শিরায় শিরায় প্রভাতফেরি

সুভাশিস ঘোষ।।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটি যেন যথার্থতা পেয়েছে আজ ত্রিপুরা পল্লীর ২১শে ফেব্রুয়ারির শ্রদ্ধার্ঘ্যে। একদিকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তারাও গর্বিত একুশের চেতনায় উজ্জীবিত অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তাদের মাতৃভাষা ককবরকে সম্মান জানানো। এযেন একুশের চেতনা আর মাতৃভাষার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার মিলনমেলা। কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এ সম্প্রদায়ের আদি ভূমি এই লালমাটি-লাল পাহাড়ের দেশ কুমিল্লা। একুশের ভোরে এ পল্লীতে যেন পলাশ ফুটেছে থোকা থোকা, শিশুদের কলরবে ভেঙেছে  শালবনের নিস্তব্ধতা। আপনি হয়তো ভাবছেন কী এমন হয়েছে? ফি বছর তো একুশ আসে, প্রতিবারের মত এবারও আনুষ্ঠানিকতায় হবে। না, ত্রিপুরা পল্লীতে এপ্রথম যেন একুশ নেমেছে; এবাঁধভাঙা আনন্দের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি শহীদ মিনার, প্রভাতফেরি আর হাতে থাকা হলুদ গাঁদা।  তাদের মাতৃভাষা স্কুল।বিস্তারিত লিখছি  পরে । আজ এপল্লীর শিশুরা নিজেরা শহীদ মিনার বানিয়েছে। কাগজের টুকরো দিয়ে বর্ণমালায় সাজিয়েছে প্রাঙ্গণ। শুধু তাই নয়, হলুদ গাঁদা আর বাহারী পাতায় বানিয়েছে সাদামাটা ফুলের তোড়া। ওরা যখন ” আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি” গানের সাথে নগ্ন পায়ে এগিয়ে চলছিল শহীদ মিনারের দিকে, তখন কী এক মোহে আমাদেরও টেনে নিয়ে গেল সেই প্রভাতফেরি। এ এক অনন্য অনুভূতি। প্রতিটি লোম কূপে শিহরণ জাগিয়ে অশ্রুপাত ঘটিয়ে গেল ভেতরে ভেতরে। এযেন শিরায় শিরায় প্রভাতফেরি।

লেখকঃ ইউএনও, সদর দক্ষিণ উপজেলা,কুমিল্লা।