মাদক বাণিজ্যে যত সর্বনাশ
কুমিল্লা নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড। তার মধ্যে নগরীর পূর্বাঞ্চলের ওয়ার্ড ১৬ ও ১৭নম্বর। এই ওয়ার্ড দুইটির পর কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের বিবির বাজার জেলার একমাত্র স্থল বন্দর। এই দুইটি ওয়ার্ড থেকে ভারত সীমান্তের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। সীমান্তবর্তী হওয়ায় এই দুই ওয়ার্ডে মাদকের ছড়াছড়ি রয়েছে। এই দুই ওয়ার্ডে নিম্নবিত্তের মানুষ বেশি থাকায় তাদের দিয়ে মাদকের ব্যবসা করানো হয়। এই ছাড়া এখানে প্রচুর অস্ত্রও প্রবেশ করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া এই দুই ওয়ার্ডের নিকটবর্তী গোমতী নদী। নদীর বালু ও মাটি নিয়েও রয়েছে আধিপত্য বিস্তারের প্রদর্শনী। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়, আদর্শ সদর উপজেলা ছাড়াও সদর দক্ষিণ,চৌদ্দগ্রাম, ব্রাহ্মণপাড়া,বুড়িচং উপজেলার সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবেশ করে। বছর পাঁচেক আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কুমিল্লার শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা করে। এতে ক্ষমতাসীন দলের দুইজন প্রভাবশালী নেতা ও দুইজন উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম ছিলো। অপরদিকে ২২নভেম্বর নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের পাথুরিয়া পাড়া এলাকায় কাউন্সিলর কার্যালয়ে ঢুকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এতে কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা মারা যান। গুলিবিদ্ধ হন আরো ৫ জন। প্রাথমিকভাবে পরকীয়া প্রেম নিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে চাউর হলেও এর পেছনে মাদক,অস্ত্র ব্যবসা,চোরাচালান , নদীর মাটি ও বালু বাণিজ্য রয়েছে বলেও জানা গেছে।
সূত্র জানায়,কাউন্সিলর সোহেল ও তার লোকজনের প্রভাব রয়েছে নগরীর পূর্বাঞ্চলে। এই প্রভাব ভাঙতে মরিয়া অন্য পক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৬নং ওয়ার্ডের একজন আওয়ামী লীগ নেতা তাকে সরানোর পরিকল্পনা করেছেন। যাতে নিজেরা মাদক বাণিজ্য নির্বিঘ্নে করতে পারেন।
সূত্র জানায়,কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা ইকবাল মাদকের সাথে জড়িত ছিলো বলে পুলিশ জানায়। এছাড়া ৯৯৯ কল দেয়া ইকরামও মাদকসেবী ছিলো। সেই ঘটনায় সারা দেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
নগরীর সুজানগর এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান,কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলে মাদকের আধিপত্য রয়েছে। তবে গোমতী নদীর আইলের সড়কটি পাকা হওয়ার পর মাদক ও অস্ত্রের আমদানি বেড়েছে।
এসব এলাকায় মাদক আধিপত্য নিয়ে প্রায় গুলি বিনিময় ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। নগরীর পূর্বাঞ্চলের ওয়ার্ড গুলোর রাজনীতিতে জড়িত প্রায় ৩০ভাগ তরুণ মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। অস্ত্র রয়েছে ১০ভাগ তরুণের নিকট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইন শৃংখলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান,বিজিবি,পুলিশ ও র্যাব কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাদক আটক করেন। বেশি আটক হয় আদর্শ সদর উপজেলায়। এছাড়া সীমান্তের সদর দক্ষিণ,চৌদ্দগ্রাম, ব্রাহ্মণপাড়া,বুড়িচং উপজেলায় মাদক আটক হয়। কুমিল্লায় যত মাদক প্রবেশ করে তার মাত্র ১০ভাগ আটক হয়।
র্যাব-১১ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-২এর অধিনায়ক সাকিব হোসেন বলেন, কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা নিহতের ঘটনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। অপরাধী শনাক্তের চেষ্টা করছি।
তিনি আরেক প্রশ্নের উত্তরে বলেন,এলাকাটি সীমান্তবর্তী। এখানে মাদক ও অস্ত্রের প্রভাব রয়েছে বলে শুনেছি। আমরা সব গুলো বিষয়কে সামনে রেখে কাজ করবো।
আমরা চাই,কুমিল্লায় মাদকের আস্ফালন থামুক। তারুণ্য হেসে উঠুক। মাদকের আগ্রাসন থামাতে প্রতিটি পরিবার,প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখতে হবে।