নাঙ্গলকোটে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত সাব্বিরের মৃত্যু

 

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে খেলনা বেলুন ফুলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত আল শাহরিয়ার হোসেন সাব্বির (১৪) মারা গেছেন। ১৬ দিন পর শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আই সি ইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় সে মারা যায়। মৃত্যুর আগে সাব্বির তার মাকে বলে যায়- ‘আমার যদি কিছু হয়ে যায়। তখন আল্লাহর নিকট বলবেন আলহামদুলিল্লাহ।’

রবিবার সকাল ৮টায় তার নানার বাড়ি উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউপির শ্যামেরখিল হাফিজিয়া নুরানী মাদ্রাসা মাঠে প্রথম নামাজে জানাযা ও সকাল ১১টায় মালিপাড়া রুস্তম ডাক্তার বাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ২য় নামাজের জানাযা শেষে মসজিদের পাশের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাব্বির কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসন্তপুর দারুল নুরানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতেন। মাদ্রাসায় কুরআন শরীফ হাফেজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সাব্বির মাদ্রাসা থেকে ছুটিতে এসে নাঙ্গলকোটের পশ্চিমবামপাড়া গ্রামের তার ফুপু নার্গিস বেগমের বাড়িতে বেড়াতে যান। গত ১৩ জানুয়ারি বিকেলে ফুপুর বাড়ি থেকে বেলুন ক্রয় করতে পাশ্ববর্তী বিরুলী গ্রামের আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে যায়য়। সেকানে গিয়ে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন।

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সাব্বিরের ডান পা ভেঙ্গে যায়। পুরুষাঙ্গ থেকে নিচের অংশ, মুখ, চোখ, ডান হাত এবং শ্বাসনালী পুড়ে যায়। তাকে ১৫ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে।
সাব্বিরের বাবা নাঙ্গলকোটের মালিপাড়া গ্রামের সালাউদ্দিন জানান, ৪ বছর আগে সাব্বিরের মা খালেদা বেগমের সাথে তার ডিভোর্স হয়। তিনি এখন আলাদা সংসার করছেন। তবে খালেদা বেগম আর অন্যত্র বিয়ে করেননি।

সাব্বির মত্যুর ছয়দিন পূর্বে তার মা খালেদা আক্তারকে বলেন, আম্মু যা হওয়ার হয়েছে। আপনি দুঃখ করবেন না। আমার যদি কিছু হয়ে যায়। তখন আল্লাহর নিকট বলবেন আলহামদুলিল্লাহ। আর আয়াতুল কুরসি সুরা পড়বেন। আমার সামনে আল্লাহর তরফ থেকে কুরআন শরীফ আছে। আমি কুরআন শরীফ পড়ছি। আমার মৃত্যু হলে, আমাকে যেন কাটা ছেঁড়া করা না হয়। তার মা খালেদা আক্তার বলেন, পোড়া ক্ষত নিয়ে তাকে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হলেও সাব্বির হাসি-মুখে মৃত্যুকে বরণ করে নেয়। সাব্বিরের কথা মত ময়নাতদন্ত ছাড়া তার লাশ দাফন করা হয়।

সাব্বিরকে হারিয়ে তার মা খালেদা আক্তার, বাবা সালাউদ্দিন, নানী পারুল বেগম, মামা আবদুল ওহাব, মেহেদি হাছান, আলাউদ্দিনসহ আত্মীয় স্বজনের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মা খালেদা আক্তার ছেলেকে হারিয়ে কান্নাকাটি করতে-করতে বার-বার মুর্ছা যাচ্ছেন। সাব্বিরের বড় ভাই সায়মন ইসলাম (১৬) মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা মাদ্রাসাতুল মানার মাদ্রাসায় ৯ম শ্রেণীতে লেখাপাড় করেন। ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম (৬) রয়েছে।