প্রথম ট্রেন ভ্রমণ, গন্তব্য লিচুর রাজ্য


হাসিবুল ইসলাম সজীব।।
আমাদের ট্রেন আসবে সকালে ৭:৫৫ মিনিট। আমি ৭:৪০ মিনিটে স্টেশনে গিয়ে হাজির। কল দিলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনের কুমিল্লা প্রতিনিধি এবং প্রাচীন সংবাদপত্র সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লা ভাইকে। তিনি বললেন, আমি আসতেছি স্টেশনে বাংলা ট্রিবিউন কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মারুফ এবং দ্যা বিজনেস স্টেন্ডার কুমিল্লা প্রতিনিধি তৈয়বুর রহমান সোহেল ভাই রয়েছে। মারুফ ভাইকে কল দিলে তিনি উত্তর দিলেন আপনাকে দেখেছি, সোজা সামনের দিকে চলে আসেন। পাঁচ মিনিট পর এনটিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি মাহফুজ নান্টু ভাই ্ আমাদের মাঝে উপস্থিত হলেন। এদিকে ট্রেন আসলো পূর্ব দিক দিয়ে আর মোল্লা ভাই আসলেন পশ্চিম দিক থেকে। সোহেল ভাই আগেই টিকিট সংগ্রহ করেছেন। স্টেশনে ট্রেন আসার সাথে সাথে এসি কেবিনে উঠলাম সবাই। যদিও একটু গাদাগাদি হচ্ছিলো কিন্তু প্রথমবার ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কাছে সেটা যেন ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিলো। ট্রেন তার নির্দিষ্ট সময় ছেড়েছিলো। ট্রেন ছাড়ার পরের মূহর্তের অনুভূতি গুলো বলে বুঝতে পারবো না । আমি সবার আগে গিয়ে একটি সিটে বসেলাম। ট্রেন চলছে তার নিয়মে। সোহেল ভাইকে বললাম ভাইয়া ট্রেনটা মনে হচ্ছে এদিকে ঐদিকে নড়েচড়ে। তিনি হাসি দিয়ে বলেন- তুমি কি প্রথম। আমি বললাম- হ্যাঁ। এজন্য তোমার কাছে এমন মনে হচ্ছে। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালে গ্রাম বাংলার অপরুপ সৌন্দর্য দেখা যায়। কৃষকেরা মাঠে ধান কাটছে আবার কেউ ঘুড়ি উড়াচ্ছে। ৫৮ মিনিটের মধ্যে আমরা আখাউড়া স্টেশনে। আমদের হাতে সময় থাকার কারণে আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে না গিয়ে এখানে নেমে যাই। নামার পর কালেরকণ্ঠের প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ পাল বাবুর সাথে দেখা। এর ফাঁকে আমি একটু হাঁটাহাঁটি করার সময় দুটো পরটা কিনে ছোট বেলার মতো খালি খেতে থাকি। সাথে মারুফ ভাইও একটু শেয়ার করেন। সবাই আগে থেকে নাস্তা করে ছিলেন। কিন্তু বিশ্বজিৎ বাবু নাছোড় বান্দা, সবাইকে আগে নাস্তা করতে বললেন। তারপর যা হবার হবে। নাস্তা করে চা খাওয়া শেষ। তারমধ্যে বিশ্বজিৎ বাবু কৃষি কর্মকর্তাকে কল দিয়ে খোঁজ নিলেন কোন বাগানে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। আমাদেরকে একটি সিএনজি অটোরিকশা ঠিক করে দিয়েছেন। আমরা বিজয়নগর উপজেলার নলগড়িয়া গ্রামের লিচুর বাগানে যাই। এতো বাগান নয় মনে হচ্ছে লিচুর একটি রাজ্যে। চারদিকে লিচুর ঘ্রাণে মনে ভরে যাচ্ছে। সেখানে প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনার আনাচে-কানাচেতে লিচু। স্থানীয় তরুণ ওমর সানি আমাদের তাদের বাগান ঘুরে দেখায়। কোন লিচু খাওয়ার উপযোগী এবং কোন গুলো নয় তার সম্পর্কে বলেন। হঠাৎ করে বলে উঠলো দুই-চার পা হাঁটলে আগরতলা বিমানবন্দর দেখতে পারবেন। এমনকি বিমান ওঠা নামা সরাসরি দেখা যায়। জিরো পয়েন্ট গিয়ে দেখলাম কাঁটাতার ঘেঁষে নির্মাণ হয়েছে এ বিমানবন্দর। ১২:১৫ মিনিটে জিরো পয়েন্ট থেকে রওনা দিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে। দুপুর ২ টায় আমরা পোঁছালাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সহকর্মী বড় ভাই ইলিয়াস হোসেনের শ্বশুর বাড়িতে দুপুরের খাবার। এখানে খাবারের অত্যাচার! একটার পর একটা খাবার নিয়ে হাজির। ৪:২০ মিনিটে আমাদের ট্রেন। ৪ টার সময় সবার থেকে বিদায় নিয়ে স্টেশনে। গিয়ে দেখি বিশাল সিরিয়াল টিকেট কাউন্টারে। মারুফ ভাই পাঁচজনের টিকেট নিয়ে হাজির। ট্রেন সময় থেকে কিছুটা দেরিতে আসছে। স্টেশন মানুষের অনেক ভিড়। কোনরকমভাবে ট্রেনে উঠলাম। নিরাপদে পৌঁছলাম নীড়ে।