বাখরাবাদ গ্যাসে ৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম দুর্নীতি
মহিউদ্দিন মোল্লা ।।
বাখরাবাদ গ্যাসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তারা গ্যাস সংযোগের জন্য অবৈধভাবে প্রতিজন থেকে লক্ষাধিক টাকা নিয়েছেন। এদিকে গ্রাহকরা অবৈধ সংযোগ কর্তনে বেকায়দায় পড়ছেন। গ্রাহকদের দাবি, বাখরাবাদ গ্যাসের লোকজন এসে তাদেরকে অফিসের বিল বইসহ অন্যান্য কাগজপত্র দিয়েছে। গত ছয় বছরে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের ছয় জেলার ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে থেকে নেয়া হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার বেশি। এদিকে কয়েকজন কর্মকর্তার দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও তাদের মানবিক দৃষ্টির কথা বলে উপযুক্ত সাজা দেয়া হয়নি। এতে উৎসাহিত হচ্ছেন অন্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।
বাখরাবাদ গ্যাস কুমিল্লা প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন সূত্রমতে,বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড গ্যাস সরবরাহ করে আসছে। তাদের মোট লাইন তিন হাজার ৫৮৭কিলোমিটার। বৈধ আবাসিক গ্রাহক রয়েছে আড়াই লাখের বেশি। আবাসিক সংযোগ বন্ধ থাকলেও বাখরাবাদ গ্যাসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধভাবে সংযোগ দিয়ে আসছেন। তারা দেখতে আসল কাগজপত্রও প্রদান করে। ২০১৫ সাল থেকে এই পর্যন্ত একশ’৩০ কিলোমিটার অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আরো বিচ্ছিন্নের বাকী রয়েছে একশ’ কিলোমিটারের বেশি। অবৈধ লাইন গুলো নিম্নমানের ও অপরিকল্পিত হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝঁুিকও বাড়ছে। এসব লাইনে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা হবে ৫০হাজারের বেশি। টাকার অংকে গড়ে গত ছয় বছরে বাখরাবাদের গ্যাস চুরি হয়েছে পাঁচ কোটি টাকার বেশি। মানুষ থেকে প্রতারকরা নিয়েছে প্রতিজনে লক্ষাধিক টাকা হিসেবে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি।
গত জানুয়ারি মাসে কুমিল্লা সদর উপজেলার আড়াইওরা নমশূদ্র পাড়ায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সেখানের গ্রাহক দুলাল চন্দ্র দাস বলেন,এখানে দুইশ’র মতো গ্রাহক রয়েছে। প্রতিজন এক লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। তাদেরকে কাগজপত্রও দিয়েছে। কিছুদিন পর অফিসের লোকজন এসে বলছেন লাইনটি অবৈধ। যিনি তাদের টাকা নিয়েছেন এখন তারও ফোন নম্বর বন্ধ। আমরা এখানে সবাই বাঁশের জিনিসপত্র তৈরি করে জীবন ধারণ করি। অনেকে সারা জীবনের সঞ্চয় ও ঋণ করে সংযোগ নিই। এখন লাইন কেটে ফেলেছে, টাকাও গেল। আমরা কার কাছে যাবে? কোথায় বিচার দেবো? এনিয়ে গণমাধ্যমে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্নের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে বাখরাবাদ গ্যাস ৭জানুয়ারি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেখানে বাখরাবাদ কুমিল্লা কার্যালয়ের বিক্রয় সহকারী আবুল খায়ের নামের একজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
বিক্রয় সহকারী আবুল খায়ের বলেন,তিনি কারো নিকট থেকে এক টাকাও নেননি। এগুলো তার প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র। এক পর্যায়ে তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদকের সাথে দেখা করে বিনিময়ের মাধ্যমে সংবাদ না করারও ইঙ্গিত দেন।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক বাখরাবাদের আইটি বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু মো. জাহাঙ্গীর বাদশা বলেন, বিক্রয় সহকারী আবুল খায়ের নামে অভিযোগ উঠায় আমরা তদন্ত শুরু করেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে কয়েক বছর আগে সেলস বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক মোবারক হোসেন ও মোহাম্মদ বাপ্পী শাহরিয়ারসহ কয়েকজনকে টাকার বিনিময়ে অবৈধ সংযোগের জন্য দোষী বলে সাব্যস্ত করা হয়। ২৮.০২.১৯০০.০১১.০১০.১৭/২৯২৩ ও ২৯২৫ নং পত্রে সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এম এ হান্নান তাদের দোষী সাব্যস্ত করেন। তাদের সাজা হিসেবে নামমাত্র ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করা হয়। তারা এখন পদোন্নতি পেয়ে মোবারক হোসেন ব্যবস্থাপক(সিভিল) ও মোহাম্মদ বাপ্পী শাহরিয়ার ব্যবস্থাপক(ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) হয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান,অপরাধীদের উপযুক্ত সাজা হলে অনিয়ম ও দুর্নীতি কমে আসতো। এদিকে বাখরাদ গ্যাসের নতুন প্রশাসন সর্ষের ভূত তাড়ানোর চেষ্টা করলেও পুরাতন অপরাধী চক্রের কারণে এগুতে পারছেন না।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির বিষয়ে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শংকর মজুমদার বলেন,আমরা নিয়মিত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আসছি। অনিয়মের সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।