মাটির চুলার আটার রুটি খেতে রাতভর ভিড়!

মোহাম্মদ শরীফ।
জাফরগঞ্জ। কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের দেবিদ্বার উপজেলার একটি বাজার। সন্ধ্যা নামার অল্প সময়ের পর বন্ধ হয়ে যায় বাজারের সব ক’টি দোকান। এরপরই এই বাজারে ছায়েব আলীর দোকানে ভিড় করতে শুরু করেন স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজন। মাটির চুলায় লাকড়িতে বানানো আটার রুটি, আলু-ডালের ভাজি ও গাভীর দুধের চা খেতে আসেন তারা। টিনের ছাউনির নিচে দু’টি পুরনো চৌকি। এতেই আয়েশ করে বসে গরম আটার রুটি, ডাল ভাজি ও দুধ চা’য়ের স্বাদ নেন গ্রাহকরা। এখানকার আটার রুটির স্বাদ কিছুটা ভিন্ন বলে জানান খেতে ভোজন রসিকরা। দল বেঁধে মোটরসাইকেলে করে তরুণদের বিভিন্ন স্থান থেকে আটার রুটি খেতে আসতে দেখা গেছে। ছায়েব আলীর দোকানে পাতলা আটার রুটি ১০ টাকা, ডাল-ভাজি ও গাভীর দুধের চা ১০ টাকা করে বিক্রি হয়। সন্ধ্যার পর থেকে বিক্রি শুরু হয় আটার রুটি। রাত ২-৩টা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন অর্ধ মণেরও বেশি আটার রুটি। সব মিলিয়ে এই খুপড়ি দোকানে এক রাতে বিক্রি দাঁড়ায় ৫-৬ হাজার টাকা।
কেন দূর থেকেও খেতে আসেন আটার রুটি? এমন প্রশ্নের জবাবে দেবিদ্বার পৌরসভা থেকে আসা আসাদ মামুন বলেন, ‘এখানের আটার রুটিতে ভিন্ন রকমের একটা স্বাদ আছে। যেটা অন্য কোথাও পাইনি। মাটির চুলায় বানানো গরম রুটি ডাল-ভাজিতে বেশ দারুণ স্বাদ হয়। তাই বন্ধুরা মিলে খেতে আসা।
ছায়েব আলীর আটার রুটি খেতে কুমিল্লা সদর, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, মুরাদনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ নানা জায়গা থেকে মানুষজন আসেন। এছাড়া মহাসড়কে চলাচল করা ট্রাক, পিকআপ ও মাইক্রো চালক-যাত্রীরা গাড়ি থামিয়ে গ্রহণ করেন ছায়েব আলীর আটার রুটির স্বাদ। ছায়েব আলীর ছোট দোকানে তিনিসহ আরো তিনজন এই কাজের সহায়তা করেন।


এই আটার রুটি কেন মানুষজন দূর থেকে খেতে আসেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ছায়েব আলী বলেন, ‘চেষ্টা করি সুস্বাদু করে রুটি তৈরি করতে। মানুষ খেয়ে বলে ভাল হয়েছে। অনেকেই অনেক দূর থেকে আসেন রুটি খেতে। আগে সারা রাত বিক্রি করতাম। এখন পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাত ১টার পর বন্ধ করে ফেলি’।
দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ ছায়েব আলী এই আটার রুটি একই জায়গায় বিক্রি করছেন। এর আগে তার ভাইও এই রুটি বিক্রি করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা অটোরিক্সা চালক মোহিন মজুমদার (৪৫) বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি তিনি এই জায়গায় আটার রুটি বিক্রি করেন। এখনো বিক্রি করছেন। ওনার সুনাম অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।’
আটার রুটি বিক্রি করে ৩৫ বছরে কি অর্জন করেছেন জানাতে গিয়ে ছায়েব আলী বলেন, ‘আমার পরিবারে স্ত্রী, চার মেয়ে ও এক ছেলে। দোকানের উপার্জনে পরিবারের খরচ, সন্তানদের পড়াশোনাসহ মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সবই দোকান থেকে উপার্জন। এখন পর্যন্ত ভাল চলছি, এটাই পাওয়া।’
ছায়েব আলীর আটার রুটির দোকানটি মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী দোকান। তার ইচ্ছে একটি স্থায়ী নিজস্ব দোকানে ব্যাপক পরিসরে আটার রুটি বিক্রি করা।