পথের পাশে ক্ষুধার্তের জন্য খাবার

মোঃ রফিকুল ইসলাম সোহেল।।
মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক পরিবেশে মানুষের বসবাস। এখানে মানুষ প্রাকৃতির সহায়তা পায়। প্রতিদিনের চলার পথে সৃষ্টি করে নানা সম্পর্ক। পরবর্তীতে এই সম্পর্কগুলো ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে সহজিকরণের পাশাপাশি তৈরি করে মসৃণ চলার পথ। যে পথ ধরে ব্যক্তি এগিয়ে যায় তার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের দিকে। কিন্তু সমাজের সবাই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারে না। লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। কেউ এগিয়ে যায় কেউ পিছিয়ে পড়ে। ব্যবধানে এগিয়ে থাকা কিছু কিছু ব্যক্তির মধ্যে তাড়না সৃষ্টি হয়। তাঁরা আগ্রহী হন পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে থাকতে, তাদের মুখে হাসি ফুটাতে এবং তাদের এগিয়ে নিতে। আর ব্যক্তির এই চাওয়া থেকে সৃষ্টি হয় ব্যক্তির দায়বদ্ধতা এবং এর পরবর্তী রুপান্তর হলো সামাজিক দায়বদ্ধতা। সামাজিক দায়বদ্ধতা একটি মানবিক মূল্যবোধ। সমাজে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন নানাভাবে ভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যে সমাজের সামাজিক দায়বদ্ধতার অনুশীলন বেশি সে সমাজ তত বেশি আলোকিত ও অনুকরণীয়। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত বজ্রপুর, পথিকৃৎ কুমিল্লার একটি ঐতিহাসিক জনপদ। এই এলাকার সংগঠন- “আলোকিত বজ্রপুর “ এর মানবিক কর্মকান্ডে যুক্ত হলো আরও নতুন একটি অধ্যায়- ‘মানবিতার ফুড ব্যাংক’।
‘যার আছে দিবে,যার প্রয়োজন নিবে’- এই প্রত্যয়কে সামনে রেখে গত ১৭ মে, ২০২৪ সন্ধ্যায় বজ্রপুরের ইউছুফ হাই স্কুল রোডে উদ্বোধন হয়ে গেলো মানবিক ফুড ব্যাংকের নতুন ধারণাটির। সাথে আছে তৃষ্ণার্ত পথচারীদের জন্য বিশুদ্ধ সুপেয় পানি পানের ব্যবস্থা।

“আলোকিত বজ্রপুর “এর প্রধান সমন্বয়কারী জনাব মাসুদ রানা চৌধুরী, নাট্যগুরু শাহজাহান চৌধুরী, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক জনাব বদরুল হুদা জেনু, কবিতার সুলতান সৈয়দ আহমাদ তারেক, নগরের ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জিয়াউল হক মুন্না, নগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু, সাবেক ব্যাংকার হরিপদ ঘোষ, প্যানেল মেয়র ও ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর প্রতিনিধি কাজী সুজনসহ এলাকার শিশু, কিশোর, নবীন ও প্রবীণ সকলকে সাথে নিয়ে ফিতা কেটে ফুড ব্যাংকটির উদ্বোধন করেন প্রয়াত অ্যাডভোকেট জনাব আব্দুল মতিনের সহধর্মিনী নাজমা ইয়াসমিন। “আলোকিত বজ্রপুর “ সবসময়ই সিনিয়র সিটিজেনদের সম্মানিত করে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শিশু ও কিশোরদের আনন্দঘন উপস্থিতি প্রমাণ করে নবীণ আর প্রবীণের মেলবন্ধনে “আলোকিত বজ্রপুর “ কতটা সফল।

‘মানবতার ফুড ব্যাংক’ হলো সামাজিক সুরক্ষার একটি নতুন ধারণা। এটির উদ্দেশ্য হলো ক্ষুধার্তদের খাবারের সাময়িক চাহিদা মিটানো এবং তাদের মুখে হাসি ফুটানো। এ ধারণাটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের মধ্যে মূল্যবোধ ও মানবিকতাবোধের জাগরণ ঘটিয়ে মানবতার ফুড ব্যাংককে সচল রাখতে পারলে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে যে ব্যবধান তা কিছুটা কমিয়ে এনে ভারসাম্য সৃষ্টি করা যাবে। ‘আলোকিত বজ্রপুর’ এর প্রধান সমন্বয়কারী জনাব মাসুদ রানা চৌধুরী যিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হয়েও নিজ এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তৈরি করেছেন সামাজিক সংগঠন ”আলোকিত বজ্রপুর“। এই কাজে তিনি পাশে পেয়েছেন ইতিহাসবিদ আহসানুল কবীর, হুইলচেয়ার সারভাইভর মোঃ রফিকুল ইসলাম সোহেল, তরুণ উদ্যোক্তা রুবেল পাল ও ব্যাংকার হাসিবুল হাসান সুমনসহ এলাকার একঝাঁক তরুণ প্রজন্মকে। মানবতার ফুড ব্যাংকের উদ্বোধক প্রবীণ মহীয়সী নারী নাজমা ইয়াসমিন তার বাড়ির দেয়ালটি সংস্কার করে মানবতার ফুড ব্যাংকের জন্য ব্যবহার অনুমতি দেন। এতে প্রমাণিত হলো “আলোকিত বজ্রপুর” সামাজিক জাগরণে এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্পৃক্ত করতে পেরেছে।
আলোকিত বজ্রপুর তাদের সকল কার্যক্রমের সাথে ভিন্ন ভিন্ন এলাকাকেও সম্পৃক্ত করে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। পুরাতন চৌধরী পাড়া,দারোগা বাড়ি, ঠাকুরপাড়া, ঝাউতলা, ধর্মসাগর পাড়, হযরত পাড়া, সাহাপাড়া, অশোকতলা, দক্ষিণ চর্থা, আড়াইওড়া, কোটবাড়ি, বিশ্বরোড, চকবাজার, পুলিশ লাইন, বানাশুয়া, এলাকা থেকে যারা এসেছেন তারা পুরো আয়োজনটি উপভোগ করেছেন। বক্তব্যর মাধ্যমে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ‘মানবতার ফুড ব্যাংক’- ধারণাটির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন- নতুন উদ্ভাবনী ধারণাটি তাদের কাছে নতুন একটি অভিজ্ঞতা। ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাবারের ধারণাটি মানবিক মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করবে।
“আলোকিত বজ্রপুর” বিশ্বাস করে যারা এই আয়োজনটির অংশী হয়েছে তাদের মনোজগতের মধ্যে সামাজিক জাগরণের একটি বীজ বপিত হয়েছে এবং এই নতুন ধারণাটি এলাকা থেকে এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। আগামী প্রজন্ম পাবে প্রাণের উচ্ছাস। গড়ে উঠবে আলোকিত ও মানবিক সমাজ। আমরা বিশ্বাস করি পুরো বজ্রপুর একটি পরিবার। সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।
জয়তু ‘আলোকিত বজ্রপুর’।
লেখক:হুইল চেয়ার সারভাইভর ও সংগঠক।