রসমালাই রেসিপি — আবু সুফিয়ান রাসেল

 

বিয়ে। শব্দটা শুনলে অবিবাহিতরা হাসে। রহস্যময় হাসির কারণ জানা নেই। আমার কথা বলি। এক শুক্রবার বাবা, মামারা গেলো কনের বাড়ি। পরের বুধবার কনে পক্ষ আমাদের বাড়ি। হুট করে সিদ্ধান্ত। একদিন পর শুক্রবার। জুমাবারে বিয়ে। একটু হাসি, আবার চিন্তা করি। অপ্রস্তুত ছিলাম। একদিন পর বিয়ে! আমার বিয়ে? জল্পনাকল্পনা শেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। শুক্রবার বিয়ে হলো ধর্মীয়, সমাজিক নিয়মে। বিশেষ অনুষ্ঠান আড়াইয়াও শেষ হলো। হঠাৎ স্ত্রীর প্রশ্ন, তুমি না পত্রিকার রিপোর্টার? বললাম, সন্দেহ আছে নাকি?

স্ত্রী, একটু রং-রস মিশিয়ে বললো, না। তবে নিজের বিয়ের খবর তো কোন খবরের কাগজে প্রকাশ হলো না? আমি বললাম, গণমাধ্যম গণমানুষের চাহিদা বিবেচনায় সংবাদ প্রকাশ করে। বিয়ে বিষয়টা নিজস্ব চাহিদা। স্ত্রী একটু জোর দিয়ে বললো, তবুও স্মৃতিতে থাকতো। অ্যালবাম তৈরি করে রাখতাম। সংবাদপত্রের প্রতি তার আগ্রহ দেখে আমার নিজেরও ভালো লেগেছে। সে দিন আর কিছু বললাম না।
বাবার হালাল অল্প আয়ে দাদা-দাদিসহ দারিদ্র্যের কষাঘাতে বড় হয়েছি। এখনও অল্প রোজকারে রেল পথের মতো সমান্তরাল ভাবে চলে সাত সদস্যের পরিবার। তবে সামাজিক যে পরিচিতি, সে হিসাবে স্বজন ছাড়া খুব কাউকে অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে পারিনি। সহকর্মীদের নিমন্ত্রণ করেছি। বিয়ের খবর ছড়িয়েছে ফেসবুক। বিয়ের পর যিনি দেখেন তিনি বলেন, দাওয়াত পাইলাম না। কিও মিষ্টি কই?
ভিক্টোরিয়া কলেজের জুবাইদা নূর খান ম্যাম তো খুব রাগ। অধ্যক্ষ স্যারের কক্ষে নিয়ে সাত-আটজন স্যারের সামনে মান-অভিমান প্রকাশ। ঘোষণা দিলেন, তোর সাথে আমি কথা বলি না। যা রসমালাই নিয়া আয়। দিন যায় অভিনন্দন বাড়ে। তবে সবাই মিষ্টি চায়।
চিন্তা করলাম, আমার শহর কুমিল্লা। এ শহরে একমন মণ মিষ্টি বিতরণ করলেও কেউ না কেউ বাকী থেকে যাবে। সাহিত্যের ছাত্র ও সংবাদকর্মী হিসাবে একটা সাময়িকী প্রকাশ করি। স্ত্রীর স্বপ্নও পূরণ হবে, মিষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে। আমার পেশার সাথেও মিল থাকবে। স্ত্রীকে না জানিয়ে কাজ শুরু করলাম।


পরিচিতদের লেখা দিতে বলি। কমপক্ষে ৫০ জনকে বললাম। লেখা দিন। তবে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ধর্মের কথা, অভিজ্ঞতা, কৌতুক যা খুশি লিখুন। সাবজেক্ট বিয়ে। সকল লেখা বিয়ে সংক্রান্ত হতে হবে। বেশির ভাগ লেখক যথাসময়ে লেখা দিয়েছেন। একদিন স্ত্রীকে বললাম, একটা প্রতিযোগিতা হচ্ছে, ‘স্বামীকে নিয়ে লিখুন, পুরষ্কার জিতুন’। তুমি অংশ নাও। সে রাজি হলো, আমাকে নিয়ে প্রশংসা করে অনেক কিছু লিখেছে। সে বিজয়ী। তার লেখা স্থান পেয়েছে রসমালাই সাময়িকীর পাতায়। দলিল হয়ে থাকবে এ প্রশংসা। যখন সংসারে টুং টাং হবে। স্ত্রীর লেখাটা আবৃত্তি করে পড়বো।

নির্ধারিত সময়ের পর লেখা দিয়ে, কেউ নির্ধারিত শব্দ সংখ্যা থেকে অতিরিক্ত লিখে আমায় পরীক্ষায় নিক্ষেপ করলেন। তিন ডজন মানুষের লেখা পেয়ে আমি খুশি। তবে ছাপা খরচ অর্ধেক বেড়ে গেছে।

 

লেখা নির্বাচনের পর মহিউদ্দিন মোল্লা ভাই ও তৈয়বুর রহমান সোহেল ভাই সম্পাদনার কাজে সহযোগিতা করলেন। কৃতজ্ঞতা জানাই। নামকরণ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। ৭-৮টা নাম পেয়েছি। বিবাহ বার্তা, নিকাহনামা, আমাদের বিয়ে, যুগল, নতুন জীবন, প্রাণে প্রাণ। রসমালাই নামটা মহিউদ্দিন মোল্লা ভাইয়ের দেওয়া। এ নাম কুমিল্লার ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। নামটা সবাই পছন্দ করলেন।

প্রচ্ছদে রসমালাই নাম লিখা, বর-কনে পরিচিতি হাতের লিখা। অসাধারণ এ লিখাও সবার নজর কেড়েছে। হাফেজ মাওলানা কাজী আজহারুল ইসলামকে ধন্যবাদ। মাঝে আমার আর স্ত্রীর ছবি অঙ্কন করে দৃষ্টিনন্দন করেছেন শিল্পী মোহাম্মদ শাহীন। দুইজনের নামের মাঝে দু’টি পাখি। এ টোনা টুনি অংকন করেছেন ডা. ইকবাল আনোয়ার।

ড. আবু জাফর খান ও ড. সফিকুল ইসলামের লেখায় রস ছিলো। রসমালাইয়ের স্বাদ শুরু। ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহর লেখা। এ লেখায় সকল অভিভাবকদের জন্য সুক্ষ্মবার্তা ছিলো। এখানে আমাদের বিয়ের মঞ্চের ইয়া জাওয়্যিজনি আবি লিখাটি ছিলো। যার অর্থ হে বাবা! আমার বিয়ের ব্যবস্থা করুন। ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমদ পাত্র-পাত্রীর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার গুরুত্ব নিয়ে লিখেছেন। বিয়ের আইন বিষয়ে লিখেছেন অ্যাড. শাহনেওয়াজ সুলতানা। অধ্যাপক জহিনুল ইসলাম পাটোয়ারীর লেখা দিল্লি ক্যা লাড্ডু রম্য গল্পে সামাজিক বার্তা ছিলো। প্রবীর বিকাশ সরকারের লেখা তারুণ্য-ই বিয়ের শ্রেষ্ঠ সময়। এ লেখা পড়ে যে কোন তরুণ খুশি হয়ে যাবে। বিয়ে নিয়ে ছড়ি-কবিতা লিখেছেন জহিরুল হক দুলাল, নীতিশ সাহা, মাসুক আলতাফ চৌধুরী, জাকির আজাদ ও এমদাদুল হক মাইনেস। এ লেখাগুলো রসমালাই সমৃদ্ধ করেছে। মুসলিম ধর্মের বিয়ে নিয়ে লিখেছেন মাওলানা আলমগীর হোসাইন, খ্রিস্টান ধর্মের বিয়ে নিয়ে লিখেছেন ফাদার তপন ব্লেইস রোজারিও, হিন্দু ধর্মের বিয়ে নিয়ে লিখেছেন মুক্তি সাহা ঈশিতা। ধর্মীয় লেখাগুলো অধর্মকে দূরে ঠেলে দিবে। বিয়ে নিয়ে টক, মিষ্টি, ঝাল অভিজ্ঞা বিনিময় করেছেন আবুল হাসানাত বাবুল, খায়রুল আহসান মানিক, বাকীন রাব্বী, মহিউদ্দিন মোল্লা, শহীদুল হক স্বপন, শাহাজাদা এমরান, মাহফুজ নান্টুসহ অনেকে। এ লেখাগুলো আমি বারবার পড়ি। অবিবাহিত লেখক তৈয়বুর রহমান সোহেল, মোহাম্মদ শরীফ, আশিক ইরান ও তাদের দলকে স্বাগতম। আপনারা হতাশ হবেন না।

 

২২ জানুয়ারি স্ত্রীর জন্মদিন। সে দিনকে সামনে রেখে মোড়ক উন্মোচন করা হলো। সমতট পড়ুয়া সংগঠনের বন্ধুরা সবাই ছিলো। আমার অতিথি যারা ছিলো। সবার জন্য সন্দেশ, সবার জন্য রসমালাই। রসমালাই হাতে পেয়ে স্ত্রী জানলেন এটি তার জন্মদিনের উপহার। সে তখন জেনেছে, এ প্রকাশনা আমাদের বিয়ে সংক্রান্ত। কোন বিজ্ঞাপন ছাড়া এ রংয়ের এ সাময়িকী ছাপা হয়েছিলো বিয়ের সেলামির টাকায়। রসমালাই প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে চাই।