নগরীতে বাঁশের ব্যাংক ও গরুর কাঁইরের জাদুঘর
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
স্কুল শিক্ষক নাজমুল আবেদীন। গ্রামীণ ঐতিহ্য সংরক্ষণে পথে-ঘাটে ঘুরছেন তিন দশক ধরে। শিক্ষকতার অবসরে মাঠে ঘুরে বেড়ান। কুমিল্লা নগরীতে বাঁশের ব্যাংক আর গরুর কাঁইরসহ(মুখবন্ধনী) হারানো গ্রামীণ ঐতিহ্য নিয়ে তিনি কুমিল্লা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। পাশের চাঁদপুর জেলায় হারাতে বসা ঐতিহ্য সংগ্রহ করছেন একটি জাদুঘর স্থাপন করতে। নাজমুল আবেদীন মনে করেন,দেশের প্রতিটি জেলায় ঐতিহ্য জাদুঘর থাকা প্রয়োজন। তিনি পর্যটন জেলা কক্সবাজারেও একটি জাদুঘর স্থাপন করতে চান।
জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়,এখানে রয়েছে তৈজসপত্র, পুরনো ২৫০টি মডেলের তালা, লাউয়ের ডুগডুগি, পাললিক শিলা, হুক্কা, ঘোড়ার চামড়ার আসন, নান চাকু, পুরোনো ক্যামেরা,বাঁশের ব্যাংক ও খড়ম। সংগ্রহ করেন তালের নৌকা, ঢেঁকি, খড়ম, মাছ ধরার চাঁই, কলের গানের যন্ত্রপাতি, ঢেঁকি, সুপারি কাটার চাকু, লাঙ্গল ও জোয়ালসহ নানা জিনিস। এছাড়াও পুরাতন রেডিও সেট, টেলিফোন সেট, গরুর মুখের কাইর, হরিণের মাথা, পুরনো দিনের ক্যামেরা, শ্রমিকদের কাজের লোহার সরঞ্জাম, পিতলের ডেগসহ হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী সরঞ্জাম। অভিভাবকের সাথে এসে শিশুরা জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
জাদুঘরে সন্তান নিয়ে আসা আলোকচিত্রী ইলিয়াস হোসাইন বলেন,জাদুরঘরটিতে দারুণ সব সংগ্রহ। বিশেষ করে তাল গাছ দিয়ে তৈরি নৌকা, ঢেঁকি,বাঁশের ব্যাংক ও কুপি বাতি স্মৃতিতাড়িত করে। এখানে গেলে বড়রা শেকড়ের ঘ্রাণ পাবে ছোটরা জানতে পারবে তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য।
জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা স্কুল শিক্ষক নাজমুল আবেদীন জানান, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে প্রাচীন জিনিসপত্র জমাতে থাকি। এগুলো সংগ্রহ করতে বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছি। গত ৩০ বছরের পরিশ্রমে এ জাদুঘর গড়ে তুলেছি। এখানে ৩০০ প্রকারের দুই হাজারের বেশি দুর্লভ সরঞ্জাম এখানে রয়েছে। চাঁদপুর জেলা সদরে একটি জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা করেছি। স্থানীয় প্রায় হারাতে বসা ঐতিহ্য নিয়ে কক্সবাজারেও একটি জাদুঘর স্থাপন করার আগ্রহ রয়েছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.সফিকুল ইসলাম বলেন, জাদুরঘরটিতে কৃষি যন্ত্রপাতি, ঢেঁকি, হারিকেনসহ বিভিন্ন গ্রামীণ ঐতিহ্য দেখেছি। পরিণত বয়সের মানুষ এখানে তার কৈশোর তারুণ্যে ফিরে সুখ আস্বাদন করতে পারবে।
চট্ট্রগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের উপ-পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন,জাদুঘর দেশের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে। সেনিরিখে দেশের ৬৪ জেলায় জাদুঘর স্থাপন প্রয়োজন। শিক্ষা সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ কুমিল্লা জেলায় প্রতœ পর্যটনসহ অন্তত: আরো ৪টি জাদুঘর স্থাপন করা প্রয়োজন।