বিলাসী জীবন ছেড়ে ‘স্বর্গ’ রচনা!

তৈয়বুর রহমান সোহেল।।
আমোদ বলতে ভেসে আসে মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর নাম। আমোদ ময়াময়ী, মমতাময়ী, শক্তিমান নারী শামসুন্নাহার রাব্বীর প্রতিচ্ছবি। আজ থেকে ৭১ বছর আগে ১৯৫৫ সালের ৫ মে দুর্দান্ত ব্যাডমিন্টন খেলা এক যুবকের হঠাৎ মনে হলো, তিনি পত্রিকা করবেন। তাও খেলার পত্রিকা! কুমিল্লা থেকে এমন অলীক কল্পনা ঠিক ৭১ বছর পরেও কেউ করতে পারেনি। আজও এই শহর থেকে বিরতিহীনভাবে পত্রিকাটি বের হচ্ছে। তবে ক্রীড়া নয়, সাধারণ সাপ্তাহিক হিসেবে। মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী তাঁর জীবদ্দশাতেই এই পত্রিকাকে সাধারণ সাপ্তাহিকে রূপান্তর করেন। আর তাতে জ্বালানি হিসেবে কাজ করেন তাঁর সহধর্মিণী শামসুন্নাহার রাব্বী। বিদুষী এই নারী জীবনের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে এ পত্রিকাটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এতে সংসার, সন্তানের প্রতি সুবিচার কম হয়েছে, তা বোধ করি বলা যায়। বিশেষ করে ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর আমোদ প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর মৃত্যুর পরের সময়ে বেগম রাব্বী কীভাবে পত্রিকাটি এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এটি সহজে অনুমেয়, আমোদকে বাঁচাতে গিয়ে অকূল পাথারে পড়েছিলেন শামসুন্নাহার রাব্বী।
প্রতি বছর আমোদ প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী স্মরণে সভা হয়। প্রবীণরা স্মৃতিচারণ করেন। এই মানুষটি সম্পর্কে যত শুনি, তত মুগ্ধ হই। বাংলাদেশে বহু সাংবাদিক, সম্পাদক ছিলেন। তাঁদের প্রয়াণের পর পত্রিকার এক কোণে ছোট কোনো সংবাদ, অথবা দুই কলামের সংবাদ, স্মৃতিকথা ছাপানো বা বড়জোর ম্যাগাজিন প্রকাশের নজির আছে। মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী প্রয়াত হয়েছেন ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে। এখনো প্রতি বছর তাঁর স্মরণে স্মৃতি সংসদ থেকে সভা হয়। আলোচনা হয় প্রয়াত সহধর্মিণী শামসুন্নাহার রাব্বীর ত্যাগ নিয়ে। তাঁদের চার সন্তানকে নিয়েও আলোচনা হয়। ৩০ বছর পরও এখনো কোনো কোনো প্রবীণ ব্যক্তি ফজলে রাব্বীকে খুঁজতে আসেন, কেউ কবিতার বই লিখে উৎসর্গ করেন, জীবনাচার অনুসরণ করেন, দুনিয়াতে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কিছুই হতে পারে না।
একটি মানুষ, একটি পরিবার কুমিল্লার একটি শ্রেণির জন্য আদর্শ, অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। আমরা তাঁদের অনুজ অনুসারী। ঐতিহ্য, গৌরবের ক্ষুদ্র অংশীজন।
আমোদের ঐতিহ্য আজও মলিন হয়নি। সম্পাদক বাকীন রাব্বী ভাইয়ের সঙ্গে পত্রিকাটির আরেক নাবিক হিসেবে হাল ধরেছেন মহিউদ্দিন মোল্লা ভাই। সবাই ত্যাগী মানুষ। তাঁদের এবং প্রয়াতদের ত্যাগ দেখে মনে হয়- আমোদকে উপলক্ষ করে বিলাসী জীবন ছেড়ে স্বর্গ রচনা করেছেন তাঁরা।
লেখক:শিক্ষক ও সাংবাদিক।
বার্তা সম্পাদক:দৈনিক আমার শহর।
