পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে, শ্বশুরের ধর্ষণ মামলা !

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে, কাজী অফিসে বিয়ে রেজিস্ট্রি, তিন মাস দাম্পত্য জীবন কাটানোর পর মেয়ের জামাইর বিরুদ্ধে শ্বশুর করলেন ধর্ষণ মামলা! ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে। প্রতারণা করে টাকাকড়ি হাতিয়ে বিয়ে অস্বীকার করে শ্বশুরালয়ে স্ত্রীকে আটকে রাখার অভিযোগ স্বামীর, স্ত্রী উদ্ধারের অভিযোগ জানিয়েছেন আদালতে।
ব্যবসাদার জামাইর কাছ থেকে কর্জ নেয়া টাকা ফেরত চাওয়ায় শ্বশুর ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েকে অপহরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগে জামাইর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বলেও এলাকায় চাউর আছে। অন্যদিকে শ্বশুরের কর্জ নেয়া ১৭ লাখ টাকা ফেরত পেতে জামাই পাঠিয়েছেন লিগ্যাল নোটিশ। প্রতারণা করে শ্বশুর বাড়িতে আটকে রাখা স্ত্রী ইসরাত জাহান জুঁইকে উদ্ধারেও স্বামী আবদুর রউফ আবেদন করেছেন আদালতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে গত ২৯ মে জেলার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপর ইউনিয়নের কালাছড়া গ্রামের মো. ফুল মিয়ার মেয়ে ইসরাত জাহান জুঁইয়ের সাথে সরাইল উপজেলার ফকিরমুড়া গ্রামের মোরাম মিয়ার ছেলে আবদুর রউফের পারিবারিক সম্মতিতেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর মেয়ের বাবা ফুল মিয়ার উপস্থিতিতে কাজী অফিসে বিয়েটি রেজিষ্ট্রি হয়, নিকাহনামাতে স্বাক্ষরও রয়েছে ফুল মিয়ার। নিকাহনামায় বিয়ের মোহরানা বাবদ ধার্য্যকৃত ১০ লাখ টাকার পুরোটাই নগদ উসুল দেখানো হয়েছে। আবদুর রউফ অভিযোগ করেন, মোহরানার ১০ লাখ টাকা নগদ পরিশোধের পর বাড়িতে বিল্ডিং করার জন্যে শ্বশুর ফুল মিয়া তার কাছ থেকে গত ১০ জুন আরো ১৭ লাখ টাকা ধার নেন। এসময় পিত্রালয়ে থাকা তার স্ত্রী জুঁইকে কিছুদিনের মধ্যে তার কাছে পাঠিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন শ্বশুর ফুল মিয়া। পরবর্তীতে স্ত্রীকে ফেরত আনতে গেলে জুঁইয়ের মা শাহানা বেগম ও বড় বোন রোজিনা তাকে বাড়ি থেকে অপমান-অপদস্থ করে বের করে দেন। জুঁইয়ের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে জানতে পারেন, তার কাছ থেকে নেয়া টাকার চেয়ে আরো বেশি টাকার বিনিময়ে তার স্ত্রীকে অন্যত্র অবৈধভাবে বিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন শ্বশুর ফুল মিয়া ও শাশুড়ি শাহানা বেগম। এই অবস্থায় আবদুর রউফ গত ৩ আগষ্ট লিগ্যাল নোটিশ পাঠান এবং ৭ আগস্ট স্ত্রীকে উদ্ধারে আদালতের শরনাপন্ন হন। তিন দিনের মাথায় (১০ আগস্ট) আদালতে যাওয়ার কারণে সরাইলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে রউফকে মারধর করতে উদ্যত হন তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। আবদুর রউফ নিরাপত্তাহীন হয়ে ওইদিনই নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে মামলা করেন। কর্জ টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি এবং টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করলে আবদুর রউফ ২১ আগস্ট ফুল মিয়ার বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ দেন। অন্যদিকে একই তারিখে ফুল মিয়া তার মেয়ে জুঁইকে অপহরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগ এনে মেয়ের জামাই আবদুর রউফসহ তিনজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলার আর্জিতে বলা হয় বড় ব্যবসায়ী ও অবিবাহিত পরিচয়ে প্রতারণা করে তার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক রউফ বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। মেয়ে নাবালিকা বলে প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে ২৮ মে স্কুলে যাওয়ার পথে তার মেয়েকে রউফ অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তিনজন মিলে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে বিয়েতে রাজি করায়। এরপর কথিত বিয়ের নামে দিনের পর দিন জোরপূর্বক ধর্ষণ করতে থাকে। আদালত পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
সরেজমিনে কালাছড়া গ্রামে গেলে স্থানীয় বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) ফরহাদ আলী জানান, ‘ওই ছেলে একবছর ধরেই ফুল মিয়ার বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া এবং রাত্রিযাপন করতো। গ্রামের মানুষের মধ্যে এই নিয়ে নানা কথাবার্তা চলতে থাকে। মাস তিনেক আগে ফুল মিয়া আমাকে এবং সাবেক মেম্বার হারিছ মিয়াকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে জানান, তার মেয়েকে কোর্টে নিয়ে ওই ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। আমাদেরকে বিয়ের ভিডিও দেখান। মেয়ে ক্লাশ নাইনে পড়ে, বিয়ের বয়স হয়নি বললে তিনি আমাকে বলেন, ‘কোর্টে সিষ্টেম করেই বিয়ে দিয়েছি।’ শুনেছি জামাই নগদ ২৮-৩০ লাখ টাকা এবং ৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দিয়েছে। বিয়ের পর তিন মাস সংসারও করেছে। এখন আবার ধর্ষণের মামলা হয় কীভাবে? বিষয়টি বুঝতে পারছিনা।’
পুরো বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ফুল মিয়া বলেন, ‘যা হওয়ার হয়েছে। এই বিষয়ে আদালতে মামলা আছে। আমি কোনো কথা বলব না। আমার মানসম্মান আছে। আমার মেয়েটাকে আবার বিয়ে দিতে হবে। আমি মামলা করতেও রাজি ছিলাম না। ওরা আমার বিরুদ্ধে আগে মামলা করেছে বলে আমি করেছি।’