গরমে ভালো নেই পশু-পাখিরা !

 

 ইলিয়াছ হোসাইন।।

প্রচন্ড গরম! শীতল পানি পেয়ে গরুর পাল যেনো মহাখুশি। লাফিয়ে পড়েছে বিলের জলে। গা ভাসিয়ে প্রশান্ত করছে দেহ;যদি একটু স্বস্তি মেলে। কিছু গরু হাঁটু গেঁড়ে কচুরিপানা খাচ্ছে। দুপুরের রোদ মাথায় করে ক্লান্ত ফিঙ্গে বিশ্রাম নিচ্ছে বেগুনি ফুলের মাথায়। মাছরাঙা হাঁপাচ্ছে;সূর্য তার মাথা বরাবর।রাখালের গতর পুড়ছে, মুখ হয়েছে ছাই রঙের।কিশোরের দল উদোম গায়ে জলে ঝাঁপাচ্ছে;অদূরে নদীর ঘাটে গাঁয়ের বধুরা স্নানে ব্যস্ত। তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ;পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৭ডিগ্রি সেলসিয়াস। মানুষের সাথে পশু-পাখিও ভীষণ আতঙ্কে রয়েছে।একটু জলের খোঁজ পেলেই যেনো পুরো শরীর ডুবিয়ে রাখে। সম্প্রতি
যদিও খাল-বিল-পুকুর-নালা ভরাট করার মহোৎসবে মানুষ মেতে উঠেছে;যার পুরো প্রভাব পড়ছে প্রাণী জগতের উপর। আমাদের নষ্ট সভ্যতার মস্তিষ্কে যেনো পশু-পাখিদের জীবনপ্রণালী নিয়ে ভাববার এক বিন্দু জায়গা নেই। গাছ কেটে সাফ করছে নষ্ট সভ্যতা। বন ধ্বংসে যেমন অগ্রগামী;বনায়ন তৈরিতে নেই তেমন আগ্রহ! রাসায়নিক দ্রব্যে দূষিত করছে মাটি ও পানি। ইটের ভাটা,যানবাহনের কালো ধোঁয়া,কলকারখানার বর্জ্য বিশুদ্ধ বায়ুকে করছে বিষাক্ত;যার ফলাফলে আজ শক্ত খুঁটিতে দাঁড়িয়েছে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’র সাইন বোর্ড। সব মিলিয়ে আমাদের পরিবেশ আজ বড্ড অসহায়। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী সুস্থভাবে টিকে থাকবার কোনো সুপরিকল্পনা নেই!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লইস্কার বিলে গরু চরাতে আসা রাখাল রমিজ মিয়া বলেন,আমার ৪০টা গরু রয়েছে।গরমে আমগোর হাঁসফাঁস জীবন।কি হরবো বাড়িতে থাকলে গরু না হাইয়া(খেয়ে) থাখবো,গরমে স্ট্রোক কইরা মইরা যাওয়ার আশঙ্কাও থাকবো। তাই গরুগুলারে বিলে নিয়ে আইছি।বিলের পানিতে ডুইবা থাখলে তারা শান্তি পাইবো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেখা যায়
পশুপাখিদের কথা ভেবে অনেকে অনেক ভাবে কাজ করছে।কেউ রাস্তায় পড়ে থাকা কুকুরগুলোর জন্য বিভিন্ন পিলারে পানির পাত্র বেঁধে রাখছে,সে পাত্র থেকে কুকুর ডগডগে পানি গিলছে।আবার কেউ কেউ বাসা-বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দায় বিভিন্ন পাখির জন্য বল পুরিয়ে পানির ব্যবস্থা করে রেখেছে;সেখানেও দেখা যায় শালিক,চড়ুই পাখা মেলে তাদের মনের আনন্দে গোসল করছে!এ কাজগুলোর মাধ্যমে তারা সকলের প্রশংসা কুড়িয়ে নিচ্ছে।

পরিবেশবাদী জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত মতিন সৈকত বলেন,মানুষ জীববৈচিত্র্যের উপর নির্ভরশীল।মানুষ বাঁচতে হলে অবশ্যই আমাদের জীববৈচিত্রকে বাঁচাতে হবে।সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টিজগতে সে প্রক্রিয়াতেই তৈরি করেছেন।তাছাড়া আমাদের বিপদ আমরাই ডেকে আনছি। খাল-বিল,নদী-নালা,পুকুর ভরাট করার উৎসবে আমরা উদ্বেলিত হয়ে উঠছি;কেউ বাধা দিচ্ছিনা।এ চুপ থাকার কারণেই আমাদের পরিবেশ আরো ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।

বৃক্ষ নিয়ে কাজ করা ডা. আবু নাঈম জানান,এ গরমের জন্য বড় দায়ী হচ্ছে গাছ কাটা;প্রথম করণীয় হচ্ছে আমাদের গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। কারণ গরমে আমরা বিশ্রাম নিতে বাসায় থাকি,পাখা চালিয়ে বাতাস গ্রহণ করি। কিন্তু এ পশু-পাখিরা সে তুলনায় অসহায়।গাছ কেটে পাখিদের আশ্রয়স্থল ধ্বংস করা হচ্ছে।গোসলের জন্য পানি পাচ্ছেনা,পুকুর, নদী,খাল ভরাটের মাধ্যমে আমাদের পানির উৎস দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।এর পুরো প্রভাব পড়ছে অসহায় পশু-পাখির উপর।