‘৩৩ভাগ মনোনয়ন নারীদের দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে’

 

‘বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্বের অগ্রগতির জন্য অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্বের অগ্রগতির জন্য অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে বলা হয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য অর্থনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রোববার ঢাকার একটি হোটেলে এ সম্মেলনে প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শতাধিক নারী নেতৃবৃন্দ  অংশগ্রহণ করেন।
নারী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এ সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সাথে বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ অন্বেষণ করা।
বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র বিষয়ে সম্মেলনের শুরুতেই মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর ড. মোঃ আব্দুল আলীম। বৈশ্বিক নানা বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি দেখান কীভাবে আর্থিক স্বাধীনতা নারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে শক্তিশালী করে।


বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নারীদের হলফনামায় দেয়া সম্পদের হিসাব বিশ্লেষণ করে তিনি জানান, অপেক্ষাকৃত উচ্চ আয় এবং সম্পদের অধিকারী প্রার্থীরা রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বাধাগুলি অতিক্রম করতে পেরেছেন এবং দলীয় সুযোগগুলো বেশি লাভ করেছেন।
প্রবন্ধে সুপারিশ করা হয় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ কী নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকাও তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং আন্তঃদলীয় সহনশীলতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ইউকে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (এফসিডিও) এর সহায়তায় বাংলাদেশ স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ফর সিটিজেন এমপাওয়ারমেন্ট (বি-স্পেস) প্রকল্পটি ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাস্তবায়ন করছে।
সম্মেলনের অংশ হিসেবে অংশগ্রহণকারীদের দলীয় আলোচনায় রাজনৈতিক দলের সদস্য, নাগরিক সমাজ ও সাংবাদিকদের  কাছ থেকে জেন্ডার সমতাকে উন্নীত করতে এবং রাজনীতিতে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কৌশলগত পরিকল্পনার প্রস্তাব উঠে আসে।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির গবেষণা ও তথ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এমপি, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও কোষাধ্যক্ষ আহসান আদেলুর রহমান, প্রিপট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক অ্যারোমা দত্ত এমপি এবং ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শারমীন মুরশিদ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির গবেষণা ও তথ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এমপি বলেন, নারীর জন্য বিনিয়োগকে একটি সার্বিক বিষয়, শুধু নারীর অর্থ দিলে হবে না সেই অর্থ খরচ করার ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।
সম্মেলনে উঠে আসা নারী প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্তের বিধান বাতিলের প্রস্তাব সমর্থন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, গণমাধ্যমকে এক্ষেত্রে যুক্ত করতে হবে।
জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও কোষাধ্যক্ষ আহসান আদেলুর রহমান বলেছেন, দলের প্রার্থী মনোনয়নে ৩৩% নারীদের দিতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।
প্রিপট্রাস্ট্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যারোমা দত্ত এমপি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের জায়গা দেখতে হচ্ছে নারীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে কতটা এগিয়ে।
নারী পুরুষের ইতিহাসিক বৈষম্য তুলে ধরে ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শারমীন মুরশিদ বলেন, নারীদের এগিয়ে যেতে আরও সংগ্রাম করতে হবে।
জাতীয় সম্মেলনের সূচনা বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অব পার্টি (প্রোগ্রাম) আমিনুল এহসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিনিয়র ডিরেক্টর লিপিকা বিশ্বাস এবং ডেপুটি ডিরেক্টর অনিন্দ্য রহমান। সমাপনী বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ডানা এল. ওল্ডস।
উল্লেখ্য-ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ‘নারীর জয়ে, সবার জয়’ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় সারাদেশে ২০,০০০ এরও বেশি নারী নেতাদের সমন্বয়ে একটি ক্রমবর্ধমান বহুদলীয় নেটওয়ার্ক আছে যা এখন পর্যন্ত ৬২১টি তৃণমূল কমিটিতে ৬,৮২৯ জন নারীকে অন্তর্ভুক্ত হতে সহায়তা করেছে। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।