মামলা করতে গিয়ে প্রতিবন্ধী কারাগারে! 

‘আমার দুইটা হাত দেখেন, এই হাত দিয়া আমি লাঠি দিয়া কাউরে মারতাম পারাম?’

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।

আইনি প্রতিকার চাইতে গিয়ে জন্য থানায় গেলে মামলায় ফাঁসিয়ে প্রতিবন্ধীসহ ৬ ভূমিহীন এখন কারাগারে! থানার ওসি মামলা সাজিয়েই তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন এমন ভাষ্য মামলার বাদীর। একটি সরকারি পুকুরে দখলের বিরোধকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় ঘটেছে এই ঘটনা। সম্প্রতি ওই ছয়জন আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পাবার পরই বিষয়টি জানাজানি হয়।
জানা গেছে, জেলার নবীনগর উপজেলার লাউরফতেহ্পুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর আদর্শগ্রামটি গুচ্ছগ্রাম নামেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে চলমান আশ্রয়ন প্রকল্পের মতো বিগত ৮০’র দশকে একটি প্রকল্পে এটি গুচ্ছগ্রাম হয়। গ্রামে ৮ একরের একটি দিঘি বিদ্যমান। এখানে ভূূূমি বরাদ্দপ্রাপ্ত ৪০ পরিবারের ‘আদর্শগ্রাম ভূমিহীন সমবায় সমিতি’র নামে এই ৮ এককের পুকুর ও তার পাড় বন্দোবস্ত দিয়ে আসছে সরকার। তবে গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে সংগঠনের সভাপতি নামমাত্র মূল্যে পুকুরটি বিভিন্ন সময় বাইরের লোকজনের কাছে লিজ দিয়ে আসছিলো। সম্প্রতি গ্রামের কয়েকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে নতুন করে লিজ না দিয়ে নিজেরাই মাছ চাষের সিদ্ধান্ত নেয়াতেই তারা রোষানলে পড়েন। পার্শ্ববর্তী আহাম্মদপুর গ্রামের মাহাবুব মেম্বার ওই সংগঠনের সভাপতির সাথে গোপন আঁতাত করে জোরপূর্বক দিঘিতে মাছ চাষের মানসে গত ২৭ জুন বৃহস্পতিবার পানি ছাড়তে পুকুরের পাড় কাটতে শুরু করেন। এসময় গ্রামের পুরুষেরা বাইরে কাজে থাকায় মহিলালরা মাহবুব মেম্বারকে তাকে বাধা দিলে তিনি মোছেনা বেগম নামের একজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করাসহ ফোনে নিজের লোকজনকে জড়ো করে গ্রামে হামলা চালায়। পুরুষশূণ্য গ্রামে হৈচৈ শুনে পার্শ্ববর্তী টানচরের কতেক যুবক এগিয়ে এলে শান্ত নামের একজনের উপর চড়াও হয় মেম্বারের লোকজন। শান্তকে মারধরের খবরে তার গ্রামে উত্তেজনা ছড়ায়। গুচ্ছগ্রাম থেকে আহমদপুর যাওয়ার সময় মাহবুব মেম্বােররের লোকজনের সংঘর্ষ বাধলে বেশ ক’জন আহত হয়। গুচ্ছগ্রামের অসহায় মানুষগুলো এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির প্রভাবে ওসি উল্টো তাদেরই ছয়জনকে ধরে জেলহাজতে পাঠিয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। মামলার সময়কাল, তদন্ত না করেই মামলা এফআইআর করা, বাদীর বক্তব্যেও বিষয়গুলো সুস্পষ্ট।

প্রতিবন্ধী মো. কামাল মিয়া বলেন, ‘আমার দুইটা হাত দেখেন, এই হাত দিয়া আমি লাঠি দিয়া কাউরে মারতাম পারাম? আমারারে ওসি ভিতরে বসাইল। পরে কইল আমরারে আসামি করছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’ বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘বিচার চাওয়ার জন্য থানায় গেছি, আমরারে থানায় ঢুকাই দিছে। আমরা কোন মারামারি-ঝগড়া করিনাই। দুই কিলোমিটার দূর থেইক্কা আইসা মাহবুব মেম্বার আমরার গ্রামের মহিলারে মারছে, আমরা বিচার চাইতাম গেলাম, উল্টা থানা থেইক্কা আমরারে এরেস্ট করাইছে।’ মামলার বাদী মাহবুব মেম্বার বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি গুচ্ছগ্রামের লোকজনকে আসামি করতে চাইনি। ওসি সাহেব নাম ঢুকিয়ে এফআইআর করছে।’

নবীনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ মাহাবুব আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বাদী কেন এমন বলছে আমি জানি না। আমরা তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার স্বাক্ষর থাকা এজাহারমূলেই মামলা নিয়েছি। মামলা হবার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি ধরেছে। ওই ছয়জন মামলা করতে থানায় আসেনি, ওরা কোর্টে মামলা করেছে শুনেছি।’