ব্যাংকক মিষ্টি কুমড়ায় দিন ফিরেছে নিদান মিয়ার

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।।
ব্যাংকক জাতের মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে দিন ফিরেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার কৃষক নিদান মিয়ার। মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করে তিনগুণ লাভ পেয়ে তার মুখে প্রশান্তির হাসি।
চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের হাওর এলাকায় মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আন্যান্য সবজির পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। কেবল মিষ্টি কুমড়া আবাদ করেই এখানকার কৃষকরা অন্তত দেড় কোটি টাকা আয় করতে সক্ষম হবেন বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিশ্চিত করেছেন। চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় বিভিন্ন জাতের সবজি যেমন- লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শসা, উচ্ছে, করলা, লাল শাক, মুলা, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর ইত্যাদি আবাদ হয়েছে মোট ৬৭৫ হেক্টর জমিতে। তন্মধ্যে কেবল মিষ্টি কুমড়ার আবাদই হয়েছে ১৩০ হেক্টর জমিতে। উপজেলার পত্তন এবং চরইসলামপুর ইউনিয়ন দু’টি হাওর বেষ্টিত হওয়ায় এখানে যেসব মাঠে বোরো ধান আবাদ করা যায় না, এসব জমিতে কৃষকেরা মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে থাকেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার কেবল পত্তন ইউনিয়নেই ১০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে মিষ্টি কুমড়া।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, কুমড়া জাতীয় ফসলের প্রধান ক্ষতিকর পোকা হচ্ছে মাছি পোকা। এই পোকার আক্রমণে বেশিরভাগ ফসলই নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া অন্যান্য ক্ষতিকর পোকার মধ্যে হচ্ছে থ্রিপস, জাব পোকা, কাঁঠালে পোকা, মিরিডবাগ ইত্যাদি। মিষ্টি কুমড়ার বিভিন্ন রোগের মধ্যে ঢলে পড়া, ডাউনি মিলডিউ, পাউডারী মিলডিউ, গ্লামি স্টেম ব্লাইট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো থেকে ফসল রক্ষা এবং ক্ষতিকর পোকা থেকে রক্ষার জন্য ইয়োলো ট্রাপ, সাদা ট্রাপ, নীল ট্রাপ, বিষটোপ ফাঁদ স্থাপন ও জৈব বালাইনাশক প্রয়োগ করা জরুরি। আর এসবের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি উৎপাদন সম্ভব।
পত্তন ইউনিয়নের কৃষক নিদান মিয়া জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে এবার আমি দুই বিঘা জমিতে ব্যাংকক জাতের মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করি। এতে বিঘা প্রতি আমার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া পাইকারদের কাছেই বিক্রি করেছি ৬০ হাজার টাকার অধিক। এতে আমার ব্যয়ের তিনগুণের বেশি লাভ হয়েছে। তিনি আরো জানান, স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আমাদেরকে পতিত জমিকে আবাদের আওতায় এনে কিভাবে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দেবার পাশাপাশি নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করায় আমরা কৃষি কাজে পেয়েছি ব্যাপক উৎসাহ।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরে আলম জানান সংশ্লিস্ট ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি অফিসারসহ আমি নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে কৃষকদের পতিত জমিকে আবাদের আওতায় আনাসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রয়োগে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি। নিরাপদ সবজির বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকরা উৎপাদনে আগ্রহী, অর্থনৈতিকভাবেও হচ্ছেন লাভবান।

বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাব্বির আহমেদ জানান এবছর উপজেলায় ৬৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হওয়া বিভিন্ন জাতের সবজির মধ্যে পত্তন ইউনিয়নে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে ১৩০ হেক্টর। বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগে নিরাপদ সবজি হয়েছে ৫০ হেক্টর। কেবল মিষ্টি কুমড়া আবাদ করেই এখানকার কৃষকদের অন্তত দেড় কোটি টাকা আয় হবে। তাছাড়া পতিত জমিকে আবাদের আওতায় অনা, নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য সকল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।’