কুমিল্লা নিউ মার্কেটের সিঁড়িতে রেস্টুরেন্ট,পার্কিংয়ে কাঁচা বাজার

পাঁচ মিনিটেই ভিজে যায় জামা
নেই অগ্নি নির্বাপক

মোহাম্মদ শরীফ।
কুমিল্লা নগরীর ব্যস্ততম বিপনী বিতান নিউ মার্কেট। কাঁচা বাজার, প্রসাধনী, পোশাক, খাবার, ইলেট্রনিক পণ্য, গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকে শুরু করে কি নেই মার্কেটটিতে! নিত্য প্রয়োজনে প্রতিদিন হাজারো গ্রাহকের সমাগম ঘটে এখানে। নগরীর প্রাণকেন্দ্রের পাঁচতলা এই মার্কেট নিয়ে যেন অভিযোগের শেষ নেই গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের। গরম যেন এই মার্কেটের পরম বন্ধু! পাঁচ মিনিট হাঁটা চলা করলেই গা ভিজে যায় ঘামে। মার্কেটে বাইর থেকে বাতাস প্রবেশের চারপাশের বেলকনিতে গড়ে তোলা হয়েছে দোকান। এতে গরমের মাত্রা এখানে বহুগুণ বেড়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ফ্যান থাকলেও, সেগুলো যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। কোনোটা নষ্ট। অধিকাংশ গুলো ঘুরে তীব্র আওয়াজে। অপরিচ্ছন্নতা এখানকার বড় একটি অভিযোগ। প্রতিটি ফ্লোরে নোংরা ময়লা ও উচ্ছিষ্ট পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। আন্ডারগ্রাউন্ডের কাঁচা বাজার সব সময় থাকে স্যাঁতস্যাঁতে। মার্কেটের সামনে ফেলে রাখা হয় আবর্জনার স্তূপ। বাঁশের ব্যারিকেট দেখে বোঝার উপায় নেই এটি শহরের সবচেয়ে বড় মার্কেটের প্রবেশ পথ।


পোশাক কিনতে আসা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আবু নাঈম ও সালাউদ্দিন জানান, ‘কুমিল্লায় এত গরম আর কোনো মার্কেটে গেলে লাগে না। মার্কেটে প্রবেশ করলে মনে হয় গরমে দম বন্ধ হয়ে যায়। এই মার্কেটের গেইট থেকে শুরু করে সব খানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দেখা উচিৎ।’

এদিকে নিউ মার্কেটে নেই অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। মার্কেটে আগুন লেগে গেলে পানিও মিলবে না বলে জানান একাধিক দোকানি। এছাড়া পূর্ব পাশে ইর্মাজেন্সি সিঁড়ি বন্ধ করে গড়ে তোলা হয়েছে রেস্টুরেন্ট। যা এখন তালাবদ্ধ রয়েছে। মার্কেটের দু’টি লিফটের একটি বন্ধ। অন্যটি নড়বড়ে। চলছে কোনো রকম ভাবে স্বল্প মানুষ বহন করে। মার্কেটের শ্রেণী বিন্যাস নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন দোকানিরা। প্রতিটি ফ্লোরে আলাদা পণ্যের দোকান থাকার কথা থাকলেও, নেই সেই শৃংখলা। একই ফ্লোরে খাবারে দোকানের সাথে পোশাক পণ্য, মূল মার্কেটে আর্কষণীয় স্থানে গোডাউন ও নানা ভারী মেশিন স্থাপন হয়েছে।


এক্সপার্ট আইটির স্বত্ত্বাধিকারী আবুল কালাম জুয়েল জানান, ‘ফ্লোর ভিত্তিক ক্লাসিফিকেশন না থাকায় কাস্টমারের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে তারা বিভ্রান্তও হচ্ছেন। যত্রতত্র গোডাউন মার্কেটের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে।’
এদিকে মার্কেটে দোকানের এসির আউটডোর মেশিন গুলো স্থাপন করা হয়েছে মার্কেটের ভিতর। যা থেকে গরম বাতাস গুলো থেকে যাচ্ছে মার্কেটের ভিতরে। এছাড়া এসব আউটডোর মেশিন ভিতরে থাকার ফলে তৈরি হয়েছে ঝুঁকি। এসব মেশিন বিস্ফোরিত হয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
তাছাড়া সিটি করপোরেশনের এই মার্কেট নিজেই যেন মানছে নিজেদের আইন। পার্কিংয়ের বড় একটি অংশ দখল করে সেখানে বসেছে কাঁচা বাজার, রেস্টুরেন্ট, চা দোকান। মার্কেটের সামনে যানজট নিত্যদিনের নিয়মে পরিণিত হয়েছে। এসব কারণে কাস্টমারও হারাচ্ছেন মার্কেটের দোকানিরা। নিউ মার্কেটের অন্তত ২০জন দোকানি জানান, ‘গরম. অপরিচ্ছন্নতা, পার্কিং সমস্যা ও শৃংখলার অভাবে কাস্টমার হারাচ্ছেন দোকানিরা। বর্তমান সময়ে আধুনিক মার্কেট গুলোর দিকে ছুটছেন ক্রেতারা। এছাড়া পয়:নিষ্কাশন সমস্যায় ভোগান্তি রয়েছে মার্কেটে। অগ্নি নিরাপত্তা ও ঝুঁকিপূর্ণ এসির আউটডোর মেশিন স্থানান্তর করতে হবে। ফ্লোর গুলোতে ক্লাসিফিকেশন এনে বারান্দায় গড়ে উঠা দোকান উচ্ছেদ করতে হবে।
কুমিল্লা নিউ মার্কেটের সার্বিক বিষয় গুলো তত্ত্বাবধান করেন সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র হাববিুর আল আমিন সাদী।
নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক দিপক সাহা বলেন, ‘অগ্নি নির্বাপক স্থাপনের কাজ চলছে। গরমে ভোগান্তির কথা সত্যি। এতে কাস্টমার হারাচ্ছে দোকানিরা। বেলকনির দোকান তুলে দিলে মার্কেটের সৌন্দর্য ফিরবে, গরম কমবে।’
এই বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেছেন, ‘সমস্যার বিষয়ে বিস্তাারিত জেনে মন্তব্য ও সমাধান করবেন।’