ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চেয়ারম্যান পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার আসামী পক্ষের অপতৎপরতা

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড। ঘটনার সাথে জড়িত একজন সিআইডি কর্তৃক গ্রেপ্তারের পর দিয়েছে আদালতে স্বীকারোক্তি। জড়িত অন্যদের নাম-পরিচয়ও বলে দেয়ায় আসামী পরিবারের লোকেরা ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপাবার অপচেষ্টায় চেয়ারম্যান পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ মিলেছে। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি মহল জল ঘোলা করে মাছ শিকারের ধান্ধায় এসব করছেন বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও সংবাদ সম্মেলন করে এসব উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও বলেন, আমি টানা ২৫ বছর সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। সুদীর্ঘ এই সময়ে কোনো অন্যায় কিংবা খারাপ কাজে জড়িত হয়েছি, কেউ বলতে পারবেনা। বরং মানবিক এবং সামাজিক কাজকর্মই ছিলো তার একমাত্র লক্ষ্য। উপজেলায় চলে আসার পর আমার ছেলে শেখ ওমর ফারুক সুলতানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আসন্ন নির্বাচনেও সে প্রার্থী। মূলত একারণেই একটি মহল নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তবে এটিও সত্য যে, ওই মহলটির অপচেষ্টার বিষয় নিয়ে গোটা ইউনিয়নের একটি পরিবার ছাড়া সবার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে লায়ন ফিরোজ জানান, হাবলাউচ্চ গ্রামের প্রয়াত মতিউর রহমান তাঁর জীবদ্দশায় বিগত সময়ের ইউপি নির্বাচনে আমার কাছে দুইবার পরাজিত হন। পরাজয়ের যন্ত্রণা থেকে মতিউর রহমানের পরিবার-সমর্থকরা প্রতিহিংসাবশত আমার সবকিছুতেই বিরোধিতা করেই আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বপন হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আমার ও আমার ছেলের বিরুদ্ধে ওঠে-পড়ে লেগেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে। কী কারণে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত, সবকিছুই গ্রেপ্তারকৃত আসামি সফিকুল ইসলাম হৃদয় স্বীকারোক্তিতে আদালতকেও অবহিত করেছে। উপরন্তু স্বপন হত্যকাণ্ডে আমার ও আমার ছেলের কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা না থাকার বিষয়টি সিআইডির তদন্তেও সুস্পষ্ট হয়েছে। মুলত আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করে সম্মানহানি করা ছাড়াও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে।
স্বপন হত্যকাণ্ডে স্বীকারোক্তি প্রদানকারী হৃদয়ের মা, ইউপি নারী সদস্য ইসরাত জাহান গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের একটি সংস্থাকে প্রভাবিত করে প্রতিপক্ষের লোকজনকে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান লায়ন ফিরোজুর রহমান এবং তাঁর ছেলে সুলতানপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে। ওই সংবাদ সম্মেলেন ইসরাত জাহানের বক্তব্য বানোয়াট এবং নির্জলা মিথ্যা দাবী করে ফিরোজুর রহমান বলেন, সংবাদ সম্মেলনের পর হত্যাকাণ্ডে তার যোগসাজস থাকার কথাও বলছেন সাধারণ মানুষ। সংবাদ সম্মেলনে স্বপন হত্যা মামলায় জেলে থাকা সাধন চৌধুরীর বড় ভাই মতিলাল চৌধুরীর বক্তব্যও বাস্তবতা বিবর্জিত উল্লেখ করে লায়ন ফিরোজ বলেন, সাধন চৌধুরী আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা কর্জ নিয়ে কয়েক বছর পর ৪ লাখ টাকা ফেরত দেয়। বাকী এক লাখ টাকা এখনো দেয়নি। এই টাকা চাওয়ার কারণে সে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধাচরন শুরু করে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সুলতানপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কে এম সেলিম খান, ইউনিয়ন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রতন কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক ও স্কুলশিক্ষক পূর্ন চন্দ্র রায়, ইউপি সদস্য আবুল খায়ের, বিশিষ্ট সর্দার জসিম উদ্দিন ভূইয়া, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা অরবিন্দু চৌধুরী ছাড়াও ৯ জন ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলেন।