মাইকিং করে, কবর থেকে তুলে শিশুর লাশ ফেলা হলো রাস্তায়!

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম হওয়া কন্যাশিশু। ইনকিউবেটরে রেখেও যায়নি বাঁচানো।অনেকটা তড়িঘরিতেই করা হয় দাফন। কিন্তু দাফনের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ভিন্ন সম্প্রদায়ের হবার অযুহাতে শিশুর মরদেহ কবর থেকে তুলে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়! তাও আবার মাইকিং করে! চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা এলাকার।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের শহরতলীর ঘাটুরা গ্রামের কবরস্থান থেকে তুলে ফেলা হয় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওই শিশুটির মরদেহ। পরবর্তীতে পুলিশী প্রহরায় শহরের কান্দিপাড়াস্থ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নিজস্ব কবরস্থানে শিশুর মরদেহকে পুনরায় দাফন করা হয়।
জানা যায়, ফেনী সদর উপজেলার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের স্ত্রী স্বপ্না বেগম ৭ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের খ্রীস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে কন্যা সন্তান প্রসব করেন। স্বপ্নার বাবার বাড়ি শহরতলীর ঘাটুরা গ্রামে। কয়েক মাস ধরে তিনি বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। নির্ধারিত সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাখা হয় হাসপাতালের ইনকিউবেটরে। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় শিশুটি মারা যায়। ধর্মীয় রীতি মেনে সকাল সাতটায় শিশুটির মরদেহ ঘাটুরা এলাকার একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়। শিশুর পরিবারের সদস্যরা আহমদীয়া সম্প্রদায়ের হওয়ায় দাফনের ঘণ্টা দেড়েক পরই মাইকিং করে মরদেহ কবর থেকে তোলার জন্য লোকজন জড়ো করে আহমদীয়া বিরোধী পক্ষ। এরপর মরদেহ কবর থেকে তুলে কবর স্থানের বাইরের সড়কে ফেলে রেখে যায়। কারা এ কাণ্ড করেছে তা জানা যায়নি।
শিশুটির বাবা সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মাইকিং করে আহমদীয়া সম্প্রদায় বিদ্বেষীদের জড়ো করা হয়। এরপর মরদেহটি কবর থেকে তুলে কবরস্থানের সীমানা প্রাচীরের বাইরে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি আমরাও জানি না। পরবর্তীতে পুলিশ পাহারায় কান্দিপাড়া এলাকায় আমাদের সম্প্রদায়ের নিজস্ব কবরস্থানে নিয়ে মরদেহ দাফন করা হয়।’ স্থানীয় সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজাদ হাজারী আঙ্গুর বলেন, ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কারোর লাশ এ গ্রামের কবরস্থানে দাফনে স্থানীদের আপত্তি আছে। শিশুটির লাশ দাফনকালে তাদেরকে গ্রামের বাসিন্দারা বাঁধা দিলেও তারা শুনেনি। খবর পেয়ে গিয়ে দেখি লাশ কবরস্থানের বাইরে। পরে কান্দিপাড়া এলাকায় তাদের সম্প্রদায়ের কবরস্থানে মরদেহটি দাফন করা হয়।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিলো। দুই পক্ষই বিষয়টি সমাধান করে ফেলে।