চির বিদায়ের বন্ধু তিনি

 

মহিউদ্দিন মোল্লা

ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী। বয়স ৬০ এর কোটায়। উচ্চতা ছয় ফুটের কাছাকাছি। মস্তিষ্কে ক্যান্সারের কারণে দুইবার মাথার পেছনটা কাটা হয়েছে। তবু তিনি থেমে নেই। কুমিল্লা নগরীর হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ যে ধর্মের মানুষই মারা যান তিনি সেখানে হাজির। তিনি মৃতের দাফন,সৎকার করে বাসায় ফেরেন। কেউ মারা গেলে তিনিই অন্য সবাইকে ফোন করে জানান। নগরীতে কারো মৃত্যুর খবর আলোচনা এলে অন্যরা তার নিকট ফোন করে নিশ্চিত হন। কাউকে হাসপাতালে নেয়া, কোন নাটক,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে পরামর্শের জন্যও তার ডাক পড়ে। কারো মতে তিনি কখনও ঘুমান না, সব সময় তাকে মানুষের সেবায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। নগরীর অনেকে তাকে আগে বলে রাখেন,তার চির বিদায়ের দিন তিনি যেন গোসল দাফনে সহযোগিতা করেন। এসব কারণে তিনি নগরীর প্রিয় মুখ হিসেবে পরিচিত।

ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকীর বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাসন্ডা গ্রামে। বাবা স্কুল শিক্ষক ইসহাক সিদ্দিকী। তারা চার ভাই দুই বোন। ভাইয়েরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। মাইন উদ্দিন সিদ্দিকী বিসিকের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার,জালাল উদ্দিন সিদ্দিকী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল,নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী খুলনার একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকীর দুই ছেলে। তারা লেখাপড়া করছেন। আগে গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক মাছ চাষ আর বইয়ের ব্যবসায় তার পরিবারের খরচ চলতো। এখন বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতির কুমিল্লা অফিসে ম্যানেজারের(স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) দায়িত্ব পালন করছি।

ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী বলেন,ছোট থাকতে কুমিল্লা নগরীতে বোনের বাসায় আসি। কুমিল্লা হাইস্কুল থেকে এসএসসি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করি। সংগঠন,নাটক ইত্যাদি করে লেখা পড়ায় মন দিতে পারিনি। ১৯৮২সালে প্রাইভেটে স্নাতক পাশ করি। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি পরিবার থেকে পাই। বাবার শিক্ষা ছিলো আমার কথায় ও কাজে যেন মানুষ কষ্ট না পায়। মা অভাবের সময় মানুষকে খাদ্য দিতেন। রমজানের সময় বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে হাটে যাওয়া মানুষকে লাইনে বসিয়ে ইফতার করাতেন। কুমিল্লায় কালচারাল কমপ্লেক্স,নজরুল পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন কাজের গতি দিয়েছে। রোভার স্কাউট,বিএনসিসি করেছি। এখনও জড়িত আছি। সেগুলোও চলার পথে সেবার কাজে উৎসাহিত করেছে।এছাড়া প্রয়াত মহিয়সী নারী ডা. যোবায়দা হান্নান ও শিক্ষাবিদ হাসান ইমাম মজুমদার ফটিক সাংগঠনিক কাজে উৎসাহিত করেছেন

দাফনের বিষয়ে তিনি বলেন,মানুষ শুধু শুধু লাশ ও কবরস্থানকে ভয় করে। কবরস্থান পবিত্র সেখানে ভয়ের কিছু নেই। সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী আমার আত্মীয়। তার বাবা রফিক উদ্দিন চৌধুরীর দাফন কাফনের কাজ প্রথমে করি। তারপর বিভিন্ন ধর্মের শতাধিক মানুষের শেষকৃত্যে সহযোগিতা করি। শারিরীক সুস্থতা নিয়ে এভাবে মানুষের পাশে আজীবন থাকতে চাই।

ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকীর বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কুমিল্লা নগরীর হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ যে ধর্মের মানুষই মারা যান তিনি সেখানে হাজির। রোগীর সেবায়ও তিনি অনন্য। তাদের মতো মানুষের সংখ্যা বাড়লে সমাজ আরো সুন্দর হয়ে উঠবে।