বঞ্চনা থেকে মুক্তি চায় কুমিল্লাবাসী

ফিরে দেখা চব্বিশ

inside post

বিভাগ, কুমিল্লা-ঢাকা ট্রেন,বিমানবন্দর ও আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম দাবি
অফিস রিপোর্টার।।
২০২৪সাল। তারুণ্যের জাগরণ ছাড়া কুমিল্লার কোন প্রাপ্তি নেই। শেখ মুজিবের হত্যায় অভিযুক্ত খন্দকার মোশতাকের বাড়ি কুমিল্লা বলে শেখ হাসিনা সরকার কুমিল্লা নামে বিভাগ দেননি। বঞ্চিত করা হয় বিভিন্ন প্রাপ্তি থেকে। কুমিল্লা বিভাগ,সরাসরি কুমিল্লা-ঢাকা ট্রেন,বিমানবন্দর ও আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়াম স্থাপনের দাবি জানান কুমিল্লাবাসী। নতুন বছরে কুমিল্লাবাসী বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে চায়। ৭জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিরোধীদল না থাকায় আওয়ামী লীগ সারা দেশের মতো কুমিল্লায় নিজ দলের প্রার্থী নামিয়ে ডামি নির্বাচন করে। এতে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সদর,চৌদ্দগ্রাম,দেবিদ্বার,চান্দিনায় সহিংসতা বেশি হয়। ব্যাপক সহিংসতা হয় চান্দিনায়। নৌকার প্রার্থী প্রাণ গোপাল দত্তের সমর্থকরা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনতাকিম আশরাফ টিপুর সমর্থকদের নির্বিচারে কুপিয়ে আহত করে। রাত নামলেই সেখানে হামলার ঘটনা ঘটতো। এনিয়ে তখনকার প্রশাসন ছিলো নির্বিকার। লাকসাম-মনোহরগঞ্জে বরাবরের মতো সংসদ,উপজেলা,পৌরসভা ও ইউনিয়ন ভোট হয়েছে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও তার শ্যালক মোহাব্বত আলীর কথা ছাড়া সেখানে গাছের পাতাও নড়েনি। জিআই পণ্য হিসেবে কুমিল্লার রসমালাই স্বীকৃতি পায়। ৯মার্চ কুমিল্লা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার অন্য প্রার্থীদর সমর্থকদের মারধর ও হুমকি দিয়ে কেন্দ্র ছাড়া করে। জোর করে পাশ করান তার মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনাকে।
এছাড়া সারা বছরই আলোচনায় ছিলেন,নগরীর জলাবদ্ধতা, যানজট ও লালমাই পাহাড় কাটা।
১৯এপ্রিল বঞ্চনা আর আর ক্ষোভ নিয়ে মারা যান জাতীয় পতাকার অন্যতম রূপকার কুমিল্লার কৃতী সন্তান শিব নারায়ণ দাশ।
৮মে শুরু হয় উপজেলা নির্বাচন। এতে ভাই,শ্যালক,ভাতিজা ও সন্তানদের চেয়ারম্যান বানান আওয়ামী লীগের এমপিরা।
জুলাই আন্দোলনের গতি পায় কুমিল্লা থেকে। ১১জুলাই কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের আনসার ক্যাম্পের নিকট পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। অনেক আহত হন। যার রেশ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পর্যায়ক্রমে ছাত্ররা মহাসড়ক অবরোধ করেন। ১৮জুলাই মহাসড়কে আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে ৪ঘন্টা ধরে সংঘর্ষ হয়। ৩আগস্ট জিলা স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীদের আটকে রাখে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন। তারপর তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পুলিশ লাইনের দিকে মিছিল নিয়ে যায়। সেখানে সাবেক এমপি বাহার ও তার মেয়ে মেয়র সূচনার সমর্থক অস্ত্রধারীরা হামলা চালায়। সেখানে সন্ত্রাসীরা ছাত্রীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে। সেই ছবি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আলোচিত হয়। এদিকে সন্ত্রাসীদের তাড়া খেয়ে ছাত্রীরা পাশের একটি ভবনে আশ্রয় নিতে যায়। সেখানে ছাত্রীরা ভবন মালিকের নিকট আকুতি জানায়-আংকের গেইটটা খোলেন না! কিন্তু তারা গেইট খোলেননি। পেছনে এসে আবার সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। পুরো নগরীতে সেই দিন হাজারো অস্ত্রধারী হামলা চালায়। ৪ আগস্ট মহাসড়কে অস্ত্রধারীরা অবস্থান নেয়। নির্বিচারে হামলা ও গুলি চালায়। এদিন সাধারণ জনতাও মাঠে নেমে পড়ে। সেনাবাহিনীর সাজোয়া যানে উঠে বিক্ষোভ করে ছাত্র জনতা। এদিনে মাসুম নামের এক তরুণকে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।
৫আগস্ট বিজয়ের ক্ষণ। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পালিয়ে যায় কুমিল্লার দানব খ্যাত সাবেক এমপি বাহারসহ অন্যান্য নেতারা।
এই মাসের মাঝামাঝি কুমিল্লা ভয়াল বন্যার কবলে পড়ে। ২২আগস্ট বুড়িচংয়ের বুরবুরিয়ায় বাঁধ ভেঙে যায়। কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘর বাড়ি,রাস্তা, ফসল,মাছ ও মুরগির ক্ষতি হয়। ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। সেই ক্ষতি পূরণে জনগণ তেমন কিছু পায়নি।
আগস্টে আরো আলোচনায় ছিলো কুমিল্লার কিছু বিএনপি নেতা সুবিধা নিয়ে অপরাধী আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারত পালাতে সহযোগিতা করেছেন। বছরের শেষ দিকে আলোচনায় ছিলো-নগরীর আইশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি। চোর ছিনতাইকারীর উৎপাত বেড়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লার মহানগরের আহবায়ক আবু রায়হান বলেন,এই ২৪সালে ছাত্র জনতার ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। এতে কুমিল্লাসহ সারা দেশের দ্ইু হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০হাজার মানুষ। এমন বছর চাই না। তবে তরুণ্যের জোয়ারের জন্য চব্বিশ জাতির জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সদস্য মোহাম্মদ আনিসুর রহমান আখন্দ বলেন,চব্বিশে তারুণ্যের জাগরণ ছাড়া কুমিল্লাবাসীর কোন প্রাপ্তি নেই। কুমিল্লা বিভাগ,সরাসরি কুমিল্লা-ঢাকা ট্রেন,বিমানবন্দর ও আন্তজাতিকমানের স্টেডিয়াম স্থাপন এখন সময়ের দাবি।

আরো পড়ুন