ডাবল বিসিএস‘র বাবা ওয়েটার তোফাজ্জল!
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
তোফাজ্জল হোসেন। কুমিল্লা নগরীতে ৪৬বছর ধরে রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ করছেন। তাই রেস্তোরাঁ অঙ্গনের পরিচিত মুখ। ১৯৮০সালে কাজ শুরু করেন শওকত লিয়াকত হোটেলে। এখন কাজ করছেন হোটেল ডায়নায়। মালিক একই পরিবারের। তবে তোফাজ্জল হোসেন এখন বেশি পরিচিত তার মেয়ে শাহনাজ আক্তারের জন্য। মেয়ে দুইটি বিসিএসে(বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) উত্তীর্ণ হয়েছেন। কেউ কেউ রেস্তোরাঁয় তোফাজ্জলকে ডাকেন ডাবল বিসিএসের বাবা বলে। এতো তিনি আনন্দিত হন। ৪০তম বিসিএসে(নন ক্যাডার) উত্তীর্ণ হয়ে ইনস্টাক্টর হিসেবে যোগ দেন নোয়াখালী বেগমগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে। পরবর্তীতে ৪৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হন। এবার যোগ দিবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সহকারী মহা হিসাবরক্ষক পদে।
তোফাজ্জল হোসেন জানান,তার বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পিলগিরি গ্রামে। তার লেখাপড়া নেই। নামও লিখতে পারেন না। তাই সন্তানদের লেখাপড়া করানোর খুব ইচ্ছে ছিল তার। তিন ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে দিদার হোসেন কিছু পড়াশোনা করে প্রবাসে গেছেন। মেয়ে শাহনাজ আক্তার মেঝ। ৩য় ছেলে কবির হোসেন মাস্টার্সে পড়ছেন। ছোট ছেলে আক্তার হোসেন অনার্সে পড়েছেন।
তোফাজ্জাল হোসেন বলেন,তিনি রেস্তোরাঁয় ছোট চাকরি করে তাদের পড়ার খরচের যোগান দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তার মালিক লিয়াকত আলী দুলালসহ অন্যান্যরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। তার স্ত্রী আয়েশা বেগমও সন্তানদের লেখাপড়ার তদারকিতে অনেক কষ্ট করেছেন।
শাহনাজ আক্তার জানান, এসএসসি পাস করেছেন ২০১০সালে পিলগিরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে, ২০১২সালে আড্ডা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি দিয়েছেন। এইচএসসি‘র পর বিয়ে হয়। সংসার সন্তান সামলে গণিত নিয়ে অনার্স মাস্টার্স করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে। এইচএসসি‘র আগে বিসিএস সম্পর্কে ধারণা ছিলো না। প্রাইমারি শিক্ষকের নিয়োগ পরীক্ষার কোচিং করতে গিয়ে জানেন সেটি বিএসিএস কোচিং সেন্টার। তারপর চিন্তা করলেন করলেন- ভালো কিছুই তিনি করবেন।
লক্ষ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবেন এমন টার্গেট ছিলো না। তবে এগিয়ে যেতো হবে সেই জিদটা মনের ভেতর ছিলো।
নারী শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন,বাধা বিপত্তি না পেরিয়ে বড় হয়েছে কে কবে। ধৈর্য্যরে সাথে সব বাধা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার পেশা নিয়ে তিনি বলেন, বাবাকে নিয়ে তিনি গৌরববোধ করেন। তার পরিশ্রমের আয়ে তারা এতটুকু আসতে পেরেছেন। বাবার সাথে মাও তাদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। খরচ যোগানে তিনি নিজেও টিউশনি করতেন। পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য মামা আমিরুল ইসলাম শিমুলের প্রতিও তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি আরো বলেন,সাফল্যে তার পা মাটিতেই থাকবে। মাটির মানুষ মাটির কাছে থাকতে চান,সাধ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে থাকবেন। তিনি বাবা-মা,স্বামী, চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া সন্তান ওয়াসি ও পরিবারের জন্য সবার নিকট দোয়া কামনা করেছেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাশার ভূঁঞা বলেন,আমাদের শিক্ষার্থী ভালো অবস্থানে গিয়েছে। সেটা অবশ্যই আনন্দের। তার সাথে তার পিতা-মাতাকেও অভিনন্দন জানাই।