বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুল প্রতিষ্ঠাতার ছেলের ওপর হামলার অভিযোগ
বেড়াখোলা আবদুল মতিন খসরু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় সাময়িক বরখাস্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার ছেলে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আলী ইমাম মজুমদারের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উপজেলার বেড়াখোলা গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহত আলী ইমাম মজুমদার বেড়াখোলা আবদুল মতিন খসরু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল লতিফ মজুমদারের ছোট ছেলে। অপরদিকে হামলায় প্রধান অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম সুজন ওই স্কুলের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। হ্মালার ঘটনায় আমিনুল ইসলামসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে গত ০৬ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণপাড়া থানায় একটি হত্যাপ্রচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী ভুক্তভোগীর সহধর্মিনী ও স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা সাহিদা আক্তার। অভিযুক্ত অন্যান্যরা হলেন বেড়াখোলা গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে লিটন সরকার,তার ছেলে মাকসুদ,একই গ্রামের মো.রিয়াদ,মো. সাইফুল,মো. রিফাত সাঈদী এবং পূর্ব পোমকাড়া গ্রামের মো. জামিল চৌধুরী,মো.অলি,মো. দীপু,মো.কাইউম ও মো. নিজামসহ অজ্ঞাত আরও ৫ জন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়,অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম ২০১০ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে ব্রাহ্মণপাড়ার তৎকালীন ইউএনও সোহেল রানা বরাবর আবেদন করেন একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা সাহিদা আক্তার। আবেদন অনুযায়ী একই বছরের ২৮ আগস্ট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কবির আহম্মেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করে দেন ইউএনও। পরবর্তীতে ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ ইবনে হোসাইনকে আহ্বায়ক করে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দু’টি তদন্তেই আমিনুল ইসলামের জালিয়াতি প্রমাণিত হয়। তবে পুনঃতদন্তের জন্য চলতি ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ সরেজমিনে স্কুল পরিদর্শনে যান জেলা শিক্ষা অফিসার। সে প্রেক্ষিতে ২২ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানে জরুরি কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আমিনুলের বিরুদ্ধে নিয়োগ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও পাঁচ বছর বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত থাকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি রেজ্যুলেশন তৈরি করা হয়। তৎকালীন স্থানীয় এমপির ডিও এবং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারকাজ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সহকারী শিক্ষিকা হাসিনা আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। উক্ত সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে গত ২ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম স্বপদে বহাল থাকবে মর্মে একটি চিঠি ইস্যু করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার স.ম.আজহারুল ইসলাম। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইউএনও এর সাথে দেখা করে সেই চিঠি বাতিলের দাবি জানায় এডহক কমিটি, প্রতিষ্ঠাতার পরিবারের সদস্য ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। ইউএনওকে তারা জানান নিয়োগে জালিয়াতির পাশাপাশি সে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাই এমন ব্যক্তিকে আমরা
স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখতে চাই না। তখন ইএনও উক্ত চিঠি বাতিল করে পূর্বের আদেশ বহাল রাখেন। তবে বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে পর দিন ০৫ সেপ্টেম্বর স্কুলে কিছু দুর্বৃত্তকে নিয়ে আমিনুল চেয়ার দখলের ঘোষণা দেন। তবে এলাকাবাসী প্রতিবাদের মুখে সে সুযোগ পাননি। ব্যর্থ হয়ে একই দিন সন্ধ্যার পর স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল লতিফ মজুমদারের ছোট ছেলে আলী ইমাম মজুমদারের ওপর হামলা করে আমিনুলের লোকজন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স.ম.আজহারুল ইসলাম বলেন,গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমিনুল ইসলামকে পুনর্বহাল করে চিঠি দেয়া হয়েছিলো প্রশাসনিক বাধ্যবধকতার কারণে। তবে পরবর্তীতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটি বাতিল করা হয়েছে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হাসিনা আহমেদই স্বপদে বহাল থাকবেন। এদিকে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার ছেলের ওপর হামলার বিষয়টিও তিনি অবহিত। অভিযুক্তদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বেড়াখোলা আব্দুল মতিন খসরু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার ছেলের ওপর হামলার বিষয়টি স্বীকার করেন ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, হামলার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি আমিনুল ইসলামসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে প্রধান অভিযুক্ত আমিনুল ইসলামের ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।