হাউজে পড়তো তিনশ’ পাতিল মানতের শিরনি

 

inside post

যেভাবে লাকসামে প্রতিষ্ঠা পায় দুইশ‘ বছরের শিরনি মসজিদ

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
গাইনের ডহরা। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার একটি গ্রাম। এই গ্রামে ২০০বছর আগে গড়ে উঠে একটি মসজিদ। এর সাথে জড়িয়ে আছে নানা জনশ্রুতি। এই মসজিদের মাঠের কোনে রয়েছে সিমেন্টের তৈরি হাউজ। এতে এক সময় পড়তো মানতের(ইচ্ছে পূরণ) তিনশ’র বেশি পাতিল শিরনি। সেই শিরনির জন্য লাইন ধরতেন হাজারো মুসল্লি। তাই মসজিদটির নাম পড়ে শিরনি মসজিদ নামে। প্রাচীন কারুকাজের মসজিদটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন সচেতনরা।


স্থানীয় সূত্র জানায়,২০/২২বছর আগেও মসজিদের হাউজে শিরনি ঢালা হতো। তবে এখনও প্রতি শুক্রবার এইখানে কয়েক পাতিল মানতের শিরনি আসে। আসে জিলাপি,মিষ্টি। এই মসজিদে মনের ইচ্ছে পূরণে শিরনি দিতে আসতেন আশপাশের ২০/২২গ্রামের মানুষ। তার সাথে আসতেন বিভিন্ন জেলার মানুষও। ২০ বছর আগেও জুমার নামাজের অংশ নিতেন বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মুসল্লি।
মসজিদের দেখভাল করা পরিবারের সদস্য প্রায় ৭০বছর বয়সী আবদুল বাতেন বলেন,এক ফকির দুইশ’ বছর আগে এখানে মাটির ঘর তুলে মসজিদ চালু করেছেন বলে মুরব্বিদের মুখে শুনেছি। তিনি শিরনি রান্না করে সবাইকে খাওয়াতেন। জনশ্রুতি আছে এই ফকির শিরনি রান্না করে-গরম শিরনি হাত দিয়ে বিতরণ করতেন। এক সময় তিনি কোথাও চলে যান। এরপর স্থানীয়রা মসজিদটি দেখভাল করেন। আমার দাদা এবং বাবাও এই মসজিদের সংস্কারের সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমান কাঠামোর মসজিদের বয়সও দেড়শ’ বছরের বেশি হবে। এক সময় হাজারো মুসল্লি হতো। মসজিদ,খোলা বারান্দা পেরিয়ে সড়কেও মসল্লিদের দাঁড়াতে হতো। আশপাশের গ্রামে একাধিক মসজিদ হওয়ায় এখন মুসল্লি কমে গেছে। এখানে ঢাকা,চট্টগ্রাম,সিলেট থেকেও মানুষ মানতের শিরনি নিয়ে আসতেন।


মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লাকসাম বাইপাস থেকে চৌদ্দগ্রাম সড়ক। এই সড়কের পাশে গাইনের ডহরা গ্রামে মসজিদটির অবস্থান। বাইপাস থেকে মসজিদের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। সাদামাটা প্রাচীন একটি মসজিদ। মসজিদের ভেতরে রয়েছে নানা কারুকাজ। মসজিদের বাইরে রয়ে উঁচু মিনার। ধারণা করা হয় সেখানে দাঁড়িয়ে আজান দেয়া হতো। এখন মিনারের উপরে মাইক লাগানো হয়েছে।
পাশের তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শামছুল আলম রাজন বলেন, আমরা সেখানে নামাজ পড়তে যেতাম। আমাদের মতো পাশের দিঘিরপাড়া.ভোজপাড়া,কাদ্রা.নরপাটি,গুনতী,গন্ডামারাসহ বিভিন্ন্ এলাকার মানুষ নামাজ পড়তে আসতেন। আমরা ২০বছর আগেও হাউজে রাখা শিরনি বিতরণ করতে দেখেছি।
মসজিদের ইমাম হাফেজ আবদুল হাই বলেন, মসজিদটি দুইশ’ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি। আমাদের পরিবার মসিজদটি রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। আমরা মসজিদে মুসল্লিদের থেকে কোন চাঁদা তুলি না। মানুষের দানের টাকায় মসজিদের খরচ ও সংস্কার কাজ করে থাকি।
লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন,ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। একদিন মসজিদটি পরিদর্শন করবো। এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আরো পড়ুন