পানের গ্রাম চান্দিনার বরকামতা

মহিউদ্দিন মোল্লা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মহাসড়ক লাগোয়া গ্রাম বরকামতা। এটি চান্দিনা উপজেলার পাশে হলেও অবস্থান কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায়। গ্রামে ঢুকলে চোখে পড়বে সারি সারি পানের বরজ। একটি দেখে মন চাইবে আরেকটি দেখতে। তবুও দৃষ্টির তৃষ্ণা মিটবে না। বরজে পানের সবুজ গালিচা দেখতে দেখতে দিন পার হয়ে যাবে। বরকামতা গ্রামের তিন শতাধিক চাষি পান চাষ করেন। এই চাষ চলছে শত বছর ধরে। অনেকে বাপ,দাদার হাত ধরে এই পেশায় আসেন।

বরকামতা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গাছের ছায়া ঘেরা গ্রাম। পাখির কিচিরমিচিরে মুখর চারপাশ। বরজে কাজ করছেন চাষি,শ্রমিক। কোন বরজে চাষি ও তার পরিবার। মাচায় ঝুলছে সবুজ পান। হিমেল হাওয়ায় ঝড়সড় পান। কুয়াশা থেকে রক্ষা করতে মাচার উপরে নারা(বোনা আমন ধানের গোড়ার অংশ) দেয়া হয়েছে। জমির পাশে চাষির পরিবারের পুরাতন কাপড় দিয়ে বেড় দেয়া হয়েছে। অনেকটা শিশু যত্নে পান চাষ করা হচ্ছে। কয়েকটি বরজে গিয়ে দেখা যায়,পান চিবুতে চিবুতে কাজ করছেন চাষি। ঠোঁটের কোনে পানের রঙ। পান এপর্যন্ত ভালো হওয়ায় তার মনেও খুশির রঙ ঢেউ খেলেছে।

চাষিদের একজন বিধুভূষণ দাস। ৪০ বছর ধনে পান চাষ করেন। পৈত্রিকভাবে এই পেশায় এসেছেন। তিনি বলেন,১৮শতক চমিতে পান লাগিয়েছেন। এখনও পানের অবস্থা ভালো। খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। ফসল নষ্ট না হলে ৪০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারবেন। প্রতি বিড়া(৯৬টা পানে এক বিড়া)। তারা পান বিক্রি করেন চান্দিনা বাজারে। বরকামতা গ্রাম থেকে প্রতি বাজারে প্রায় ৩০ হাজার বিড়া পান যায়। পান ছোট সাইজ প্রতি বিড়া ৮০-৯০ টাকা পাইকারি বিক্রি করেন। বড় গুলো ২০০-২৫০টাকা বিড়া। এখানে মহালক্ষী,চাইলতা গোটা,গোয়াপুর জাতের পানের চাষ হয়। দেবিদ্বারের বরকামতা ছাড়া গুনাইঘরসহ কয়েকটি গ্রামে পান চাষ হয়। এছাড়া পাশের চান্দিনা উপজেলার মাইজখার,মহিচাইল,চিরাড্ডা এবং বরুড়া উপজেলার আড্ডা ও ঝলম এলাকায় পান চাষ হয়।

দেবিদ্বার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার কবিরাজ বলেন দেবিদ্বারের বরকামতায় জেলার সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়। পান চাষে এই গ্রামের পরিবার গুলোতে সমৃদ্ধি এসেছে। কৃষি বিভাগ তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে।