ধর্মসাগর পাড়ে হেমন্তের হামাগুড়ি!

ইলিয়াছ হোসাইন।।
ধর্মসাগর। কুমিল্লার নগরকেন্দ্রিক একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র। যদিও এখানে নীল জলের ঢেউ দেখা যায় না,তবুও বড়সর জলাশয়টি সাগর হিসেবেই খ্যাত। নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতার চাপ কাটাতে বুক ভরে শ্বাস নেবার সবুজ একটি স্পট এটি। কার্তিককে বিদায় দিয়ে অগ্রহায়ণের উষ্ণরঙ যেনো ছুঁয়ে পড়ছে সাগরের কোলে। হেমন্তের সকালের আলো ফুটতেই দেখা যায় জলের উপর চাকচিক্যময় রূপ। বিভিন্ন ঋতুতে ধর্মসাগরের বৈচিত্রতা ফুটে উঠে ভিন্ন ভিন্ন রূপে। শরতে মিলে জলের উপর নীল ছায়া,বর্ষায় বৃষ্টির টুপটাপ ছন্দ,হেমন্তে গৌধূলীর উপচে পড়া রঙের প্রতিচ্ছবি। শীতে দেখা যায় ভরাট সূর্যের ভোরের সংলাপ। পাখির কলকাকলি,মানুষের আনাগোনা। গ্রীষ্মের হাওয়ায় ব্যাকুল করে চাঁপাফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে অনেক ভ্রমণ পিপাসু ছুটে আসেন ধর্মসাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। পরিবার ও প্রিয়জনদের বাড়তি আনন্দের জন্য এখানে রয়েছে ভাড়ায় চালিত ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। দুপুরের মিষ্টি রোদে প্রিয়জনের সাথে সময় কাটোনোর মুহূর্ত যেনো হৃদয়ে যুগলদের প্রাণে দোলা দেয়। এখানে বিকেল গড়াতেই পাড় ঘেঁষে জমে উঠে হাজার মানুষের ভিড়। এর পূর্বপাশে অবস্থিত কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ স্টেডিয়াম,উত্তর পাড়ে অবস্থিত রাণীর কুঠি এবং কবি নজরুল ইন্সটিটিউট কেন্দ্র।
সূত্রমতে,ধর্মসাগর বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার একটি মানবসৃষ্ট জলাশয়। জলাধারটি ১৪৫৮ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা ধর্ম মাণিক্য প্রথম খনন করেছিলেন। ধর্মসাগরের আয়তন ২৩.১৮ একর। সুপেয় পানির বন্দোবস্ত করে স্থানীয় বাসস্থানের সুবিধার্থে ‘ধর্মসাগর’ খনন হয়। এটি বাংলাদেশের নগর জল ঐতিহ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। খননের পর থেকে, জলাশয়টি শহরের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

inside post

ফেনী থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী আবু ইসহাক বলেন,আমি এ প্রথম এসেছি ধর্মসাগর দেখতে। এর আগে ধর্মসাগরের কথা শুনেছি। সবুজে মোড়ানো সাগরপাড় সত্যিই অনেক সুন্দর। আমি নৌকায় চড়েছি। সবকিছু মিলিয়ে একদিনের ভ্রমণের জন্য ধর্মসাগর ভালো একটি পরিবেশ।

নগরীর বজ্রপুর থেকে আসা কানিজ রোকসানা জেনি বলেন,পরিবার নিয়ে প্রায় আসি ধর্মসাগর পাড়ে। শহরের যান্ত্রিকতা কাটাতে ধর্মসাগর সপ্তাহে অন্তত একদিন না আসলে যেনো জীবন হাঁপিয়ে উঠে। এখানকার শান্ত পরিবেশ বেশ মনোমুগ্ধকর। বিশেষ করে সকাল এবং বিকেলের সময়টা।
কবি নজরুল ইন্সটিটিউট কেন্দ্র কুমিল্লা’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.আল-আমিন জানান,নজরুল ইন্সটিউটের ঘাটে বসলেই দেখা যায় ধর্মসাগরের অনন্য রূপ। এটিকে নগর মানুষের প্রাণই বলা যায়। এর সবুজ প্রকৃতি আরো বেড়ে উঠুক। সাগরের সৌন্দর্য বর্ধনের মূল বিষয়টি হচ্ছে জল ও চারপাশের গাছ। এ উপাদানগুলোকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবেনা। জলের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে চারপাশের গাছগুলোকে ভালোভাবে পরিচর্যা করার মাধ্যমে ধর্মসাগরের রূপবৈচিত্রকে টিকিয়ে রাখতে আরো উদ্যোগ নিতে হবে।

আরো পড়ুন