শুরু হচ্ছে সাইফুল রাজুর দ্বিতীয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী

আমজাদ হাফিজ, লাকসাম ॥
অজোপাড়া গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে যান্ত্রিক শহরের ছোট-বড় সবার কাছে উদীয়মান ফটোগ্রাফার হিসেবে সম্যক পরিচিত সাইফুল রাজু। তিনি ছোটবেলা থেকেই ছবি তুলতে ভালোবাসেন। কাকডাকা ভোরে চোখে বিভোর স্বপ্ন আর পিঠে ক্যামেরার ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হন। ছুটে যান গন্তব্যে। যে গন্তব্যের কোনো সীমারেখা নেই। সারাদেশেই তিনি ছুটে বেড়ান। ছবির খোঁজে বেশ কয়েকবার দেশের বাইরেও গিয়েছেন। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যকে উপভোগ করেছেন। সেই সঙ্গে সৌন্দর্যের স্মারক হিসেবে নিজ ক্যামেরায় তুলে রেখেছেন তার সারাংশ। গত ৭ বছর ধরে ছবি তোলাকেই ধ্যান-জ্ঞান করে নিয়েছেন তরুণ এই আলোকচিত্রী। তিনি লেন্সে চোখ রেখে তুলে আনতে ভালোবাসেন প্রকৃতি-জগত-জীবনের নানা দুর্লভ চিত্র। একাধিকবার দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে চিত্র প্রতিযোগিতায় সাফল্যের মুকুটও অর্জন করেছেন।

আগামী ১৪ মার্চ রবিবার ২য় বারের মত শুরু হতে যাচ্ছে তরুণ আলোকচিত্রী সাইফুল রাজুর একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ‘স্বপ্ন বুনি আলোছায়ায়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এ প্রদর্শনী শেষ হবে ১৫ মার্চ সোমবার। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে শুরু হতে যাওয়া এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি’। দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এতে উপস্থিত থাকবেন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যাঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। প্রদর্শনীতে স্থান পাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলার ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান, হতদরিদ্র পথশিশু ও বিভিন্ন শিল্পের শ্রমিকদের যাপিত জীবন, গ্রাম-বাংলার জনজীবন, অপার সৌন্দর্যের হাতছানি ফুল, পাখিসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নানা চিত্র।

ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন সক্রিয় কর্মী এবং তরুণ নির্মাতা হিসেবে সাইফুল রাজু ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র, মিউজিক ভিডিও এবং শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছেন। তিনি ২০১৬ সালে ‘লাল সবুজের বাংলাদেশ’ শিরোনামে ক্রিকেটের গান নিয়ে একটি মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করে সাড়া দেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রজন্ম প্রোডাকশনের ব্যানারে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ‘স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি-২’ শিরোনামে তার প্রথম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী সফল ভাবে শেষ করে চলতি বছরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাশেকে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র নিয়ে একটি ব্যতিক্রমি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।

গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎতকারে তরুণ আলোকচিত্রী সাইফুল রাজু বলেন, ‘একটা সময় সখের বশে ছবি তুলতাম। আর এখন ছবি তোলা আমার নেশা। বলতে গেলে বর্ষপঞ্জিকায় এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আমার ক্যামেরার সাটার ক্লিক হয় না। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ছবি তোলার চেয়ে অবহেলিত ও হতদরিদ্র মানুষের দুঃখগাঁথা জীবনের ছবি তোলাকেই আমি প্রাধান্য দেই। পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ক্যামেরাবন্দী করতেও কালক্ষেপণ করি না। ছবির খোঁজে আমি ছুটে বেড়াই যত্রতত্র। যাবতীয় বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে বাবার আশির্বাদ সাথে নিয়ে আমার এ পর্যন্ত আসা। আমি আমার ক্ষুদ্রতম সাফল্যের সবটুকু বাবাকে উৎসর্গ করছি। সবসময় চেষ্টা করছি শুভাকাক্সক্ষীদেরকে ভালো কিছু উপহার দিতে। ২০১৭ সালের বইমেলায় ‘স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি’ শিরোনামে আমি আলোকচিত্রের একটি এ্যালবাম প্রকাশ করেছি এবং ২০১৯ সালে ‘স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি-২’ শিরোনামে একক আলোকচিত্র প্রদর্শন করি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ২য় বারের মত ‘বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি’ শিরোনামে একক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। আশা করছি সবাই তা স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করবেন। আর অতীতের মত পাশে থেকে আামাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবেন।’