ভবানীপুরের লতি যাচ্ছে বিদেশে

কুমিল্লার কচুর লতি যাচ্ছে ইংল্যান্ড, ইতালিসহ ইউরোপ,আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। জেলার বরুড়ায় এই লতি বেশি উৎপাদন হচ্ছে। লতি বিক্রিতে প্রতি সপ্তাহে নগদ টাকা পেয়ে খুশি এলাকার কৃষকরা। দিন দিন ওই এলাকায় লতি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। কৃষকদের দাবি এলাকায় একটি প্রসেসিং সেন্টার হলে লতি দুই তিন দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। এনিয়ে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সূত্রমতে,কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হচ্ছে। তার মধ্যে বরুড়া উপজেলায় চাষ হচ্ছে ২৫০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় ২৫ মেট্রিক টন লতি, সে হিসেবে ৩০০ হেক্টরে উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে সাত হাজার মেট্রিক টন লতি। বরুড়া ছাড়া, আদর্শ সদর,চান্দিনা ও বুড়িচংয়ের উল্লেখযোগ্য জমিতে লতি চাষ হচ্ছে। বছরে সাত থেকে আট মাস লতি তোলা যায়। লাভ বেশি হওয়ায় ওই এলাকার মানুষ লতি চাষে ঝুঁকছেন।

বরুড়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,ঘরে ঘরে লতি তোলা, পরিষ্কার,বাঁধাইয়ের উৎসব। পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত লতি চাষ নিয়ে। নরিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষরা জমি থেকে লতি তুলে বাড়ি আনছেন। ঘরের সামনে নারীরা লতি পরিষ্কার করছেন। অন্য পরিবারের নারীরাও তাদের সহযোগিতা করছেন। এমন দৃশ্য দেখা গেছে উপজেলার রাজাপুর,জালগাঁও,বাতাইছড়ি,শরাফতি,পদুয়া ও হরিপুরে। এখানে প্রতিদিন ৪০ মেট্রিক টনের বেশি লতি সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা। গ্রামের এক স্থানে লতি জড়ো করা হয়। সেখান থেকে পিকআপ ভ্যানে লতি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

এক তরুণী জানান.তিনি প্রতিবেশীর লতি পরিষ্কারে সহযোগিতা করছেন। তারা প্রতি কেজি লতিতে এক টাকা করে পাচ্ছেন। তিনি দিনে ১০০ থেকে দেড়শ’ কেজি লতি পরিষ্কার করতে পারেন।

নরিন গ্রামের একজন চাষি বলেন,তাদের এলাকায় শত বছর ধরে লতির চাষ হচ্ছে। তবে কয়েক বছর ধরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ বেড়েছে। ধান চাষে মৌসুম শেষে টাকা পান। লতি চাষে প্রতি সপ্তাহে টাকা পাচ্ছেন। তাই তিনি লতি চাষে মনোযোগ দিয়েছেন।
শালুকিয়া এলাকার পাইকারি লতি ব্যবসায়ী বলেন,তারা কয়েকজন মিলে লতি সংগ্রহ করে ঢাকা,চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেন। আজ লতিরাজ লতি ৩২টাকা ও নিউটন লতি ৪০ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করেছেন।

ভবানীপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার ভুইয়া বলেন, কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় লতি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ,বিনামূল্যে সার বীজ দিয়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া বিষমুক্ত লতি উৎপাদনে সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ দেয়া হচ্ছে।

বরুড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বরুড়ার লতির সুনাম দেশজুড়ে। এই অঞ্চলে দিন দিন লতি চাষ বাড়ছে। এখানে একটি লতি প্রসেসিং সেন্টারের দাবি কৃষকদের। এবিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

কুমিল্লা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, কুমিল্লার কচুর লতি যাচ্ছে ইংল্যান্ড, ইতালিসহ ইউরোপ,আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রসেসিং হয়। বিষমুক্ত লতি উৎপাদনে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। একটি লতি প্রসেসিং সেন্টারের বিষয়টি নিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি।

বরুড়ার কচুর লতি যাচ্ছে ইংল্যান্ড, ইতালিসহ ইউরোপ,আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এটি কুমিল্লার জন্য সুসংবাদ। এখানে বিষমুক্ত লতি উৎপাদন হয়। একটি লতি প্রসেসিং সেন্টারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা। আমরা মনে করি, কৃষি বিভাগ কৃষকদের এই দাবি পূরণে দ্রুত এগিয়ে আসবেন।