সিনাই নদীর প্রাণ সঞ্চার বাস্তবতা— এইচ.এম. সিরাজ

inside post
সিনাই নদী।ভারতের ত্রিপুরায় উৎপত্তি। কাজিয়াতলায় সীমান্ত পার হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বুক চিড়ে বিনাউটি ইউনিয়ন এলাকায় বিজনা নদীর সাথে গড়ে তুলেছে মধুরতর মিতালী। এরপর এ দু’য়ের মিলিত ধারা পতিত হয়েছিলো তিতাস নদীতে। কালের আবর্তে বর্তমানে বিজনা নদীর সংযোগস্থল এমনকি তিতাস নদীর সংযোগস্থল থেকে উজানে একেবারে ভারতের সীমান্ত অবধি জলধারাটি কেবল সিনাই নদী নামটাই ধারণ করে আছে। কিন্তু বাস্তবতায় সামান্যতম খালের কাছেও হার মেনে টিকে আছে এক সময়ের স্রোতস্বিনী সিনাই নদী। একদা এই নদী দিয়েই নিত্য চলাচল করতো পালতোলা নৌকা। সেসব আজকাল কারোর কাছে বিশ্বাসযোগ্য গল্পও হয়তোবা নয়।
বহু বছর পর, খননের ছোঁয়া পেলো সিনাই নদী। কেমন খনন হলো কিংবা হচ্ছে সেটি চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করতেই পৈত্রিক ভিটা জগন্নাথপুর গ্রাম থেকে কতেক কিলোমিটার দূরবর্তী ভারতের সীমান্তঘেঁষা ঐতিহ্যমণ্ডিত পদ্মবিল’র গোড়া অবধি যাওয়া। প্রায় হাজার বছরের পুরনো গোসাইস্থল সনাতন গোস্বামীর আশ্রমের পাশ দিয়ে গাঙেরপাড় ধরে নবনির্মিত পিচঢালা পথে মোটরসাইকেলে গন্তব্যস্থলে যাবার সারথী হলেন স্কুলশিক্ষক প্রিয় ভাগ্নে মো. আবুল হোসেইন। দু’দিকের জমিতে পানি সেঁচের সুবিধার্থে সিনাই নদী তথা সিনাই গাঙে দেয়া অস্থায়ী বাঁধের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার লোভ সামলানোটা ছিলো সত্যিই কঠিন। ছবির পেছনের দিকে গাঙেরপাড় থেকে পুরো প্রান্তরটাই ঐতিহ্যমণ্ডিত পদ্মবিল, বিলের পূর্বপাড় থেকেই ভারত।
বড্ড অবেলায় যাওয়া। তখনকে সূর্য্যিমামা পাটে নামার যোগাড়। সঙ্গতেই ছবি ধারণ করার উপযুক্ত পরিবেশটা ছিলোনা বললেই চলে। সেই কৈশোরকালে সিনাই গাঙ থেকে সেঁওতি দিয়ে দীঘিরপাড়’র পশ্চিম পাশে জমিতে পানি সেঁচের দৃশ্য মানসপটে ভেসে ওঠলো অবলীলায়। দীঘিরপাড়ের পাড় ভাঙা দীঘি ছাপিয়ে গোসাইস্থল বাজার থেকে পূর্ব দিকে সৈয়দপুরের সীমানা ছাড়িয়ে গাঙের পাড় সংলগ্ন বেশিরভাগ জমিই বর্তমানে কৃত্রিম জলাধার, এসবে হয় মাছের চাষ। গাঙের দক্ষিণ পাড়টা এখন পাকা রাস্তায় হয়েছে রূপান্তরিত। রাস্তা নির্মাণের অযুহাতসহ দু’দিকে সিনাই নদী ভরাট হয়ে এক শীর্ণকায় দশায় উপনীত।  জল সঙ্কটে সিনাই নদীও যেনো তৃষিত! দখল-দূষণের গ্রাস হয়ে ভুগছে অস্তিত্বের তীব্র সঙ্কটে। একদা কেবল বর্ষাকালেও নয়, শুকনো মওসুমেও ঢাউশ সাইজের বালুর নৌকা কাজিয়াতলা ঘাট এলাকা থেকে বালু বোঝাই করে যেতো ভাটির পানে। আজকালকে এসব অবিশ্বাস্য গল্পের মতোই।
মন্দের ভালো রকমের খননকাজ শুরু হওয়ায় পানির প্রবাহটা অন্তত চলমান হয়েছে এটুকুন বলা যায়। তবে এই খনন কার্যটা কাজিয়ালাস্থ ভারতের সীমান্ত হতে অন্তত ব্রাহ্মণগ্রামস্থ রেল সেতু (ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে কসবা-ইমামবাড়ি রেলস্টেশনের মাঝামাঝি) পেরিয়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে কসবার সৈয়দাবাদ এলাকা পর্যন্ত যদি আরেকটু প্রশস্ত-গভীরতায় সম্পন্ন করা হয়, তাহলে অন্তত এতদাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের দুর্ভোগ-দুর্দশার কিঞ্চিৎ হলেও লাঘব হবে। অনেকটাই প্রাণের সঞ্চার সাধিত হবে এক প্রকার মরা খালে উপনীত এই #সিনাই_নদী। সেই ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ হতে দখল-দূষণের শিকার হয়ে অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগতে থাকা সিনাই নদী খনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদের দাবীতে কলম চালিয়েই যাচ্ছি। সমর্থন জানাতে পিছপা হয়নি সিনাইপ্রেমীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই নিয়ে হয়েছে একরকম আন্দোলনও। শেষতক দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের। শুরু হয় ‘মন্দের ভালো’ পর্যায়ের খনন কাজ।
একরকম ‘দায়সারা’ খননের উদ্যোগ নেয়ায় আমরা যেনো ‘রাজা কইছে — ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই’ ভাব প্রকাশে হয়ে পড়েছি মত্ত। ‘অবৈধ দখল উচ্ছেদ’ যেনো ‘সরিষার ভেতরেই ভূত’ দশায়। রবিঠাকুর যথার্থই বলেছিলেন,- “আমরা যা চাই তা ভুল করে চাই, যা পাই তা চাইনা।’ এই নির্জলা সত্য অস্বীকারের কি কোনোই জো আছে? বুকের পাঁজরে অনেককিছুই জমা থেকে যায়, যার প্রকাশ কঠিন বাস্তবতা। তবে আলোর আশায় জানালার পাশে মানুষ উকি দেয়ই, কদাচ সেই আলো ধরা দেয় আবার কখনওবা চোখের আড়ালেই থেকে যায়। তথাপিও যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিবেন, এমন প্রত্যাশা করতেই পারি।
                             #
® এইচ.এম. সিরাজ : কবি, সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ অ্যাডভোকেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
নির্বাহী সম্পাদক- দৈনিক প্রজাবন্ধু, গ্রন্থাগার সম্পাদক- ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব।
ই-মেইল : serajhm@gmail.com
আরো পড়ুন