নাসিরনগরে জেলেপল্লীতে উত্তেজনা, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
প্রায় হাজার একর আয়তনের ‘হুরল বিল’ ফিসারী জলমহালের ইজারা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে জেলেপল্লীতে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন মুখোমুখি অবস্থানে। হয়েছে দ্রুত বিচার আইনে মামলাও।সর্বশেষ বিলের ইজারা নিয়ে হয়েছে বিক্ষোভ-মানববন্ধন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, জেলা প্রশাসন আমাদের লিজের ৮২৮ একর জলাশয় বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় ছোয়াব মিয়া ও তার লোকজন বিলে আমাদের মাছ ধরতে দেয় না। বিলে থাকা আমাদের ঘর ও মাছ ধরার জাল পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা পরিবার নিয়ে আতঙ্কে আছি।’ সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ চন্দ্র দাসের অভিযোগ, ‘এই বিলে মাছ ধরতে না পারি তাহলে আমাদের কয়েক হাজার পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদের বাপ-দাদার পেশা মাছ ধরা। সেই পেশা যদি না থাকে তাহলে এদেশে কেমনে থাকুম?’ এদিকে অভিযুক্ত ছোয়াব মিয়া জানান, ‘আমাদের ব্যক্তি মালিকানা জায়গা দখল করে মাছ শিকার করছে তারা। বাঁধা দিলে উল্টো আমাদের ফাঁসানোর হুমকি দেয়। তারা নিজেরাই নিজেদের ঘর ও কিছু পুরনো জাল পুড়িয়ে আমাদের উপর দায় চাপাতে এই নাটক সাজিয়েছে। পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।’
নাসিরনগর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কাজী রবিউল সারোয়ার বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘জেলা প্রশাসন প্রায় ৮২৮ একর জলমহাল তিন বছরের জন্য ইজারা দিয়েছে। এর মধ্যে সামান্য কিছু জায়গা ব্যক্তিমালিকানার আছে। তবে উভয় পক্ষকে নিয়ে একাধিকবার বসেছি। কিন্তু কোনো পক্ষই ছাড় না দেওয়া সমাধান হয়নি।’ নাসিরনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. আব্দুল কাদের বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জেলেরা আদালতে একটি মামলা করেছে। তদন্ত করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা যেন বিনষ্ট না হয় সে বিষয়ে আমরা সজাগ আছি।’ নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরানুল হক ভূইয়া জানান, ‘ঘর ও জাল পুড়িয়ে দেয়ার কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ও পূর্বভাগ ইউনিয়নে ২৮ একর আয়তনের বিল ‘হুরল’ ফিসারী জলমহালের ইজারা নিয়ে জেলেপল্লীতে উত্তেজনা বিরাজমান। এ নিয়ে স্থানীয় জেলেপল্লীর লোকজন ও অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।জেলেপল্লীর বাসিন্দাদের দাবি, সরকার থেকে ন্যায্য মূল্যে ইজারা নিয়ে তারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন।চলতি ১৪৩১ বাংলা সনের ১লা বৈশাখ থেকে ১৪৩৬ সনের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত প্রতি বছর ছয় লাখ ৪৮ হাজার ১১৫ টাকা মূল্য পরিশোধের শর্তে ‘জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’ তিন বছরের জন্য ইজারা নেয়।স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের ছোয়াব মিয়ার নেতৃত্বে কিছু লোক রাতের আঁধারে বিলে থাকা জেলেদের ঘর ও মাছ ধরার জাল পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে ২৭ জনকে আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।