তিতাসপাড়ে ধান মাড়ানোর উৎসব !

ইলিয়াস হোসাইন।।

নদীর দ্বারে ছড়াচ্ছে সোনালী ধানের মৌ মৌ গন্ধ ।শীতল জলের বুক ছিরে গলায় গান তুলে মাঝি নৌকা ভরে ধান আনছেন।মাথায় গামছা বেঁধে সেই ধান পাড়ে তুলছেন কৃষক।গ্রীষ্মের কড়া রোদ মাথায় নিয়ে কৃষক ধান ছিটাচ্ছেন;দু’পা ঘেটে মেলে দিচ্ছেন কৃষাণী।কেউবা পার্কা টেনে ধান গোলাচ্ছেন, কেউ ব্যস্ত বস্তায় ভরতে। পাশেই সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে ক্লান্ত
কৃষক বিশ্রামে বিভোর।ক্ষুধার্ত কৃষক গামলায় হাত ডুবিয়ে খাচ্ছেন পোড়া মরিচ দিয়ে পান্তা ভাত;পাশে বসে জল ঢেলে দিতে প্রস্তুত সরলা হাসির কৃষাণী। আরেক হাতে হাতপাখার বাতাসে শীতল করছেন রোদে পোড়া শরীর। সড়কের এপাড়-ওপাড়ে মিলে ধান মাড়ানোর এমন মহা উৎসবে মেতেছেন তিতাসপাড়ের কৃষাণ-কৃষাণী।

সরজমিনে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিমরাইল কান্দি ব্রিজের নিচে তিতাস নদীর পাড়ে এমন বৈচিত্রময় দৃশ্য।
সূত্রমতে,সড়কের এপাড়-ওপাড় মিলে
প্রায় ত্রিশটি পরিবার খলা তৈরি করে ধান মাড়ান।এ মৌসুমে প্রায় শত বিঘা জমির ধান চাষ করেছেন। প্রতি বিঘাতে ষাট থেকে সত্তর মন ধান উৎপাদন হয়।এ বোরো মৌসুমকে ঘিরে প্রতি গেরস্ত পাঁচ-ছয় জন শ্রমিক নিয়োগ দেন।প্রতি শ্রমিকেদের জন্য তাদের গুনতে হয় সাত’শ টাকা ।
কটকতারা,বিনা২৫,বঙ্গবন্ধু,ব্যারেক-টু জিরাশাইরসহ বহু ধরনের ধান এ মৌসুমে চাষ করেন।বর্ষায় যদিও নদীর পানিতে জমি ভরাডুবি থাকে। মৌসুমে একবার তারা এ ধান চাষের সুযোগ পায়।নিজেদের সুবিধার জন্য বাড়িতে না নিয়ে নদীর পাড়েই নিজেদের জমিতে কৃষকেরা খলা তৈরি করে ধান মাড়িয়ে শুকানোর কাজ করেন। এখান থেকেই তারা বাজারজাত করেন।

কৃষক নুরে আলম জানান,আমি ৩বিঘা জমি করেছি।
ধানের ফলনও ভালো হয়েছে।কাঁচা ধান ৯৩০করে বিক্রি করছি।শুকনো ধান ১০৫০টাকা।এতো কষ্ট করে শ্রমিক রেখে আমরা ধানের ন্যায্য মূল পাইনা।সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা শহরতলীর নদীরপাড়ের এ ধান চাষের উৎসব ধরে রাখতে পারবো।

কৃষাণী হাজেরা খাতুন জানান,আমি এ বছর ১৭কানি জমি করেছি।দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।প্রায় ৪কানি খেত আমার লোকশান হয়েছে।বৈশাখী ঝড়ে ধান নষ্ট হয়েছে।সব মিলিয়ে লাভ-লস সমান পর্যায়ে থাকবে।
আমরা যদি ধানের ন্যায্য মূল্য পাই তাহলেতো পরিবারের মুখে ভাত দিতে পারবো।

নেত্রকোনা থেকে আসা শ্রমিক মনির মিয়া জানান, আমি প্রতি বছরই এখানে কাজ করতে আসি। দু’বেলা খাওন,আর দৈনিক সাত’শ করে দেয়।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করি।

সেলিম মিয়া,মোখলেস মিয়া,বাবুল,মিন্নাক আলী,মোক্তার মিয়া,মফিজ মিয়া,হেকিম মিয়া,শাহানা বেগম,হিরু মিয়া, জামাল মিয়া,হানিফ মিয়া,সবুজ আলী, ভুট্টু মিয়া,কুদ্দুস মিয়াসহ এখানকার সকল কৃষকের দাবি তারা যদি ধানের মূল্য ঠিকঠাক পায়।সরকার যদি তাদের সকল সহযোগিতা করেন তাহলে তিতাস পাড়ে এ ধান মাড়ানোর উৎসব প্রতিবছরই দেখা যাবে।