সুদ, ঘুষের টাকায় কোরবানি হবে কিনা ?

আমোদ ডেস্ক।।
কোরবানি শব্দের অর্থ ত্যাগ আর ঈদ শব্দের অর্থ খুশি। অতএব ঈদুল আযহা অর্থ কোরবানির খুশি। এই কোরবানির দিনে আল্লাহর উদ্দেশ্যে জানোয়ার (পশু) জবাই করা হয়। এর দ্বারা মালের ত্যাগ স্বীকার করা হয়। এই মালের কোরবানি দিতে পারার মধ্যে মুমিনের একটা আনন্দবোধ থাকে। এজন্যই একে কোরবানির ঈদ বলা হয়।

বিজ্ঞাপন
ইসলামে অনেক ধরণের কোরবানির বিধান রয়েছে। এক ধরণের কোরবানি হল জানের কোরবানি। যেমন, নামায, রোজা, হজ্ব, জিহাদ ইত্যাদির বিধান। আর এক ধরণের কোরবানি হলো মালের কোরবানি। যেমন, যাকাত, ফিতরা, কোরবানি, দান, সদকা ইত্যাদির বিধান। এসব বিধান পালনের মাধ্যমে মালের কোরবানি দেয়া হয়।
কোরবানি দেয়া ওয়াজিব। অধিকাংশ মুসলমান ব্যক্তি এই ঈবাদত পালন করতে চান। এ কারণে আনন্দের সঙ্গেই সাধ্যমত কোরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু ইসলাম বা কোরবানি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকায় মনের অজান্তেও এই ঈবাদত যথাযথ ভাবে হয় না। তাই কোরবানি দিলেও বেশ কিছু কারণে না হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
নিম্নে বেশ কিছু কারণ তুলে ধরা হল-
১) জানোয়ার (পশু) জবাই করার মাধ্যমে মালের কোরবানি হবে সেই সাথে মনেরও কোরবানি হবে। এই কোরবানি জন্তু জবাই করতে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হয়। এই অর্থের প্রতি মনের যে মায়া সেই মায়াকে ত্যাগ করে কোরবানি করতে হবে। তাহলেই কোরবানি সহিহ হবে।

বিজ্ঞাপন
২) কোরবানি করতে গেলে মনের মধ্যে যদি গোশত খাওয়ার চিন্তা চেতনা আসে তাহলে ওই ব্যক্তির কোরবানি সহিহ হবে না।
৩) সুদ, ঘুষ এবং অসৎ টাকায় কোরবানি দিলে কোরবানি সহিহ হবে না।
৪) কোরবানির জন্তু ভাগে ক্রয় করলে অংশিদারদের মনের ভিতর কোন প্রকার গোশত খাওয়া বা অন্য কোন গলদ ধারণা থাকলে কোরবানি সহিহ হবে না।
কোরবানি সহিহ করতে মাংস বন্টন ও বেশ কিছু নিয়ম জানা জরুরী-
হাদীস শরীফে এসেছে, যার কোরবার সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন ঈদগাহে না আসে। অথচ কোরবানি দেয়ার বিষয়টিকে ইবাদতের পরিবর্তে আমরা শুধুমাত্র একটি উৎসবে পরিণত করে ফেলি। এটি উৎসবও তবে কোরবানির তাৎপর্য অনেক। কিন্তু অনেকে কোরবানি দেন ঠিকই কিন্তু সে কোরবানি যথাযথ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক ক্ষিণ হয়ে যায়। এর একটি বড় কারণ কোরবানির মাংস ঠিকভাবে বন্টন করা হয় না।
বিজ্ঞাপন
কোরবানি সহিহ করতে মাংস বন্টন ও বেশ কিছু নিয়ম জানা জরুরী। বিষয়গুলো হাদিস শরীফের আলোকে তুলে ধারা হয়েছে-
১. শরীকে কোরবানি করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।
২. কোরবানি গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই।
৩. কোরবানির গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন
৪. কোরবানির গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।
৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।
৬. কোরবানির চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি।
৭. কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি।
৮. এক কোরবানির পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন
৯. ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কোরবানির গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কোরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য।
১০. কোরবানির মৌসুমে অনেক মহাজন কোরবানির হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কোরবানিদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না।
১১. কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে।
১২. কোরবানির পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না।
১৩. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কোরবানির করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না।
১৪. কোরবানির পশুর চামড়ার মালিক কুরবানীদাতা। সে ইচ্ছা করলে তা ব্যবহারও করতে পারে। সে যদি চামড়াটি দান করে দিতে চায় তবে বিক্রি না করে আস্ত দান করাই উত্তম। বিক্রি করলে এর মূল্যের হকদার হয়ে যায় ফকীর-মিসকীন তথা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত লোকজন। আর এদের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনও দ্বীনদারগণ অগ্রাধিকারযোগ্য।

বিজ্ঞাপন

সুদ মানুষের মধ্যে নির্মমতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, কৃপণতা, নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার জন্ম দেয় সুদ হচ্ছে মানুষের উন্নত চরিত্র গঠনের প্রতিবন্ধক। সুদ মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধিও মেধা বিকাশের বাধা সৃষ্টি করে। মোট কথা সুদ সমাজে বেকারত্ব বৃদ্ধি করে। অতএব এ থেকে বেঁচে থাকা সকলের দায়িত্ব।