হুইল চেয়ারে ঈদ

।। মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম সোহেল।।
ছোটবেলার ঈদের আনন্দ ছিল অপরিসীম। চিকিৎসক হিসেবে বাবার ব্যস্ততার কারণে ঈদে আমাদের সাত ভাই বোনের ঈদের কেনাকাটার দায়িত্ব ছিল মায়ের। বাবার সাথে একবার গিয়েছিলাম ঈদের কেনাকাটায়।
সেবার যে জুতা জোড়া বাবা কিনে দিয়েছিল সেটির ব্যবহার ছিল বহুমুখী। সেটিই ছিল আমার জীবনে কেনা সেরা জুতা।
আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দকে সার্থক করতে মায়ের ভূমিকা ছিল অনন্য। উনাকে দেখতাম সারা রাত জেগে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ খাবার রান্না করতে। সকালবেলা বাবার সাথে ঈদগাহে যাওয়া। নামাজ শেষে বাসায় এসে বাবা মা‘সহ মুরুব্বিদের সালাম করতাম। সমবয়সীদের সাথে ঈদের কোলাকুলি। সে সময় সিনেমা দেখার প্রতি আগ্রহ ছিল। যেহেতু ঈদের দিনটি ছিল স্বাধীন তাই ঈদে মুক্তি পাওয়া একটি ছবি দেখে বাসায় ফিরতাম। বাবা মার সাথে সময় গুলো ছিল নির্ভার। বাবা-মা দুজনেই প্রয়াত হয়েছেন। বাবা মাকে নিয়ে সেই সময়ের ঈদগুলো ছিল অতুলনীয়।
পরিণত বয়সে ঈদের আনন্দের সাথে যুক্ত হলো দায়িত্বশীল আচরণ। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি মামা,চাচা হিসাবে, ভাই হিসাবে ভাই ও বোনদের,স্বল্প আয়ের আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের
ঈদ আনন্দে সহায়ক ভূমিকা ঈদের আনন্দে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করতো।
বৈবাহিক জীবনে স্বামী ও সন্তানের পিতা হিসেবে ঈদ আনন্দের অনুভূতি সম্পূর্ণ আলাদা। জামাই হিসাবে শ^শুর বাড়ির কদর এই সময়ের বাড়তি সুখানুভূতি।
প্রবাস জীবনে একা ঈদ উদযাপনের অভিজ্ঞতা ছিল নিরানন্দময়। তবে ভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন দেশের মুসলমানদের ঈদ উদযাপনের অভিজ্ঞতা ছিল একটি বাড়তি পাওনা।
আজ থেকে ৯ বছর আগে ঈদের ১৩ দিন আগে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালের বিছানায় ঈদের দিন অতিবাহিত করা ছিল আমার বছর জীবনের সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা।
ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে একটি দুর্ঘটনা কিভাবে একটি পরিবারের ঈদের আনন্দকে ম্লান করে দেয় এই অভিজ্ঞতাটিও জীবনের অংশ হয়ে রইল।
একজন হুইলচেয়ার সারভাইভর হিসেবে গত ৯ বছর ধরে ঈদ উদযাপন করছি। শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতিনিধি হিসেবে হুইলচেয়ার চালিয়ে কুমিল্লার কেন্দ্রীয় ঈদগায় ঈদের জামাতে শরিক হওয়া, নামাজ পরবর্তী সামাজিক সম্পর্ক গুলোর সাথে সৌহার্দ বিনিময় এবং পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে আগের মত দায়িত্বশীল ভূমিকা না রাখতে পারলেও পরিবারের সদস্যদের পাশে থেকে তাদের ঈদ আনন্দে সহায়ক ভূমিকা রাখতে
পারাটাই হচ্ছে এখন আমার ঈদের সবচেয়ে বড় আনন্দ।
এবার ঈদে বাড়তি আনন্দ হিসেবে যোগ হচ্ছে সাপ্তাহিক আমোদ-এর ঈদ সংখ্যায় ঈদ নিয়ে আমার অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ পাওয়া। ধন্যবাদ কর্তৃপক্ষকে সবসময় শারিরীক সীমাবদ্ধ মানুষদের পাশে থাকার জন্য।

লেখক: সংগঠক ও সাবেক ক্রিকেটার।