দখলে ও দূষণে ধুঁকছে অদের খাল

সেচ সংকটে পাঁচ উপজেলার ৬০গ্রামের কৃষক
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
অদের খাল। কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঁচ উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অযত্ন,দখল ও দূষণে ধুঁকছে খালটি। খালে পানি না থাকায় সেচ সংকটে পড়ছেন ৬০-৭০গ্রামের কৃষক। উপজেলা গুলো হচ্ছে,কুমিল্লার মুরাদনগর ও হোমনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর,কসবা ও বাঞ্ছারামপুর। খালটি পুন:খনন ও দখল মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।


স্থানীয় সূত্র জানায়,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর, কসবা ও কুমিল্লার মুরাদনগর এই তিন উপজেলার সংযোগ স্থল নবীনগরের লাউরফতেহপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকল্প। এখান থেকে পশ্চিম দিকে বয়ে যাওয়া স্রোতধারার নাম অদের খাল। যা নবীনগর উপজেলা ও মুরাদনগর দুই উপজেলাকে বিভক্ত করে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বাঞ্ছারামপুরের ফরদাবাদ হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে।
সরেজমিন মুরাদনগর উপজেলার গাজীর হাট বাজার ও পাশের নবীনগর উপজেলার মালাই বাঙ্গরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দুই বাজারের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে অদের খাল। দুই বাজারকে সংযুক্ত করেছে খালের উপরের একটি ব্রিজ। ব্রিজের নিচে বাজারের আবর্জনা ফেলে খালের গতিপথ প্রায় বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া দুই পাশে খালের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন। এমন দখল ও দূষণের চিত্র রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় খালের পেট পলিতে ভরে গেছে। রাজাবাড়িসহ কয়েকটি স্থানে ব্যক্তি উদ্যোগে নিচু বেইলি সেতু নির্মাণের কারণে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।


কসবা এলাকার লেখক শাহনুর আলম তার এক লেখায় লেখেন, এ খালে জোয়ারভাটা হত। বর্ষাকালে হাজারো পাল তোলা, দাঁড়টানা আর লগি-বৈঠা বাওয়া নৌকার প্রধান রাস্তা ছিল এটি। দুই তীরবর্তী কৃষি জমিতে সেচ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এক সময় এই খালের পানিতে ভেসে যেত নানান প্রজাতির মাছ। মাঝি মাল্লাদের হাঁকডাক আর সুরের ও বেসুরের গানও শোনা যেত। প্রভাবশালীরা খাল দখল করে দোকান ঘর, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় খালটির সৌন্দর্য দিন দিন বিনষ্ট হচ্ছে।
লাউরফতেহপুর এলাকার কৃষক জামাল হোসেন বলেন,ফাগুন মাস পর্যন্ত পানি থাকে। তারপরে এই খালে পানি থাকে না। আমরা পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়।


সামাজিক সংগঠন ঐতিহ্য কুমিল্লার সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, এই খালের রাজাবাড়ি অংশসহ কয়েকটি স্থানে ব্যক্তি উদ্যোগে নিচু বেইলি সেতুর কারণে দুই বছর যাবৎ নৌযান চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। সেতুটি অপসারণের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিত অবহিত করেন রাজাবাড়ি গ্রামের আবদুল হকের ছেলে শাহাদাৎ হোসেন রুমি।
কসবা উপজেলার বাদৈর গ্রামের বাসিন্দা উপ-সচিব ড.সফিকুল ইসলাম বলেন,আমার গ্রাম ও পাশে নানার গ্রাম বল্লভপুরের পাশ দিয়ে অদের খাল প্রবাহিত হয়েছে। এই খালকে ঘিরেই ছিলো আমার এলাকার তৎকালীন প্রজন্মের রঙিন শৈশব। খালে সাঁতার কাটা,মাছ ধরা ও হৈ-হুল্লোড় এখনও চোখে ভাসে। এই খাল দিয়ে নৌকা যোগে কুটি চৌমুহনী বাজারে যেতাম। এখন সেই জলপথ নেই। নেই পানি,নেই দেশি মাছ। এখন সব বিবর্ণ।
বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) কুমিল্লা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন,কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ শেষের পথে। এই প্রকল্প এলাকায় আরো এক হাজার কিলোমিটার খাল খননের আবেদন রয়েছে। নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে অদের খাল খননের চেষ্টা করবো।