আবিরকে ঘিরে অন্যরকম ঈদ

।। মহিউদ্দিন আকাশ ।।
গত বছরের ৪র্থ রমজানে পৃথিবীতে আসে আমার চক্ষুশীতলকারী সন্তান মিফতাহুল ইসলাম আবির। নানার বাসার পাশের হাসপাতালেই তার জন্ম।তাই খুব ছোট শিশুকে ঈদে নানার বাসায়ই ঈদ আনন্দে রাখতে হবে,তার নানা নানী খালামনিদের আব্দার। এ কথা শোনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। আমার প্রথম পিতা হওয়ার সন্তানকে ছাড়া প্রথম ঈদ করবো!
আমার জীবনে গত ঈদুল ফিতরই গেছে সবচেয়ে আনন্দহীন। কেমন যেন শূন্যতা অনুভব হচ্ছিল। আমার মা সেই বিষয়টি টের পেয়েছিল। তিনি বললেন- বাবা! এবার বুঝো সন্তান ছাড়া বাবা মায়ের দিন কেমন কাটে?
আমার মায়ের কারণে বাধ্য হয়েই ঈদের দুদিন পর বাবা গেলেন চট্টগ্রামে তার নাতিকে আনতে।
আমার এই শিশু আবির আসার পর আমার আনন্দে যে এত বেড়ে যাবে তা আমিও উপলব্ধি করতে পারিনি।
আব্বা আম্মাকে দেখতাম ঈদ আসলে সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের পোশাক কিনে দিতেন। কিন্তুু তারা নতুন পোশাক না কিনেও সন্তুষ্ট থাকতেন। ঈদের দিন অবাক হতাম! তারা আমাদের আনন্দে এত আনন্দিত কিভাবে হন?
এবারের ঈদে আবির এক বছর পূর্ণ করে দ্বিতীয় বছরে পা দিল। রমজানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আবিরের জন্য কেনাকাটা করা হলেও আমরা দুজন নিজেদের জন্য নেওয়ার আগ্রহ নেই। ছেলের জন্য আর কি নেওয়া যায়!  সে ভাবনায় বিভোর আমরা।
এদিকে গ্রামের বাড়ি থেকে আবিরের দাদা দাদু ফুফুরা কল দিচ্ছে!  কখন আসবে আবির।
প্রতি ঈদে আব্বা আম্মা জিজ্ঞেস করতেন- কবে বাড়ি আসবি? এবারের ঈদে তারা আমাকে নয় আবিরের কথা জিজ্ঞেস করে। কখন আসবে আবির?
অন্যদিকে আবিরের খালামনিরা ঈদের দিনের জন্য অপেক্ষা না করে ঈদের পরের দিনের অপেক্ষা করছে।মানে ঈদের পরের দিনই তাদের ঈদ। কারণ আবির নানু বাড়ি যাবে।
সময় আর নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। মহান আল্লাহর একি! অপরুপ মহিমা ভালবাসাও সময়ের সাথে সাথে সন্তান থেকে নাতির দিকে যায়।
পৃথিবীর এমন মায়ার কারণে হয়ত মানুষ শত কষ্টের মাঝেও আনন্দে বাঁচার স্বপ্ন দেখে।
লেখক:সংবাদকর্মী।