ছেলেবেলার ঈদ

প্রকৌশলী মীর ফজলে রাব্বী

বাবার চাকুরির সুবাদে তখন নরসিংদী থাকি। রোজার ঈদে গ্রামের বাড়িতে না আসা হলেও কুরবানির ঈদে বাড়ি আসা চাই। ভাই, বোনসহ সবাই গভীর আগ্রহে বসে থাকতাম কবে বাড়ি যাব। গরু কিনতে দেখা কিংবা গরুকে হাঁটিয়ে বাড়িতে আনা সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। গরুর চেহারা, দাঁত দেখা, গরু হাঁটানো, দরদাম করে গরু কিনতে হয়। গরুর সিং, গলায় কত বিচিত্র ধরনের কাপড়, মালা থাকত, যা এখন সচরাচর দেখা যায় না। আমরা ছোটরা গরুর এইসব মালা, কাপড় নিতে উদগ্রীব থাকতাম। আসলে আমাদের সময়ে ছোটদের চাহিদাও যৎসামান্যই থাকত। গরু কিনতে হবে বলে কোরবানির ঈদে কোন কাপড় কেনা হত না। সকালে গোছল করে পায়জামা, পাঞ্জাবি পরে ঈদগাতে যেতাম। মৌলভী সাহেব কোরবানির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করতেন। আমরা ছোটরা হযরত ইসমাইল, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর গল্প শুনতে পছন্দ করতাম। যাই হোক নামাজ পড়ে দৌড়ে বাড়ি, গরুকে কুরবানি দিতে সবাই প্রস্তুত। মৌলভী সাহেব একে একে গরু কুরবানির দিতেন। আমরা ছোটরা বারান্দায় বসে মাংস কাটা দেখতাম, অনেকসময় নিজেরা গরুর পা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, বড়রা গরুর চামড়া ছড়াচ্ছেন। একে একে মাংস, হাড় কাটা হচ্ছে । ভাবতাম কবে বড় হব, মাংস কাটতে পারব। মাংস কাটার সময় বড়দের কথা শুনতাম। রাজ্যের কত কথা খুব মিস করি। মা,চাচীরা খাবার পাঠাতেন। সেমাই, পিঠাও থাকত বেশির ভাগ সময়। আসলে দিনগুলোতে ফিরে যেতে মন চায়। আমাদের বাচ্চাদের সে দিন দিতে পারি নাই, বাচ্চাদেরও আগ্রহ কমে গেছে। আমাদের সময়ে গরুর মাংসে থাকা পর্দা দিয়ে ঢোল বানাতাম, কি উৎসাহ থাকত। মাংস খেতে বসতাম সেই দুপুরের শেষের দিকে, ছোটরা আগে। মজার দিনগুলো জানি ফিরবে না, তবু শৈশবের ঈদের স্মৃতি গুলি মনে দাগ কেটে আছে।

লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা কেন্দ্র।