে
#নেপথ্যে পণ্যআসক্তি, পরকীয়া আর ইন্টারনেটের অপব্যবহার


কুমিল্লায় তালাক বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালের করোনাকালীন সময়ে বিয়ে কমেছে ২০ শতাংশ, তালাক বেড়েছে ৪৫শতাংশ। নগরীতে দৈনিক ৫টি সংসার ভাঙ্গছে। যার অধিকাংশ পণ্যআসক্তি, পরকীয়া আর ইন্টারনেটের অপব্যবহারের কারণে হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কুমিল্লা জেলা নিবন্ধক কার্যালয়ের সূত্রমতে, ২০১৯ সালে মুসলিম বিবাহ নিবন্ধন হয়েছে ২১ হাজার ৭৭১ টি। সে বছর তালাক হয়েছে ৩ হাজার ২৩০ পরিবারের। ২০২০ সালে বিবাহ নিবন্ধন হয়েছে ১৬ হাজার ৪৭০টি। সে সময়ে সংসার ভেঙ্গেছেন ৫ হাজার ৮৩৩ টি। এ হিসাবে দৈনিক ১৬টি সংসার ভাঙছে।

সরকারি হিসাবে গত বছর ১৬ হাজার ৪৭০ বিবাহ ও ৫ হাজার ৮৩৩টি তালাক হয়েছে। যার মধ্যে নগরীতে ১০৯২টি বিবাহ তালাক ৭৬১টি, চান্দিনায় বিবাহ ২০২১টি তালাক ৫৭২টি, দাউদকান্দিতে বিবাহ ১০৬৫টি তালাক ৫৭৪টি, লাকসামে বিবাহ ১০৩১টি তালাক ৪৯১টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় বিবাহ ৯১৯টি তালাক ২৩৩টি, বুড়িচং উপজেলায় বিবাহ ৬৩১টি তালাক ৩৯০টি, চৌদ্দগ্রামে বিবাহ ১৫০১টি তালাক ৫০১, দেবিদ্বারে বিবাহ ১০৬৫ তালাক ৫৭৪টি, হোমনা বিবাহ ৭৫৯টি তালাক ২২৮টি, মুরাদনগর বিবাহ ২০৩১টি তালাক ৭০১টি, নাঙ্গলকোটে বিবাহ ১৪০১টি তালাক ৬০০টি, আদর্শ সদরে বিবাহ ২০৮টি তালাক ৮০টি, লালমাই ও সদর দক্ষিণে বিবাহ ৮৬৪টি তালাক ২৫৩টি, মেঘনা ৩৭৯বিবাহ তালাক ১৪০টি, তিতাস বিবাহ ৭৩৪টি তালাক ২৩০টি, মনোহরগঞ্জে বিবাহ ৭২৩টি তালাক ২৪৩টি হয়েছে।

কুমিল্লা জেলা নারী উন্নয়ন সভাপতি, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আখতার বলেন, তালাক শুধু দু’টি জীবন বা দুটি পরিবারের বিচ্ছেদ নয়। এটি সামাজিক ব্যধি,তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে পরকীয়া,পণ্য আসক্তি,এককেন্দ্রিক মনোভাব, ক্রমবর্ধমান উত্থানের কারণে তালাক বাড়ছে। যৌথ পরিবার প্রথা কমে যাচ্ছে। সমাজে সিংগেল মাদারের সংখ্যা বাড়ছে। অবহেলিত সন্তানরা গ্যাং কালচার যুক্ত হচ্ছে। আপরাধ দুনিয়ায় পা বাড়াচ্ছে। তালাকের মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনা রোধে স্থানীয়ভাবে সচেতনতা,আত্মকর্মসংস্থান তৈরির প্রয়োজন।

বরুড়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি আলী আকবর ফারুকী বলেন, ইসলামে সর্বনিকৃষ্ট হলাল হলো বিবাহ বিচ্ছেদ। বিবাহ ও তালাক বিষয়ে জ্ঞানার্জন ফরজ। তালাক কামানোর জন্য একজন অন্যজনকে বুঝতে হবে। আধুনিকতার নামে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসালে হবে না। উভয়ে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। দু’জনের একজন যদি ভুল করে তাকে তালাক নয় সতর্ক করতে হবে। যদি ঠিক না হয় প্রথম পারিবারিক পরে সামাজিক ভাবে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। বিচ্ছেদ সমাধান নয়। যদি তবুও ঠিক না হয় উভয়ে ধীরেধীরে দূরত্বহীন হবে। প্রথম মাসে এক তালাক, এক-দুই মাস পর আরেক তালাক এভাবে।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, নগরীতে আশঙ্কাজনক ভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে। ২০২০ সালে নগরীতে তালাক হয়েছে ৭৬১ পরিবারের। কোন কোন কর্মদিবসে ৮-১০ টি তালাক নামায় স্বাক্ষর করতে হয়। এ সময়ে নগরীতে হয়তো গড় দৈনিক ৫-৬ টি পরিবারের বিচ্ছেদ হচ্ছে।

কুমিল্লা জেলা রেজিষ্ট্রার মো. আনোয়ারুল হক চৌধুরী বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, ১৭ উপজেলা ও পৌরসভার সমূহের হিসাবে শহরে তালাকের পরিমাণ বেশি। পরিসংখ্যানে দেখা যায় দিনদিন তালাকের পরিমাণ বাড়ছে কুমিল্লায়।