দারিদ্র্য বিমোচনে বঙ্গবন্ধুর অবদান

 

৭০-এর নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের সংখ্যাগষ্ঠিতাঃ ১৯৭০ সালে সমগ্র পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন বিজয়ী হলেও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করেন।

স্বাধীনতা ঘোষণা: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ একটি জাতির জনগোষ্ঠির মুক্তির কালজয়ী সৃষ্টি, এক মহাকাব্য। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে জাতির জনক ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম জয় বাংলা”। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগ মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলে।

মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু: স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার অপরাধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাত ১:৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২নং বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে সেনানিবাসে নিয়ে যায়। ২৬ মার্চ গভীর রাতে তাঁকে বন্দী অবস্থায় পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়। ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরে মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ ঢাকায় পৌছালে তাঁকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধণা জ্ঞাপন করা হয়। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

কর্মজীবন: ৩ বৎসর ৭ মাস ৩ দিনের শাসনামলে তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন উন্নতির শিখরে। কৃষি, শিক্ষা, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, নারীদের কল্যাণ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক, সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

দারিদ্র্য বিমোচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান: ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূ-খন্ডে স্বপ্ন দেখতেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই স্বপ্ন অর্জনের পেছনেই ছিল তাঁর আজীবনের সংগ্রাম। এই স্বপ্নকে লালন করেই তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রামে। একটি স্বাধীন দেশ বাংলার মানুষকে উপহার দিয়ে গেছেন। এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করাই ছিল তাঁর সারা জীবনের প্রচেষ্টা। কাউকে পেছনে ফেলে, কাউকে অর্থনৈতিক মূল স্রোতধারার বাইরে রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা নয়। এ নীতিতেই প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি তিনি সাজিয়েছিলেন। এ দেশের মানুষকে বৈষম্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে। তিনি তার কাজটি শেষ করে যেতে পারেননি। তাঁর সেই গুরুভারই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ দারিদ্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্য নিরসনের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত মিলছে বিশ্বজুড়ে। দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে যেসব দেশ তার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ তালিকায়।

জাতির জনক স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজন্ম লালিত স্বপ্ন দারিদ্র বিমোচন ও সোনার বাংলা গড়া। ১৯৭০ সালে এ দেশে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এবং ১৯৭১ সালে যুদ্ধের ফলে এ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ে। ফলে বছর শেষ হতেই হাজার হাজার বাঙ্গালী পাকিস্তান থেকে আসতে শুরু করে। ১৯৭৩ সালে কৃষি, নগর অবকাঠামো ও কুটির শিল্পের উপর রাষ্ট্রীয় তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। এভাবেই বঙ্গবন্ধু পল্লী দারিদ্র্য বিমোচনের পালিত স্বপ্নের শুভ সূচনা হয়। তিনি সর্বদা মনে করতেন দেশের উন্নয়নের মূল শক্তিই হলো পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন।

বিশ্বে তথা বাংলাদেশে জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের পথিকৃত সংগঠন হিসেবে নি:সন্দেহে স্বীকৃতির দাবিদার ক্ষুদ কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্য অঙ্গীকার নিয়ে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে যিনি এগিয়ে এসেছিলেন তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাস ও সময়ের নিরিখে যথাযথ ও নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করলে এ জ্ব্যাজ্বল্যমান সত্য প্রমাণিত হবে যে, বাংলাদেশ তথা বিশ্বে জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের পথিকৃত সংগঠন “ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)”। পথিকৃত হচ্ছেন বাংলাদেশের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর এ মহতি প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের সাথে জড়িয়ে আছে বিশ্ব কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও)। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), ময়মনসিংহ এবং পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ), বগুড়া পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি।

উপসংহার: ১৯৭৫ সালে দেশের সেনাবাহিনীর বিপথগামী সদস্য বঙ্গবন্ধুকে ঢাকায় তাঁর ধানমন্ডির বাসায় স্বপরিবারে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু রয়েছে তাঁর স্বপ্নাদেশ। তিনি গণতন্ত্রের মাধ্যমে যে সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন সে স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের সকলের।

মো: জাকিউল ইসলাম
উপজেলা ব্যবস্থাপক
ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)
উপজেলা কার্যালয়, মিঠামইন, কিশোরগঞ্জ