নগরীর পথে পথে মুক্তির উল্লাস

 

ইলিয়াস হোসাইন।।
৫আগস্ট ২০২৪। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। চারদিকে থমথমে অবস্থা। দেশের কি হচ্ছে! টেলিভিশনের পর্দায় ১৮কোটি জনতার চোখ মার্চ টু ঢাকায়। ছাত্রদের দমিয়ে রাখতে আইনশৃংখলা বাহিনী ব্যর্থ। তখন পর্যন্ত গণভবণ ছাত্র জনতার দখলে। চিত্রে দেখা গেলো হেলিকপ্টার করে শেখ হাসিনা এবং তার বোন দেশ থেকে পালাচ্ছে। গলা ফাটিয়ে সারাদেশ চিৎকার করে উঠলো। পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড লাল-সবুজের পতাকা হাতে বিজয় মিছিল নিয়ে বের হয়েছে ছাত্র ও সাধারণ জনগণ। কারো মুখে বিজয়ের শ্লোগান। কারো চোখে ঝরছে আনন্দ অশ্রু।
এ যেনো মুক্তির কান্না। সে চিত্র ধারণ করতে ফুটওভার ব্রিজের ওপরে দাঁড়িয়ে। বিশ্বরোড এলাকা কাভার করছি। হাজারো মানুষের স্রোত। যেনো ফুটওভার ব্রিজ আনন্দে ভেঙে পড়বে।
রামঘাটলা,মুন্সেফ বাড়ি দাউদাউ জ্বলছে। জনতার ক্ষোভে পুড়ে ছাই কুমিল্লার সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি বাহার উদ্দিন বাহার এমপির দু’তলা বাস ভবন। একসময় যার নাম মুখে নিতেও মানুষ ভয় পেতো। রামঘাটলার আওয়ামী লীগ অফিস ভেঙে চুরমার। আগুনের অগ্নি শিখা থেকে বেরোচ্ছে ক্ষোভের শ্লোগান।
পূবালী চত্বর,জিলাস্কুলের কানায় কানায় ছাত্রদের বিজয় উল্লাস। মুক্তির শ্লোগান নিয়ে সাথে যোগ হয়েছে আপামর জনতা। এ যেনো আরেক একাত্তর,বাঙালী জাতির আরকেটি ১৬ডিসেম্বর। না বলতে পারা চাপানো কথা চিৎকার করে বলছে।
মাথায় লাল ফিতা বাঁধা চাঁদপুর থেকে আসা একজন বললো,গায়ের ছেঁড়া গেঞ্জিটা পরেই সকালে বিশ্বরোড এসেছি,গাড়ি পাইনি তাই ঢাকা যেতে পারিনি। আনন্দ লাগছে। যেনো বিশাল বড় পাথর বুকের ওপর থেকে সরে গেছে। হালকা লাগছে,মুক্ত লাগছে।
পতাকা উড়াতে উড়াতে এক ছাত্র বললেন- আমরা ছাত্ররা জয়ী হয়েছি। রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার সরকারকে আমরা পতন করেছি। দেশকে আবারো মুক্ত করেছি। আমরা খুব খুশি। আর কিছু চাইনা আমরা।
বিএনপির সমর্থিত একজন চিৎকার করে বললো, ভাই অনেক দিনপর ঘুমাবো। খালে,বিলে,ফসলি জমিতে কত রাত পার করেছি। আমার নামে অনেক মিথ্যে মামলা ছিলো। ১৫টি বছর ঘুমাতে পারিনি। আজ দেশ থেকে বৈষম্য দূর হলো। মানুষ মুক্তি পেলো। ছাত্রদের রক্তে আজ আমরা স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পেলাম।
শত শত সিএনজি অটো রিকশা, ট্রাকে বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ আনন্দ মিছিল নিয়ে বিশ্বরোড জমায়েত হচ্ছে। এর ফাঁকে বহু দোকান পাঠ ভাঙচুর। সারাদেশে কয়েক ঘন্টায় হামলা-ভাঙ্গচুরেরও রূপ নিলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে এর বিরুদ্ধে লেখালেখি করলো অনেকে। সবাই নিউজফিডে শান্তির বার্তা ছড়ালো।

সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে মুসলমানরা হিন্দু ধর্মালম্বীদের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব নিলো। পাড়ায় পাড়ায় পাহারা। কারো চোখে ঘুম নেই। কুমিল্লার প্রতিটি মন্দির পাহারা দিচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্র,শিক্ষক,এবং মুসলমানরা। নির্ঘুম রাত। রাত পোহাবার কতো দেরি পাঞ্জেরী।
এলাকায় এলাকায় মিষ্টি বিতরণ। চা দোকানের জমানো আড্ডার বিষয়বস্তু কে হবে নতুন সরকার। কে হবে জনগণের সরকার। ছাত্র সমন্বয়কেরা অন্তবর্তীকালীন সরকার রূপ গঠন করলেন। রাষ্ট্রপতি,তিন সেনাপ্রধানসহ বৈঠকে প্রস্তাব করলেন,প্রস্থাব গ্রহণ করা হলো। সিদ্ধান্ত হলো নতুন সরকার প্রধান নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
লেখক:অফিস রিপোর্টার,সাপ্তাহিক আমোদ।