কুমিল্লায় হোটেল বয় থেকে মোবাইল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা

 

মহিউদ্দিন মোল্লা

অনেকটা রূপকথার গল্প। পরিবারের হাল ধরতে যে ছেলে হোটেল বয়ের কাজ করতেন সে এখন মোবাইল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। নাহ্ এটি বৃটেন বা আমেরিকার কোন তরুণের গল্প নয়। বাংলাদেশের কুমিল্লার এক তরুণের জীবনের বাঁক বদলের গল্প। পরিশ্রম আর চেষ্টা তাকে দিয়েছে সফলতার দরজার চাবি। তিনি আবুল কালাম হাসান টগর। গত এক দশক ধরে তার হালিমা টেলিকম কোম্পানি দেশে মোবাইল ফোন অ্যাকসেসরিজ উৎপাদনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

আবুল কালাম হাসান টগর
আবুল কালাম হাসান টগর

তার মধ্যে অন্যতম চার্জার,ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক। সম্প্রতি তিনি মোবাইল ফোন বাজারে এনেছেন। এসব উৎপাদন হচ্ছে কুমিল্লা শহরতলীর চাঁন্দপুর এলাকায়। তার কারখানায় কাজ করেন হাজারের মতো শ্রমিক। তাদের ৯০ ভাগ নারী। তাদের অধিকাংশ নিরক্ষর। সেই নারীদের হাতেকলমে শিখিয়ে তিনি স্বাবলম্বী করেছেন।

সূত্রমতে,কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কৈয়নী টগরদের পৈত্রিক বাড়ি। বাবা মো. সিরাজুল হক বাড়ি করেন নগরীর মোগলটুলীতে। তারা তিন ভাই এক বোন। তিনি মেঝ। বাবা ছিলেন ঠিকাদার। তিনি সন্তানদের ছোট রেখে মারা যান। টগরের বয়স তখন পাঁচ বছর। তাদের স্বচ্ছল পরিবারে নেমে আসে অভাবের কালো ছায়া। ১৯৯৮সালের দিকে তিনি ২০ উর্ধ্ব তরুণ। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাজ নেন সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে। সেখানে জমানো তিন হাজার টাকা নিয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তিনি বিভিন্ন দোকানে গিয়ে একটি ফোন কোম্পানির কার্ড বিক্রি শুরু করেন। সেখানে পরিচয় হয় ওই কোম্পানির এক কর্মকর্তার সাথে। তিনি তাকে কুমিল্লা ফিরে গিয়ে কোম্পানির সাব-ডিলার হতে বলেন। টগর স্বজনদের থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। সাইকেল চালিয়ে দোকানে পণ্য পৌঁছে দিতেন। সে সেময় অনেক ব্যবসায়ী বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতেন। তিনি ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতেন।



ক্লিক করুন হালিমা টেলিকম ওয়েব সাইট: http://halimagroup.com/


 

এতে তার প্রতি মানুষের আস্থা বেড়ে যায়। তিনি ওই কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর হন। ফোনের সিম ব্যবসা করতে গিয়ে দেখলেন ফোন ব্যবসায়ীরা মোবাইল ফোন অ্যাকসেসরিজ এনে দেয়ার দাবি জানান। তিনি ঢাকা থেকে মোবাইল ফোন অ্যাকসেসরিজ এনে তাদের দিতে থাকেন। এক সময় তার মাথায় আসে বড় কিছু করার। সে লক্ষ্যে ২০১০সালে চীন যান। সেখানে গিয়ে মোবাইল ফোন অ্যাকসেসরিজ তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে এসে মা হালিমা বেগমের নামে চালু করেন হালিমা টেলিকম কোম্পানি। দেশের ৬৪ জেলায় তার পণ্য যাচ্ছে। তার কারখানায় প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি চার্জার,২০হাজার ব্যাটারি ও দুই হাজার পাওয়ার ব্যাংক তৈরি হচ্ছে।

শহরতলীর মধ্য চাঁন্দপুর এলাকার ফ্যাক্টরিতে গিয়ে দেখা যায়, ছয়তলা নিজস্ব ভবন। প্রতিটি ফ্লোরে চলছে কাজের উৎসব। কোথাও মোবাইল ফোনের চার্জার চেকিং চলছে। কোথাও ব্যাটারির মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

 

আরো দেখুন ——  Halima Group

ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন ঝর্না বেগম। বাড়ি পাশের এলাকায়। তিনি বলেন, আমি লেখা পড়া জানতাম না। এখানে কাজ শিখেছি। এখন ভালো বেতন পাই। পরিবার নিয়ে ভালো আছি।

 

আবুল কালাম হাসান টগর বলেন, পণ্যের প্রচারে দেশের আনাচে কানাচে ঘুরেছি। ২০১৫সালে আমাদের কোম্পানি মোবাইল ফোন অ্যাকসেসরিজের ব্যবসায় নেতৃত্বে চলে আসে। সামনে আমরা ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ও টাচ ফোন বাজারে আনবো। কুমিল্লায় তৈরি পণ্য ইউরোপ,আমেরিকা,মালেয়শিয়া ও থাইল্যান্ডে রপ্তানির স্বপ্ন রয়েছে।

 

টগরের প্রতিবেশী প্রবীণ রাজনীতিবিদ শফিকুল ইসলাম শিকদার বলেন,টগরের বাবা মারা যাওয়ার পর তারা সমস্যায় পড়ে যায়। পরে পরিশ্রম দিয়ে পরিবারটি ঘুরে দাঁড়ায়। উদ্যোমী টগর আরো অনেক দূর যাবে।

 

ফেসবুকে যুক্ত হতে পারেন  হালিমা গ্রুপের সাথে  : HalimaTelco

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন,পরিশ্রম তাকে এগিয়ে দিয়েছে। কুমিল্লার মতো ছোট শহরে মোবাইল ফোন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা ব্যতিক্রম বিষয়। সে কুমিল্লার মুখ উজ্জ্বল করেছে।

 

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, জেলা শহরে মোবাইল ফোন অ্যাকসেসরিজ তৈরির প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তাদের পণ্য রপ্তানিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
ছবি আছে।