শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মনোযোগে নতুন পদ্ধতিতে পাঠদান(ভিডিও)

 

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
কুমিল্লার গ্রামের স্কুলে নতুন পদ্ধতি পাঠদান করা হচ্ছে। এতে ঘরে বসে অভিভাবকরা পাঠদান পদ্ধতি ও হোমওয়ার্ক সম্পর্কে অবগত হতে পারছেন। কোনো শিক্ষার্থী ক্লাস ফাঁকি দিলে তাও চিহ্নিত করতে পারছেন। শিক্ষকদেরও দায়িত্বশীল হতে হচ্ছে। তারা বাড়িতে পড়ে গিয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কুমিল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চল ব্রাহ্মণপাড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘শিক্ষায়তন’ অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। ব্রাহ্মণপাড়ার তিনটিসহ পাঁচ স্কুলে এই অ্যাপসের সাহায্যে শিখন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। স্কুলগুলো হলো- ব্রাহ্মণপাড়ার শিদলাই আশরাফ স্কুল, ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ওশান হাই স্কুল, কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। এই অ্যাপসের উদ্ভাবক ব্রাহ্মণপাড়ার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহেল রানা। তিনি অ্যাপসের মাধ্যমে শিখন পদ্ধতি জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করছেন। এই অ্যাপসের মাধ্যমে স্কুলের সকল কার্যক্রম প্রধান শিক্ষক ওয়েব প্ল্যাটফর্মে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মোবাইল অ্যাপে করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি কোর্সে আলাদা আলাদাভাবে সাজানো আছে। কোর্সের ভেতরে সেই কোর্সের সকল ক্লাসের আলাদা সেকশন আছে, যেখানে শিক্ষকেরা অতিরিক্ত লার্নিং ম্যাটেরিয়াল জমা করতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা তা দেখতে পাবেন। শিক্ষকেরা অ্যাপে লেকচার নোট আপলোড করতে পারবেন, শিক্ষার্থীদের গ্রুপে ভাগ করতে পারবেন, ক্লাসে নোটিফিকেশন পাঠাতে পারবেন, অ্যাসাইনমেন্ট দিতে পারবেন ও জমা নিতে পারবেন, গ্রেড বসাতে পারবেন। ক্লাসে বসে সফটওয়্যার ব্যবহার করে শিক্ষকেরা হাজিরা নিতে পারবেন। অর্থাৎ স্কুলের সকল কার্যক্রম মোবাইল অ্যাপে করতে পারবেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ব্রাহ্মণপাড়ার ভগবান সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকরা অ্যাপসের মাধ্যমে হাজিরা নিচ্ছেন। পাঠদানের সবগুলো বিষয় ওয়েবসাইটে আপলোড করা হচ্ছে। হোমওয়ার্ক, পাঠদানের ইউটিউব ও ভিডিও লিংক অ্যাপসে আপলোড করা হচ্ছে। নতুন পদ্ধতিতে শিখতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্দীপনা দেখা গেছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ আবু হানিফ বলেন, শিক্ষার্থীরা চাইলে যে কোনো সময় আপলোড করা বিষয়গুলো পড়তে পারবে। ঘরে বসে অভিভাবকরা পাঠদান পদ্ধতি ও হোমওয়ার্ক সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। কোনো শিক্ষার্থী ক্লাস ফাঁকি দিলে অভিভাবকরা তা চিহ্নিত করতে পারবেন। শিক্ষকদেরও অনেক স্মার্ট হতে হচ্ছে। তারা অনেক সতকর্তার সাথে ক্লাস নিচ্ছেন।
ইউএনও সোহেল রানা বলেন, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ধারণাটি বেশ পুরোনো। ২০১৮ সালে যখন আমেরিকা যাই, তখন এ পদ্ধতিটি চোখে পড়ে। সে সময়ে বাংলাদেশে এ পদ্ধতিটি কাজে লাগানোর চিন্তা মাথায় আসে। তখনকার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তিনি এ নিয়ে সায় দিলে অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করি। আমাদের প্রণিত ডিজাইনে সফটওয়ারটি প্রস্তুত করেছে বিজনেস অ্যাক্সিলারেট লিমিটেড নামে এক কোম্পানি।
সাবেক জেলা প্রশাসক ও বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, জেলা প্রশাসনে যোগ দেওয়ার পর থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করে আসছি। ব্রাহ্মণপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা শিক্ষাক্ষেত্রে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আধুনিকায়নের কথা বললে আমরা সেই অভাব পূরণের লক্ষ্যে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। পরবর্তীতে তা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিই।