বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জমি সংকট

১৯৮১ সাল থেকে কুমিল্লায় কাজ করছে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। সরকারি পাঁচ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত মুসলিশ বেওয়ারিশ লাশ দাফনের কাজ করছে সংগঠনটি। লাশ দাফনে তাদের জমি নেই। একই সাথে রয়েছে এতিম শিশুদের দ্বীনি শিক্ষাদান ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম। ঝরাজীর্ণ একমাত্র ভবনে চলে সকল কার্যক্রম। নেই লাশের হিমাগার ও অ্যাম্বুলেন্স। যাকাত, ফেৎরা, মান্নাত, কাফ্ফারা ও সাধারণ দানের টাকায় চলে স্বেচ্ছাসেবী এ সংস্থা। প্রতিষ্ঠার চার দশক পর নানা সংকটে প্রশাসন ও নাগরিকদের সাহায্য চান কমিটির সদস্যরা। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদে উল্লেখ করা হয়, ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর ১৯৮১ সালে কুমিল্লায় কার্যক্রম শুরু করে আঞ্জুমান। শিক্ষা, জনকল্যাণ নিয়ে নগরীর টমছমব্রিজ এলাকায় কার্যালয় স্থাপন করা হয়। কুমিল্লা পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত নগরীর টিক্কাচর এলাকায় ২০ শতক জমি বেওয়ারিশ লাশ দাফন শুরু করা হয়। প্রতিষ্ঠা লাভের পর প্রথম ২১ বছর কি পরিমাণ বেওয়ারি লাশ দাফন করা হয়েছে সে হিসাব জানা যায়নি। ২০০২ সাল থেকে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫৬ জন মানুষকে বেওয়ারিশ হিসাবে কাফন, দাফন করেছে এ সংস্থা। ২০০২ সালে ১৩৮, ২০০৩ সালে ১৩৫, ২০০৪ সালে ১৪৩, ২০০৫ সালে ১২৭, ২০০৬ সালে ১৩৩, ২০০৭ সালে ১৫৩, ২০০৮ সালে ১২৭, ২০০৯ সালে ১২০, ২০১০ সালে ১৩৪, ২০১১ সালে ১১৭, ২০১২ সালে ১১৯, ২০১৩ সালে ৯৫, ২০১৪ সালে ১০৮, ২০১৫ সালে ১১৩, ২০১৬ সালে ১৩০, ২০১৭ সালে ১০৫, ২০১৮ সালে ১০৩, ২০১৯ সালে ১০৮, ২০২০ সালে ৭৪ এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৪টিসহ মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে আরও জানা যায়, বেওয়ারিশ লাশের বেশীর ভাগই নারী। সরকারি চারটি প্রতিষ্ঠান আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে লাশ আঞ্জুমানকে লাশ হস্তান্তর করেন। যার মধ্যে রয়েছে রেলওয়ে পুলিশ, মহাসড়ক পুলিশ, কুমিল্লার ১৭ উপজেলার সকল থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ বিভাগ, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার । এ সকল লাশের বেশীর ভাগই গলিত, পঁচা ও দেহের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অংশ।
৩০ বছর ধরে বেওয়ারিশ লাশের কবর খনন করেন মো. মাছুম মিয়া ও আ. হান্নান। তারা জানান, কবর খুড়তে গেলে বের হয় মানুষের হাঁড় ও কংকাল। আলেমদের নির্দেশনা অনুযায়ী যে পরিমাণ নিচের দিকে মাটি খনন করা প্রয়োজন, তা করা সম্ভব হয় না। একটি কবরের উপর দেখা যায় ৭-৮টি কবর দেওয়া লাগছে। কবরের উপর কবর দেওয়ার ফলে যে হাঁড় পাওয়া যায়, আমরা তা নতুন কবরের সাথে পুতে রাখি।

আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কুমিল্লার সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পাশাপাশি এখানে এতিম শিশুদের দ্বীনি শিক্ষা, থাকা খাওয়ার, পোষাক, চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। শীত বস্ত্র বিতরণ, বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ, অসহায় সাধারণ মানুষের জন্য আমরা কাজ করছি। এতিমখানার শিক্ষক, কর্মচারী, কাফন-দাফনে যারা কাজ করেন তাদের নাম মাত্র বেতন দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানে আয় বৃদ্ধি হলে তাদের ভালো বেতন দেওয়ার সুযোগ হবে।

প্রসঙ্গত, বেওয়রিশ মুসলমানগণের লাশ দাফনের উদ্দেশ্যে ১৯০৫ সালে ইব্রাহিম মোহাম্মদ ডুপ্লের উদ্যোগে কলকাতায় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কার্যক্রম শুরু হয়। দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সালে ঢাকায় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কার্যক্রম ঢাকার কাকরাইলে শুরু হয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পরও এ কার্যক্রম চলমান থাকে । ১৯৮১ সালে কুমিল্লা শাখা চালু হয়।

আমরা মনে করি, মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল কবরস্থান। বেওয়ারিশ মানুষের লাশ দাফন একটি পুণ্যের কাজ। কুমিল্লায় বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জমি নেই। এক্ষেত্রে প্রশাসনের সাথে সমাজের বিত্তবানরাও এগিয়ে আসতে পারেন।