শামসুননাহার রাব্বী; মহামিলনের মহামেলার পথে যাত্রা

 

দেশের প্রাচীন সংবাদপত্র সাপ্তাহিক আমোদ উপদেষ্টা সম্পাদক শামসুননাহার রাব্বী ইন্তেকাল করেছেন। ২৫জুন বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি সবাইকে কাঁদিয়ে পরকালের মহামিলনের মহামেলার পথে যাত্রা করেন। ২৩জুন বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্জি রাজ্যের নেপচুন শহরের জার্জি শোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শামসুননাহার রাব্বী পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে কুমিল্লায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি কুমিল্লায় বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথেও জড়িত ছিলেন। তার একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ সময় ২৬ জুন রাতে নিউজার্জির মার্লবোরো শহরের মরগেনভিল মুসলিম কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ইসলামিক সেন্টার ফর ওশন কাউন্টি মসজিদে তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় অংশ নেন নিউজার্জিতে বসবাসরত বাংলাদেশীরা। এ ছাড়া নিউ ইয়র্ক থেকে এসেও অনেকে নামাজে জানাযায় অংশ নেন।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ,বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ও কুমিল্লার বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। তাদের প্রতি আমাদের গভীর কৃতজ্ঞতা।

এদিকে শামসুননাহার রাব্বীর আত্মার মাগফেরাত কামনায় কুমিল্লার নগরীর পুরাতন চৌধুরী পাড়া মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে দোয়ার আয়োজন করা হয়।

শামসুননাহার রাব্বী কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলীতে ১৯৪৩ সালের পহেলা নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা গোলাম মহিউদ্দীন হায়দার ও মাতা মমতাজ বেগম। তার বংশের ৪র্থ পুরুষ ছিলেন আলা সাহেব যিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মুসলিম জেলা জজ ছিলেন। ১৯৫৭ সালের ২০ অক্টোবর সাপ্তাহিক আমোদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর সঙ্গে শামসুননাহার রাব্বীর বিয়ে হয়। ১৯৫৯ সালে শামসুননাহার রাব্বী সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে ইউরোপ সফর করে এসে ফজলে রাব্বীর সঙ্গে যুগ্মভাবে ‘ইউরোপে ৩৮ দিন’ শিরোনামে ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশ করেন। ১৯৭৯ সালে হজ নিয়ে লেখেন ‘মহামিলনের মহামেলায়’ নামে একটি গ্রন্থ। ১৯৮৪ সালে ‘ব্যবধান’ নামে একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফর করে ‘প্রাচ্য থেকে প্রতীচ্য’ নামে একটি ভ্রমণ কাহিনী গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তাঁর পাঁচ দশকের বিভিন্ন লেখা নিয়ে প্রকাশ করেন ‘ভালবাসার পাঁচ দশক’ নামের আরেকটি গ্রন্থ। এছাড়া ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দুই বছর মাসিক ‘ময়নামতি’ নামে একটি সাহিত্যপত্র সম্পাদনা করেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন নানা পুরস্কার। ১৯৭৪ সালে যমুনা সাহিত্য গোষ্ঠী তাঁকে ‘বিদ্যা বিনোদিনী’ খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৯৭ সালে তিনি ‘অনন্যা শীর্ষ দশ’ সম্মাননা পদকে ভূষিত হন। তার মামা খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ মোবাশ্বের আলী। শৈশবে তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এছাড়া মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর সঙ্গে বিয়ের পর তার অনুপ্রেরণায় লেখালেখিতে আসা। শেষ দিকে আমোদ উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। শামসুননাহার রাব্বী পরিবারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন।

১৯৫৫ সালে তার স্বামী মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী কুমিল্লা থেকে আমোদ পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন। পত্রিকাটি ৬৭ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী ও শামসুননাহার রাব্বীর কঠোর পরিশ্রমে আমোদ তার গতি অব্যাহত রেখেছে। কুমিল্লা শহরে আমোদ মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরুর করেন শামসুননাহার রাব্বী। ৬০দশক থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত তিনি ছিলেন একমাত্র নারী সাংবাদিক। তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, সংবাদকর্মীদের সব বিষয়ে জানতে হয়। তাই প্রচুর পড়তে হবে। যাদের পড়ার আগ্রহ নেই তাদের এ পেশায় না আসাই ভালো। তার কর্ম ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য অনুপ্রেরণার হতে পারে। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।