দান করলেন কিডনি ৫৬বার রক্ত,দিবেন দুই চোখও
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
জীবিত অবস্থায় বাম কিডনি দান করেছেন। রক্ত দিয়েছেন ৫৬বার। নিজের দুটি চোখও মরণোত্তর দান করেছেন। তার মৃত্যুর পর অন্ধ কল্যাণ সমিতি চোখ নিয়ে যাবে জীবিত মানুষের দৃষ্টিশক্তি তৈরির জন্য। তিনি কুমিল্লা নগরীর নতুন চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম মুন্না। পেশায় ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। বয়স ৪১বছর। মৃত আহসানুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেগমের মুন্না একমাত্র ছেলে। নগরীর রানীর বাজারের ফজলুল হকের ছেলে নাজমুল হাসান সুমনকে (২৫) কিডনি দান করেন মুন্না। সুমন কুমিল্লা সরকারি কলেজ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছেন। তার এ দানে মুগ্ধ বন্ধু ও প্রতিবেশীরা।
মুন্না জানান, সুমন তার বন্ধু রনির শ্যালক। সুমনের বাবাকেও মুন্না রক্ত দিয়েছিলেন। এক সময় জানতে পারেন সুমনের দুটি কিডনি নষ্ট। সুমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। তাকে দেখে মায়া লেগে যায়। মুন্না তাকে একটি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাকি শুধু মাকে রাজি করানো। এক ছেলে বলে প্রথমে তিনি রাজি হচ্ছিলেন না। ২০১৫ সালের মার্চে দিল্লির পুষ্পিতা সিংহানিয়া হসপিটালে তার কিডনি নিয়ে সুমনের দেহে সংযোজন করা হয়। মুন্নাকে এ দানের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেন জাকির হোসেন নামের একজন সাইকেল মিস্ত্রি। তিনি কুমিল্লা জিলা স্কুলের দ্বিতীয় গেটে বসতেন। সেখানে মুন্না আড্ডা দিতে এসে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। জাকির হোসেন অনেকের জীবন পাল্টিয়ে দিয়েছেন বলে মুন্নার দাবি। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন।
মুন্না আরো বলেন,কিডনি দেয়ার পর আমার কোন সমস্যা হয়নি। অন্যরাও এগিয়ে এলে আরো অনেক মানুষ বেঁচে যাবেন।
কিডনি গ্রহীতা নাজমুল হাসান সুমন বলেন, দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। অন্য সবার মতো তিনি হেসেখেলে বড় হচ্ছেন। ২০১৪সালের শেষ দিকে তার সমস্যা ধরা পড়ে। মুন্না তার জীবনে ফেরেশতা হিসেবে এসেছেন। তাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। তিনি মুন্নার কাছে কৃতজ্ঞ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি মুন্নার জন্য দোয়া করবেন। তিনি বলেন, এখন একটি স্কুলে পড়ান। প্রথম দিকে মনোবল কম ছিলো,এখন সামলে নিয়েছেন। স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। আশা করছেন দেশের বাইরে গিয়ে আরো লেখাপড়া করবেন।
মুন্নার মা আনোয়ারা বেগম বলেন,আমার দুই ছেলের মধ্যে একজন মারা যায়। তাদের বাবাও মারা যান। মুন্না পরিবারের একমাত্র আয় করা মানুষ। তাই প্রথমে সায় দেইনি। পরে যখন দেখলাম তার দান করা কিডনিতে আরেকজন বেঁচে আছেন,তখন ভালোই লাগে। আপনার তার জন্য দোয়া করবেন।
মুন্নার প্রতিবেশী সিটি কাউন্সিলর জমীর উদ্দিন খান জম্পি বলেন, এখন অনেকে কিডনি বিক্রি করেন। আমিও মুন্নার ক্ষেত্রে প্রথমে তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখলাম তিনি সত্যিকারের দাতা। তার অন্তরে মানুষের জন্য গভীর মমতা রয়েছে। তিনি বিপদে ছুটে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান। তার কিডনি, রক্ত ও চক্ষু দান আমার দেখা এক অসাধারণ ঘটনা। এমন আলোকিত মানুষের সংখ্যা আমাদের সমাজে আরো বাড়ুক।