পবিত্র আশুরা; সত্যের বিজয়- মিথ্যার পরাজয়

inside post
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।। 
          পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ও ঐতিহাসিক এবং  ঘটনাবহুল   ১০ মহররম পবিত্র আশুরা । এ দিবসে হযরত ইমাম হোসাইন( রাঃ) কারবালায়  প্রান্তরে  অন্যায়, অবিচার, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের জন্য রণাঙ্গনে অকুতোভয় লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি অসত্য, অধর্ম ও অন্যায়ের কাছে মাথানত করেনি। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে সপরিবারে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য তাঁর এ বিশাল আত্নত্যাগ ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার মুসলিম উম্মাহর জন্য এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাই সব  অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে; সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্টায় আশুরা মহান শিক্ষা জাতীয় জীবনে প্রতিফলন ঘটানো আমাদের উচিত। কারবালার ঘটনা থেকে মানব জাতির জন্য যে শিক্ষা রয়েছে তা হচ্ছে,হযরত ইমাম হোসাইন ( রাঃ) জীবন উৎসর্গ করেছেন- তবু ন্যায়নীতির প্রশ্নে আপস করেনি। খিলাফতকে রাজতন্ত্র  ও স্বৈরতন্ত্রে রুপান্তরে ইয়াজিদের ক্ষমতা দখলের চক্রান্তের প্রতি আনুগত্য স্বীকার না করে তিনি প্রত্যক্ষ সংগ্রামে  অবর্তীন হয়ে কারবালা প্রান্তরে সত্য ও ন্যায়কে চির উন্নত ও  সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য  তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগের অতুলনীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন।
মুসলিম জগতে ঐতিহ্যমন্ডিত আশুরার দিবসকে অত্যাচারি ইয়াজিদ  হত্যা করে পবিত্রতাকে কলুষিত করতে চেয়েছে। কিন্তু পাষাণ হৃদয় সীমারের খঞ্জর হযরত ইমাম হোসাইন ( রাঃ) এর শিরশ্ছেদ করলেও মানুষের মহত্ত্ব, উদারতা, মহানুভবতা এবং পবিত্র ধ্যান- ধারণাকে হত্যা করতে পারেনি। কারবালার নৃশংস বর্বরতম হত্যাকান্ড ক্ষমতালোভী ইয়াজিদের উন্মত্ততার পর শত শত বছর অতিক্রম হয়েছে, কিন্তু এ বিয়োগ বেদনা মুসলমানদের শুধুই শোকে মুহ্যমান করে না বরং সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থেকে দৃঢপ্রতিজ্ঞ করে, অন্যায়কারীর প্রতি তীব্র ধিক্কার, আর আত্নত্যাগে সাহসী করে। ন্যায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ, সত্যের পথে লড়াই করে শাহাদাত বরণ বা জীবন উৎসর্গ করার অপূর্ব দৃষ্টান্তরুপে আশুরা অনাগত যুগ- যুগান্তর অনুসরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে।  পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, “আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পারো না।” ( সূরা আল- বাকারা, আয়াত-১৫৪)।
ঐতিহাসিক ১০ মহররম চিরকাল বিশ্বের নির্যাতিত, অবহেলিত এবং বঞ্চিত মানুষের প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও সোচ্চার হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাবে। পৃথিবীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে আশুরার দিবসে হযরত ইমাম হোসাইন ( রাঃ) এর শাহাদাত এক অনন্য, অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় অধ্যায়ের সৃষ্টি। কারবালার ট্র্যাজেডির বদৌলতেই ইসলাম স্বমহিমায় পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।  তাই যথার্থই বলা হয়েছে, ” ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কী বাদ” – ইসলাম জীবিত হয় প্রতি কারবালার পর।
প্রকৃতপক্ষে অন্যায়কারীর সাময়িক বিজয় ইতিহাসে কোন দিনই মর্যাদা পায়নি। জালিমের প্রতি মানুষের তীব্র ঘৃণা প্রবল এবং সত্য ও ন্যায়ের জন্য শাহাদাতবরণকারী হযরত ইমাম হোসাইন ( রাঃ) ও ইতিপূর্বে বিস প্রয়োগে শাহাদাতবরনকারী হযরত ইমাম হাসান( রাঃ) এর প্রতি মানুষের অপার শ্রদ্ধা- ভক্তি  এ দিন অপরিসীম পরিলক্ষিত হয়। সত্যের জন্য শাহাদাতবরণের এ অনন্য দৃষ্টান্ত সব আনুষ্ঠানিকতার গন্ডি ছাড়িয়ে এর অন্তর্গত ত্যাগ- তিতিক্ষার মাহাত্ম্য তুলে ধরার মধ্যেই নিহিত রয়েছে ১০ মহররমের ঐতিহাসিক তাৎপর্য।  কারবালা ছিল অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের ও রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণতন্ত্রের সংগ্রাম।
ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে  জীবন বিসর্জন দিয়ে হযরত ইমাম হোসাইন ( রাঃ)  শিখিয়ে গেলেন  স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে আপস করা চলে না। জীবনের চেয়ে সত্যের জন্য নবী- দৌহিত্রের অভূতপূর্ব আত্নত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। কারবালায় চিরন্তন সত্যের মহাবিজয় হয়েছিল এবং বাতিলের পরাজয় ঘটেছিল। সুতরাং আশুরার দিনে শুধু শোক বা মাতম নয়, প্রতিবাদের সংগ্রামী চেতনা নিয়ে হোক চির সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন লড়াই, প্রয়োজনে আত্নত্যাগ- এটাই মহররমের অন্তর্নিহিত শিক্ষা।  আশুরা দিবসে কারবালার মহান ত্যাগের শিক্ষা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অনুপ্রেরণা গ্রহণ এবং এর গুরুত্ব, মাহাত্ম্য, তাৎপর্য গভীর হৃদয়ে অনুধাবন করা। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ” ফিরে এলো আজ সেই মহররম মাহিনা/ ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না”। আসুন,  আমরা সকলে মিলে কারবালার সুমহান নীতি, আদর্শ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যায়- অবিচার, জুলুম- নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। তাহলেই কারবালার ত্যাগের যে শিক্ষা মানবজাতিকে দেখিয়েছেন, তা আজকের দুনিয়ার অন্যায় ও অবিচার দূর করতে সহায়ক হবে।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির,
সাংবাদিক, কবি ও কলামিস্ট, আওলাদ ও খাদেম হযরত শাহসূফী ফকির আবদুস সালাম (রহঃ)মাজার ও খানকা শরীফ – আনন্দপুর   এবং চেয়ারম্যান- গাউছিয়া ইসলামিক মিশন- কুমিল্লা।
ই- মেইলঃjahangirjabir5@ gmail.com
আরো পড়ুন